স্বদেশ ডেস্ক:
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো টার্মিনাল। বিমানবন্দর থেকে উত্তর দিকে একটু হেটে গেলেই এই কার্গো টার্মিনালটি। বুধবার, রাত সোয়া ২টা। অন্ধকার ভেদ করে ওই টার্মিনালের ঠিক মাঝামাঝিতে একটি রুমে আলো ঝলছে। চারিদিকে নিরব-নিস্তব্ধতা। তবে ওই রুমটির সামনে যেন সরব। এটি প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের কার্গো শাখার অফিস। সামনে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স। যার মধ্যে একটি ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। বাইরে আরেকটি অ্যাম্বুলেন্স চোখে পড়লো। প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের (কার্গো) সামনে গিয়ে দেখা গেল, ছোট রুম। কেউ বসে, কেউ দাড়িয়ে। দুইজন কর্মকর্তা-কর্মচারী চেয়ারে বসে লিখছেন, কথা বলছেন। খুবই ব্যস্ত তারা। রুমের বাইরেও বেশ কিছু লোকজন। এর মধ্যে দুইজন নারীকেও দেখা গেল। ভেতরে ঢুকে এই প্রতিবেদক জানতে পারেন, বুধবার মালয়েশিয়া থেকে ৮ জন প্রবাসীর লাশ এসেছে। স্বজনদের কাছে এসব লাশ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। লাশবহন ও দাফন বাবদ প্রতি পরিবারকে ৩৫ হাজার টাকা চেক দিচ্ছেন সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ সহকারী পরিচালক মাইনুদ্দিন।
কথা হয় কয়েকজন স্বজনের সাথে। তাদের একজন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার আব্দুল জব্বার। তার ছোট ভাই নাসির প্রায় ৫ বছর ধরে মালয়েশিয়াতে ছিলেন। কিছুদিন আগে বাড়িতে ঘুরে গেছেন। জব্বার বলেন, ভাল মানুষ। গত রোববার হঠাত শুনি সে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে। ভাইয়ের লাশ নিতে এসেছেন তিনি। তার মতো মালয়েশিয়ায় নিহত হতভাগ্য অন্য ৭ প্রবাসীর স্বজনও এসেছেন প্রিয়জনের লাশ নিতে। কেউ কেউ ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছেনও। এই ৮ প্রবাসীর মধ্যে একজন বিল্ডিংয়ের কাজ করা অবস্থায় নিচে পড়ে মারা গেছেন। বাকীরা হার্টঅ্যাটাকে মারা গেছেন বলে জানান তারা।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে ৪০ হাজারেরও বেশি প্রবাসীর লাশ এসেছে। চলতি নভেম্বর মাসেই এসেছে ১৩০ জন।
জানা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটিও বেশি বাংলাদেশী রয়েছেন। যাদের রেমিট্যান্সে সচল বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা। প্রকিবছর বিপুল সংখ্যক মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশ যাচ্ছেন। তবে উচ্চ অভিবাসনে (খরচ) বিদেশ গিয়ে চাহিদা অনুযায়ী বেতন বা কাজ না পাওয়ায় অনেকে হতাশায় ভোগেন। বিশেষ করে যারা বিদেশ যাচ্ছেন তাদের বড় একটি অংশ জমি জমা বিক্রি বা বন্ধক রেখে কিংবা ঋণ নিয়ে যান। দালালদের খপ্পড়ে পড়ে বেশি বেতনের আশায় বিদেশ গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাস্তবে তা মেলে না। ফলে যে টাকা খরচ করে বিদেশ যান, তা তুলতেই সময় পার হয়ে যায়। একদিকে ঋণশোধ অন্যদিকে সংসারের খরচ, সব মিলে চাপে থাকেন প্রবাসীরা। টেনশনে হৃদরোগে আক্রান্ত হোন। অনেকে আবার আত্মহত্যার পথও বেছে নেন। তাদের অনেকেই মারা যান। এছাড়া কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতা তথা দুর্ঘটনা ও সড়ক দুর্ঘটনার মতো ঘটনা তো আছেই।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের উপ পরিচালক জাহিদ আনোয়ার এই প্রতিবেদককে বলেন, বিদেশ তেকে যেসব লাশ আসে তার সিংহবাগেই মধ্যপ্রাচ্য থেকে। এছাড়া মালয়েশিয়া বা অন্য দেশ থেকেও প্রবাসীদের লাশগুলো আসছে। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে লাশ গ্রহণের সময় বহন ও দাফন বাবদ ৩৫ হাজার টাকার চেক দেয়া হয়। পরে ৩ লাখ টাকা দেয়া হয় নিহতের বৈধ ওয়ারিশকে। এছাড়া তাদের যদি সংশ্লিষ্ট দেশের কোম্পানিতে কোনো পাওনা থাকে তা-ও আদায় করে দেয়া হয়।