স্বদেশ ডেস্ক:
চলতি অর্থবছরে বিদ্যুতের হুইলিং চার্জের ওপর ৫ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে। এতে সরকারের কোষাগারে জমা দিতে হবে ১০৫ কোটি টাকা। একই সাথে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ ব্যবহার না হলেও সঞ্চালন লাইনও বেড়ে গেছে। এতে বেড়েছে সামগ্রিক ব্যয়।
সবমিলে দেশের একমাত্র বিদ্যুৎ সঞ্চালনকারী প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) এক বছরে প্রাক্কলিত ব্যয় বেড়ে যাবে প্রায় সাড়ে ৭১ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যা প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। এ ব্যয় সমন্বয় করতে জনগণের ঘাড়ে ৫০ দশমিক ৭৭ শতাংশ ব্যয় চাপাতে চেয়েছে সংস্থাটি।
এরই মধ্যে তাদের প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি শেষ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। যেকোনো সময় বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা আসতে পারে।
পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমত উল্লাহ বলেন, বিদ্যুৎ ব্যবহারের কোনো ক্ষেত্র বের না করে বিনা টেন্ডারে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত ২২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু গড়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার আট হাজার মেগাওয়াটের বেশি না।
সাশ্রয়ী ও গুণগত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন না করে অপরিকল্পিত উচ্চ মূল্যের তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করায় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। কিন্তু এ বিদ্যুৎ ব্যবহার না হলেও সঞ্চালন লাইন ঠিকই স্থাপন করতে হচ্ছে। এতে বেড়ে গেছে পিজিসিবির সঞ্চালন ব্যয়। এর ওপর করের বোঝা চাপানো হয়েছে।
ফলে পিজিসিবি লোকসান হবে না, কিছুটা মুনাফা কম হবে। তাই সঞ্চালন ব্যয়সহ বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। তিনি মনে করেন, অপচয় ও চুরি কমাতে পারলে বিদ্যুৎ খাতের লোকসানের পরিবর্তে মুনাফা বেড়ে যাবে।
পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া এ বিষয়ে গতকাল শনিবার নয়া দিগন্তকে জানান, পিজিসিবির সঞ্চালন লাইনে যতটুকু বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়, ঠিক ততটুকুরই হুইলিং চার্জ পাওয়া যায়। অথচ নতুন কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হলে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে দেয়ার জন্য ঠিকই পিজিসিবির সঞ্চালন লাইন স্থাপন করতে হয়। এতে বেড়ে যায় ব্যয়।
এর ওপর প্রতি বছর বেতনভাতা ব্যয় বেড়ে যায় গড়ে ৫ শতাংশ। সঞ্চালন লাইনের সাথে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বাড়ে। হুইলিং চার্জের ওপর ৫ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে। এতে তাদের ১০০ টাকা আয় হলে প্রকৃতপক্ষে তারা পাবেন ৯৫ টাকা। এর বাইরে দেশী-বিদেশী ঋণের সুদ তো রয়েছেই। এ কারণে সঞ্চালন ব্যয় বেড়ে গেছে। তাই সঞ্চালন মূল্যহার বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
মূল্য না বাড়ালে তাদের আয় কমে যাবে। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে গুণগত বিদ্যুৎ সঞ্চালনে। এতে সরকার ও দাতাসংস্থার ঋণ ও সুদের বিশাল অফঙ্কর টাকা নিয়মিত পরিশোধ সম্ভব হবে না। কমে যাবে প্রতিষ্ঠানটির ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা।
উৎপাদন ক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎ ব্যবহারের বড় প্রমাণ দেখা যায়, পিজিসিবির ওয়েবসাইটের তথ্যে। এতে দেখা যায়, গতকাল সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের পূর্বাভাস দেয়া হয় ১৪ হাজার ৭০ মেগাওয়াট। কিন্তু সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ ব্যবহারের পূর্বাভাস দেয়া হয় সাড়ে আটহাজার মেগাওয়াট।
আর দিনে বিদ্যুৎ ব্যবহারের পূর্বাভাস দেয়া হয় ছয় হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। আগের দিন অর্থাৎ শুক্রবারে প্রকৃত সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় সন্ধ্যায় ৭ হাজার ৫৯৭ মেগাওয়াট। আর অফ-পিক আওয়ারে বিদ্যুৎ উৎপাদন দেখানো হয় পাঁচ হাজার ৮২৭ মেগাওয়াট। অর্থাৎ উৎপাদন ক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎ ব্যবহার না হলেও সঞ্চালন লাইন ঠিক উৎপাদন ক্ষমতার সাথে বাড়ানো হয়েছে।
পিজিসিবির এক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, সংস্থাটির শুধু দীর্ঘমেয়াদি ঋণ রয়েছে ১৫ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। গত বছর প্রতিষ্ঠানটির করপোরেট ট্যাক্স পরিশোধ করতে হয়েছে ৩৯৫ কোটি টাকা। হুইলিং চার্জ বৃদ্ধিসহ আগামী বছরে এ করপোরেট ট্যাক্স বেড়ে হবে তিন হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা।
মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় প্রায় ২০০ কোটি টাকা বেড়ে ৬১৬ কোটি টাকা থেকে ৮২২ কোটি টাকায় উন্নীত হবে। সবমিলে আগামী বছরে নিট সঞ্চালন ব্যয় প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা বেড়ে ১৭ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা থেকে ৩০ হাজার ১৫৮ কোটি টাকায় দাঁড়াবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে।