শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ০১:৪২ অপরাহ্ন

বেধড়ক মারধরের পর সাংবাদিকের প্যান্ট খুলে ধর্মীয় পরিচয় দিতে বলল হিন্দুসেনারা

বেধড়ক মারধরের পর সাংবাদিকের প্যান্ট খুলে ধর্মীয় পরিচয় দিতে বলল হিন্দুসেনারা

স্বদেশ ডেস্ক:

সিএএ-বিরোধী আন্দোলন কেন্দ্র করে দিল্লিতে সহিংসতা থেকে বাদ যায়নি সংবাদমাধ্যম। মঙ্গলবার গুলিবিদ্ধ হলেন এক সাংবাদিক। বেধড়ক মারধর করা হল আরো দুই সংবাদকর্মীকে। সোমবার উত্তপ্ত এলাকায় খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে হুমকির মুখে পড়ে কোনো রকমে রেহাই পেলেন আর এক বাঙালি সাংবাদিক।

এদিন উত্তর-পূর্ব দিল্লির মৌজপুরে হামলাকারীদের গুলিতে জখম হয়েছেন জে কে ২৪X৭ নিউজ চ্যানেলের সাংবাদিক আকাশ। তাকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে স্থানীয় হাসপাতালে। এছাড়া জ্বলন্ত মসজিদের ছবি তুলতে গেলে প্রচণ্ড মারধর করা হয় এনডিটিভি চ্যানেলের দুই সাংবাদিক অরবিন্দ গুণশেখর ও সৌরভ শুক্লাকে। গতকাল ওই এলাকাতেই ছবি তুলতে গিয়ে আক্রান্ত হন টাইমস অফ ইন্ডিয়ার চিত্র সাংবাদিক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়।

মঙ্গলবার টাইমস অফ ইন্ডিয়া সংবাদপত্রে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে চিত্র সাংবাদিক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় তার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়েছেন, যা পড়লে শিউরে উঠতে হয়। তিনি জানিয়েছেন, উত্তেজনাপূর্ণ জাফরাবাদ অঞ্চলে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সহিংসতার কবলে পড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি ও তার সহকর্মী সাংবাদিক।

অনিন্দ্য লিখেছেন, সোমবার দুপুর ১২.১৫ নাগাদ তিনি মৌজপুর মেট্রো রেল স্টেশনে পৌঁছতেই এক হিন্দু সংগঠনের সদস্য তার কপালে তিলক একে দিতে তৎপর হন। আপত্তি করলে তাকে শুনতে হয়, ‘ভাই, আপনিও তো হিন্দু। তা হলে অসুবিধা কীসের?’

এর ১৫ মিনিট পরেই এলাকায় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে পাথর ছোড়াছুড়ি শুরু হয় এবং ‘মোদী’ ‘মোদী’ স্লোগানের মাঝে কালো ধোঁয়ায় আকাশ ঢেকে যায়। জানা যায়, স্থানীয় একটি বাড়িতে আগুন লেগেছে। সে দিকে এগোতে গেলে একটি শিব মন্দিরের কাছে অনিন্দ্যকে বাধা দেন একদল। অগ্নিকাণ্ডের ছবি তুলতে যাচ্ছেন জানতে পেরে তারা সাংবাদিককে বলেন, ‘ভাই, আপনিও তো হিন্দু। তা হলে ওখানে কেন যাচ্ছেন? আজ হিন্দুরা জেগে উঠেছে।’

বাধা পেয়ে ঘুরপথে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ছবি তুলতে গেলে তাকে ঘিরে ফেলে হাতে লাঠি ও লোহার রডধারী একদল। তারা সাংবাদিকের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে বাধা দেন তারসহ সাংবাদিক সাক্ষী চাঁদ। রুখে দাঁড়াতেই সেখান থেকে চম্পট দেয় সশস্ত্র দলটি।

তবে একটু পরেই অনিন্দ্য বুঝতে পারেন, তার পিছু নেওয়া হয়েছে। অনুসরণকারীদের মধ্যে এক তরুণ এগিয়ে এসে তাকে সতর্ক করে, ‘ভাই, তুই একটু বেশি চালাকি করছিস। তুই হিন্দু, না মুসলিম?’ তারা সাংবাদিকের প্যান্ট খুলে ধর্মীয় চিহ্ন খোঁজার চেষ্টা করলে হাতজোড় করে অনেক অনুনয়ের পরে কিছু হুমকি দেওয়ার পরে রেহাই দেওয়া হয় চিত্র সাংবাদিককে।

নিজের দফতরের অপেক্ষমান গাড়ি খুঁজে না পেয়ে একটি অটো রিকশা ধরে তথ্যকেন্দ্রে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন অনিন্দ্য। কিন্তু অটোচালক মুসলিম হওয়ায় তাদের মাঝপথে থামিয়ে ঘেরাও করে চার জন সশস্ত্র যুবক। কলার ধরে দুজনকে অটো থেকে নামিয়ে মারধরের উপক্রম করে দুষ্কৃতীরা। নিজের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এবং অটোচালক যে নির্দোষ, সে কথা জানিয়ে অনেক অনুনয়ের পরে ছাড়া পান অনিন্দ্য ও তার সঙ্গী চালক।

শহরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ ভিভিআইপি সমাগম সত্ত্বেও দিল্লিতে সহিংসতা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, তার বিবরণ পাওয়া গেছে সাংবাদিকের কলমে। সংবাদমাধ্যমের কর্মীর প্রতিই যদি এ হেন আচরণ হয়, তা হলে রাজধানীর অশান্ত পরিস্থিতিতে সাধারণের নিরাপত্তা যে বিপন্নতার কোন ধাপে এসে দাঁড়িয়েছে, তা এখন স্পষ্ট। হিন্দস্থান টাইমস।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877