ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির শরীরে কেরোসিন ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসীন অবস্থায় সে মারা যায়। আজ ১০ জুন সোমবার তার মৃত্যুর দুই মাস হলো। এরই মধ্যে আলোচিত এ হত্যাকা-ের মামলায় এজাহারভুক্ত ৮ জনসহ ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছেন পিবিআইয়ের তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. শাহ আলম। ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইন পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করেছেন।
মামলার চার্জশিট গ্রহণ হবে কিনা, আজ ১০ জুন এর শুনানি হওয়ার কথা। বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু জানিয়েছেন, বাদির আপত্তি না থাকলে মামলার কার্যক্রম চলবে। নুসরাত হত্যাকা-ের মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তারে এবং আদালতে চার্জশিট দাখিলে দ্রুততার জন্য ইতোমধ্যেই প্রশংসিত হয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পুলিশ মামলাটি গত ১০ এপ্রিল পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করে।
এর আগে ৯ এপ্রিল প্রস্তুত করা প্রতিবেদনে দেখা যায়Ñ সাইফুর রহমান যোবায়ের, শাহাদাত হোসেন শামীম, নূর উদ্দিন, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, মো. আরিফুল ইসলাম, মো. নূর হোসেন, মো. আলাউদ্দিন, কেফায়েত উল্যাহ, মো. আফসার উদ্দিন, মো. সাইদুল ইসলাম প্রমুখ আসামি এ হত্যাকা-ে প্রকাশ্যে-নেপথ্যে জড়িত। এর মধ্যে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মামলাটি লিপিবদ্ধ হওয়ার পরবর্তী ১৭ ঘণ্টায় সোনাগাজী থানা পুলিশ ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন হত্যাকা-ে সম্পৃক্তদের নাম উদ্ঘাটন করেন। পরবর্তী সময়ে মামলাটি পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নুসরাত হত্যাকা-ে সম্পৃক্ত সব আসামিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে পিবিআই গ্রেপ্তার করে এবং দ্রুত চাঞ্চল্যকার এ মামলার চার্জশিট দেয়। এতে সাধারণ মানুষ তো বটেই, বাদীপক্ষ পিবিআইয়ের প্রতি তাদের আস্থার বিষয়টি ব্যক্ত করে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু জানিয়েছেন, আজ সোমবার ২১ আসামিকে আদালতে তোলা হবে। মামলার বাদী যদি পিবিআইয়ের চার্জশিটে আপত্তি না তোলেন, তা হলে মামলাটি গ্রহণ করা হবে। মামলায় এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২১ জনকে আর পিবিআই চার্জশিট দিয়েছে ১৬ জনের নামে। কাজেই গ্রেপ্তারকৃত ২১ জনের মধ্যে ৫ জন খালাস পেতে পারেন। তারা হলেন- নুর হোসেন হোনা মিয়া, আলাউদ্দিন, কেফায়েত উল্যাহ জনি, সাইদুল ইসলাম ও আরিফুল ইসলাম। যে ১৬ জনের নাম চার্জশিটে রয়েছে, তারা হলেন- প্রধান অভিযুক্ত অধ্যক্ষ এসএম সিরাজউদ্দৌলা, আফসার উদ্দিন, যোবায়ের আহমেদ, কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, জাবেদ হোসেন, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, হাফেজ আবদুল কাদের, উম্মে সুলতানা পপি, মো. শামীম, কামরুন নাহার মনি, আবদুর রহীম শরিফ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রহুল আমিন, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার উদ্দিন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল। পিবিআইয়ের ৮০৮ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে এজাহারভুক্ত ৮ জন, এজাহার-বহির্ভূত তদন্তে প্রাপ্ত আসামি ৮ জন। ১০ এপ্রিল থেকে শুরু করে মোট ৫০ দিনে ৩৩ কার্যদিবসের মধ্যে মামলাটির তদন্তকাজ শেষ করে চার্জশিট দিয়েছে পিবিআই। মামলায় মোট ৯২ সাক্ষী রয়েছেন। এর মধ্যে কার্যবিধির ১৬১ ধারায় ৬৯ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। অন্যদের মধ্যে বিশেষজ্ঞ, বাদী, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিজার লিস্টের সাক্ষীরা রয়েছেন।
মামলায় ৭ সাক্ষী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। ১২ আসামি নিজেদের দোষ স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এসএম সিরাজউদ্দৌলাকে আটক করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদ্রাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা ৫ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ১০ এপ্রিল মারা যান নুসরাত জাহান রাফি। আজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বাড়ানোর আহ্বান নুসরাত হত্যা মামলায় গত ৩০ মে চার্জশিটভুক্ত ১৬ জনসহ ২১ আসামিকে আদালতে হাজির করা হলে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েই আসামিরা অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন মামলার বাদী নুসরাতের বড় ভাই মাহমদুল হাসান নোমানকে এবং তার আইনজীবী রফিকুল ইসলাম খোকনকে। এ সময় আসামিরা নানা রকম হুমকিও দেন। সেদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসংখ্যা কম থাকায় আসামিদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এ কারণে বাদী মাহমদুল হাসান নোমান সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, আজ সোমবার যেন আদালতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসংখ্যা বাড়ানো হয়; যেন আসামিরা ভয়াল হুমকি ও বিশ্রি গালমন্দ করতে না পারে।