ডা. জেসমিন আক্তার লীনা: প্রতিবারের মতো সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মাধ্যমে ডায়াবেটিস দিবস পালিত হয়। মূল লক্ষ্য ডায়াবেটিস সম্পর্কে রোগীদের সচেতন করা। একজন চর্মরোগ চিকিৎসক হিসেবে ডায়াবেটিস থেকে চর্মরোগের নানা সমস্যা নিয়ে কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করছি। সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের ডায়াবেটিস আছে এবং যারা এই রোগের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছেন তাদের মধ্যে ত্বকের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। প্রায় ৮০ ভাগ ডায়াবেটিক রোগীর নানা ধরনের চর্মরোগ দেখা দেয়।
ডায়বেটিস এবং ত্বকের ওপর এর প্রভাব নিয়ে স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে জানানো হয়, আমাদের দেহের সবচেয়ে বড় অঙ্গ হলো ত্বক, যা সমগ্র দেহকে আবরণ দেয়। বিশাল এই অঙ্গের ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন রূপে সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। এগুলো হচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন, ব্যাকটোরিয়াস, ভাইরাল বা ফাংগাল ইনফেকশন। ডায়াবেটিস রোগীদের চামড়া শুষ্ক হয়ে যাওয়ার কারণেও বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ দেখা দিতে পারে এবং প্রচন্ড চুলকানি হয়। একানথিসিস নিগ্রিকেনস যাতে ঘাড়ে, গলায় এবং শরীরের ভাঁজে চামড়া পুরো ও কালো হয়ে যায় এবং এই রোগটি ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়। এ ছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের ত্বকে অ্যালার্জি হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। অনেক ক্ষেত্রে ডায়াবেটিক রোগীদের সাধারণত শরীরের নিম্নাংশে বা পায়ে বড় বড় ফোসকা পড়ে।
ডায়াবেটিক ডার্মাপ্যাথি: এতে রোগীদের পায়ে কালো বা বাদামি বর্ণের দাগ দেখা দেয়। ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে চর্বি ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণে শরীরে এক ধরনের হলদে দানাদার রোগ দেখা দিতে পারে।
কেন এই ত্বকের সমস্যা: সাধারণত গরমকালে ডায়াবেটিসজনিত চর্মরোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। গরম এবং আর্দ্রতার কারণে সবারই কমবেশি চর্মরোগ হতে পারে। তবে যারা বহুমূত্র রোগগ্রস্ত তাদের ডায়াবেটিসও একটা কারণ। অন্যদিকে ডায়াবেটিসের কারণে ক্ষতও সহজে শুকায় না। তাই সমস্যা জটিল আকার ধারণ করে। এছাড়া যাদের দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস আছে তাদের ত্বক অন্যদের থেকে শুষ্ক হয়ে যায় এবং চুলকানির সমস্যা দেখা যায়।
চিকিৎসা: বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের নিয়মিত ত্বক পরীক্ষা করে দেখতে হবে হবে। প্রতিদিন দেখতে হবে ত্বকে কোনো ঘামাচি, ফোঁড়া, ফুসকুড়ি ধরনের কিছু হয়েছে কি না।
বিশেষ করে ত্বকের যেসব জায়গায় ইনসুলিন দেওয়া হয় সেসব জায়গায় চর্মরোগ থেকে বাঁচতে হলে রক্তের শর্করার মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, ত্বককে পরিষ্কার-পরিছন্ন রাখতে হবে। তাছাড়া ডায়াবেটিক রোগীদের স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করার মতো সাধারণ নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে। ত্বকের শুষ্কতা নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত ভালো ও উন্নতমানের ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। কোথাও কেটে গেলে বা ছিলে গেলে শুরুতেই চিকিৎসা নিতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীদের পায়ের ও নখের যতœ নেওয়া খুবই জরুরি। সর্বোপরি এতেও যদি কাজ না হয় তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।