বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১১:০৯ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন দখল করে হিন্দ হল নামকরণ বিক্ষোভকারীদের মালদ্বীপ ভারত থেকে চীনমুখী হওয়ার গতি বাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে নাটোরের লালপুরে আওয়ামী লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা যেভাবে ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন শুরু হয়েছিল হিন্দ : নিহত ফিলিস্তিনি শিশু এখন যুক্তরাষ্ট্রে আন্দোলনের প্রতীক প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বছর বর্ণাঢ্যভাবে উদযাপন করবে আওয়ামী লীগ আজ আধাবেলা বাস চলাচল বন্ধ থাকবে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পুলিশ, ব্যাপক গ্রেফতার বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়াল সরকার মার্কিন সংবাদমাধ্যমে শিখ নেতা হত্যাচেষ্টায় জড়িত ‘র’ কর্মকর্তার নাম প্রকাশ
‘মৃত’ শিশুটির ৩৩ ঘণ্টা পর মৃত্যু : শেষ কয়েক ঘণ্টায় যা ঘটেছিল

‘মৃত’ শিশুটির ৩৩ ঘণ্টা পর মৃত্যু : শেষ কয়েক ঘণ্টায় যা ঘটেছিল

স্বদেশ ডেস্ক:

টানা ৩৩ ঘন্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে মারা গেছে শিশু জান্নাতুল। ২৪ ঘণ্টা ধরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের চিকিৎসকদের প্রাণপণ চেষ্টার পরও মৃত্যুর কাছে হার মানতে হলো শিশুটিকে। চিকিৎসকের দাবি, নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে জন্ম নেয়া, অপরিপক্বতা, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়া ও উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী রেফার্ড করা সত্ত্বেও অর্থাভাবে রাজশাহী মেডিকেলে না নিয়ে বাড়িতে রাখার কারণেই শিশু জান্নাতুল মারা গেছে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা শহরের হাসপাতাল সড়কের ডা. জিন্নাতুল আরার বাসভবনের চেম্বার-সংলগ্ন একটি কক্ষে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে জন্ম নেই ওই শিশুটি। নির্ধারিত সময়ের বেশ আগেই জন্ম নেয়ায় শিশুটির ওজন ছিল ৬ শ’ গ্রাম এবং জন্ম নেয়ার সময় তার শ্বাস-প্রশ্বাস পাওয়া যাচ্ছিল না। এমতাবস্থায় রোগীর স্বজনদের অনুমান শিশুটি মৃত। কিছুক্ষণ পর শিশু নড়ে উঠলে তাকে অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ইনকিউবেটরের মধ্যে রেখে চিকিৎসা দেয়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক পরামর্শ দেয়, রাজশাহী মেডিকেলে নেয়ার জন্য। অর্থাভাবে রাজশাহী মেডিকেলে না নেয়ায় শিশুটি মারা যায়।

শিশু জান্নাতুলের মা জিনিয়া খাতুন জানান, গত রোববার বিকেলে প্রসব বেদনা উঠলে পরিবারের সদস্যরা তাকে ডা. জিন্নাতুল আরার কাছে নিয়ে যায়। ক্লিনিকে সোমবার ভোরে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে তার কন্যাসন্তান ভূমিষ্ঠ হয়।
প্রসূতি জিনিয়ার মা কুলসুম বেগম বলেন, ‘মৃত কন্যাসন্তান ভুমিষ্ঠ হওয়ার খবরে আমরা ভেঙে পড়ি। তখনই আমার মেয়ে তাঁর কন্যাকে শেষ বারের মতো দেখতে চায়। এরপর নিস্তেজ শিশুকে কোলে নিতেই নড়ে ওঠে শিশুটি। এ সময় আমাদের স্বজনদের চিৎকারে ডা. জিন্নাতুল আরা শিশুকে অক্সিজেন দিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন এবং পরবর্তী চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন।’

শিশুটির দাদি শাহারন বেগম বলেন, ‘ও সাত মাসে জন্ম নিয়েছে। তাই আমি ওর নাম রেখেছিলাম জান্নাতুল।’ শিশুটির বাবা আব্দুল হালিম জানান, ‘সোমবার সকালে আমরা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শিশু জান্নাতকে ভর্তি করি। পরে ডাক্তার শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজে নিতে পরামর্শ দেয়। শিশুটি বেঁচে থাকার ৯০ ভাগ সম্ভাবনা ছিল না, আর টাকা পয়সারও বিষয় ছিল। তাই তাকে বাড়িতে নিয়ে যায়।

শিশুটির চাচা বরকত উল্লাহ বলেন, ‘গতকালই উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী নেয়ার কথা বলেছিলাম। অর্থনৈতিক কারণে তারা চেয়েছিলেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালেই চিকিৎসা হোক। এরপরও টাকা জোগাড় করার প্রস্তুতি নিতে থাকি আমরা। কিন্তু এরই একপর্যায়ে দুপুর দেড়টার দিকে মায়ের কোলেই নিথর হয়ে পড়ে শিশু জান্নাতুল।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুর রহমান মালিক খোকন জানান, ‘নির্ধারিত সময়ের আগেই শিশুটি জন্ম নিয়েছে। তা ছাড়া নিউমোনিয়ায়ও আক্রান্ত ছিল শিশুটি। আমাদের পক্ষ থেকে তাকে ইনকিউবেটরের মধ্যে রেখে প্রাণপণ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু কিছুতেই শিশুটির উন্নতি না হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেলে পাঠানোর পরামর্শ দিই। মঙ্গলবার সকালে এসে আবার শিশুটির অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলি। দুপুরে শিশুটির পরিবারের সদস্যরা হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নেন। পরে শুনলাম বাচ্চাটির অভিভাবকেরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজে না নিয়ে তাকে বাড়িতে নিয়ে গেছে এবং সেখানেই দুপুরে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। তবে এটি ঠিক যে শিশুটির অবস্থা খুবই জটিল ছিলো। এ ধরণের শিশুর চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় উপকরণ চুয়াডাঙ্গায় নেই বলেই আমরা রাজশাহী নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম।’

চিকিৎসকের বক্তব্য
এ ব্যাপারে ডা. জিন্নাতুল আরা বলেন, গত রোববার বিকেলে জিনিয়া খাতুন নামে মাত্র ২৫ সপ্তাহের প্রেগন্যান্সি নিয়ে এক প্রসূতি আমার বাসভবনের চেম্বারে আসেন। তবে অনেক ব্যথা আর ফ্লুয়িড বের হচ্ছিল। প্রসূতি জিনিয়া খাতুনের বয়সও খুব বেশি না এবং শারীরিকভাবে বাচ্চা ধারণের জন্য উপযুক্ত ছিল না। এ অবস্থায় আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। ২৫ সপ্তাহের প্রেগন্যান্সি এবং প্রসূতির শারীরিক অবস্থার কথা ভেবে আমরা সিজার করতে রাজি হইনি। পরে নরমাল ডেলিভারি হয় সোমবার ভোর চারটার দিকে। শিশুটির যখন জন্ম হয়, তখন তার ওজন ছিল মাত্র ৬ শ’ গ্রাম এবং তখন তার শ্বাস-প্রশ্বাস পাওয়া যাচ্ছিল না। নির্ধারিত সময়ের বেশ আগেই, সাত মাসেরও কম সময়ে জন্ম নেওয়ার কারণেই স্বভাবিকভাবেই তার ওজন কম হওয়ার কথা। অপরিপক্বতা ও শ্বাস-প্রশ্বাস না পাওয়ার কারণে দেখে মনে হচ্ছিল, বাচ্চাটি জীবিত নেই। এটি দেখেই তার স্বজনরা চিৎকার করে কান্নাকাটি শুরু করেন। তবে আমরা আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখি ও প্রায় আধা ঘণ্টা পর বাচ্চাটির সাড়া পাই। এরপর প্রায় চার ঘণ্টা অক্সিজেন দেয়াসহ মায়ের সংস্পর্শে রেখে প্রাথমিক সব ব্যবস্থা নেয়া হয়। বেশ কিছুক্ষণ পর তার সাড়া মেলে। এরপর দ্রুত তাকে শিশু বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে দেওয়া হয়।

ডা. জিন্নাতুল আরা আরো বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রসূতির বাচ্চা ধারণের জন্য শারীরিক সক্ষমতা না থাকা, অপুষ্টিজনীত সমস্যাসহ বেশকিছু কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই অপরিপক্ব বাচ্চা জন্ম নিতে পারে। সেক্ষেত্রে, বাচ্চাটির বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। তা ছাড়া, বাঁচলেও নানা প্রকার সমস্যা থাকতেই পারে। আমি ৪০ বছর চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। সুদীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই সিজার করতে রাজি হইনি। সিজার করলে বাচ্চাটির ক্ষতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রসূতিরও বড় ধরনের সমস্যা হতে পারত।

তিনি আরো বলেন, কিছু কিছু পত্রিকা উপশম নার্সিং হোমের কথা লিখেছেন। তবে নরমাল ডেলিভারি আমার বাসভবনের চেম্বারের একটি কক্ষে হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে ২৫ সপ্তাহে জন্ম নেয়া ৬ শ’ গ্রামের অপরিপক্ব বাচ্চার শ্বাস-প্রশ্বাস না পাওয়ার পরও অনেক চেষ্টার পর অক্সিজেন দিয়ে বাচ্চাটিকে বাচাঁনো হয়। শিশু কনসালটেন্টের কাছেও পাঠানো হয়। উন্নত চিকিৎসার পরামর্শও দিয়েছিলাম। মঙ্গলবার শুনলাম হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়িতে যাওয়ার পর বাচ্চাটি মারা গেছে। আমাদের পক্ষে আমরা সবোর্চ্চ চেষ্টা করে মোটামুটি স্বাভাবিক করেই বাচ্চাটিকে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলাম। উন্নত চিকিৎসা দিলে বাচ্চাটি সুস্থ হতে পারত।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877