রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:২৭ অপরাহ্ন

অযোধ্যা : সর্বত্র চাপা আতঙ্ক

অযোধ্যা : সর্বত্র চাপা আতঙ্ক

স্বদেশ ডেস্ক:

ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ তথা ওই জমির মালিকানা নিয়ে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের রায় আজ। এ উপলক্ষে ভারত জুড়ে নেয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। আর যেখানে বাবরি মসজিদ ছিল সেই অযোধ্যাকে দেখে মনে হয় যুদ্ধক্ষেত্র। সর্বত্র পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর উপস্থিতি।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে ‘এই রায়দানকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই ‘খাকি সমুদ্রে’ পরিণত হয়েছে অযোধ্যা। সম্পূর্ণ উত্তরপ্রদেশ পুলিশে পুলিশে সয়লাব। রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ, হনুমান মন্দির, বাস, গাড়ি, শহরের প্রতিটি কোণে কোণে মোতায়েন করা হয়েছে উর্দিধারী পুলিশ এবং র‍্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (র‍্যাফ)।’

সরেজমিনে সেই অযোধ্যার পরিস্থিতি লিখেছেন ভারতীয় সাংবাদিক অগ্নি রায়। তার আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত তার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে অযোধ্যার চিত্র। কেমন অবস্থায় আছে সেখানকার মুসলিমরা। নিরাপত্তা ব্যবস্থাই বা কেমন। রিপোর্টের শুরুতেই লেখা হয়েছে, ‘দুটো বাঘা সাইজের কুকুর প্রথমে এসে শুঁকে দেখে নিল গন্ধটা সন্দেহজনক কিনা! তারপর দুই মেশিনগানধারী, কলম আর জাবদা খাতা এগিয়ে দিয়ে বললেন, নাম-ঠিকানা-ঠিকুজি সব লিখে দিতে। ফোনে ছবি তুলে নেওয়া হল প্রেস কার্ডেরও। অযোধ্যার গ্রাউন্ড জিরো থেকে কিলোমিটার-খানেক দূরে একটি বিবর্ণ বাড়ির বেসমেন্ট। পুলিশ পরিবৃত হয়ে পাথরের মতো মুখ করে চেয়ারে বসে রয়েছেন অযোধ্যা মামলায় মুসলিম পক্ষের অন্যতম আইনজীবী হাজি মেহবুব। যিনি মাসখানেক আগেই বিতর্কিত জমিতে নমাজ পড়ার অধিকার চেয়ে চাঞ্চল্য তৈরি করেছিলেন। আজ শান্ত কণ্ঠে বললেন, ‘আদালতের রায় আসার পরে কী হবে, সেটা সময়ই বলবে। তবে এখন এখানে প্রশাসন খুবই কড়া হাতে সামলাচ্ছে। আশ্বাস দিয়েছে, কোনও অশান্তি হতে দেবে না।’

১৯৪৯ সালের ডিসেম্বরে বিতর্কিত জমিতে রামলালার মূর্তি স্থাপনের পরে বাবরি মসজিদের পক্ষে যিনি প্রথম মামলা দায়ের করেছিলেন, সেই হাসিম আনসারির বাড়ি ওখানেই। হাসিম মারা যাওয়ার পর তার পুত্র ইকবাল আনসারি মামলার বাদি হয়েছে। তার বাড়ির সামনে কড়া পুলিশি পাহাড়া। সাংবাদিক পরিচয় দিলেও ঢুকতে দেয়া হয়নি। পুলিশের পুলিশের তাবুতে ডেকে এনে ইকবাল আনসারির সাথে কথা ওই সাংবাদিকের।

ইকবাল তাকে বলেন, ‘অযোধ্যায় হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে কোনও বিবাদ ছিল না। এখনও নেই। আসলে সমস্যা তৈরি করেন রাজনৈতিক নেতারা।…. সাড়ে চারশো বছরের পুরনো মসজিদ ছিল এখানে। ১৯৪৯-এর ২৪ ডিসেম্বর রাত বারোটার সময় রামের মূর্তি বসিয়ে দেওয়া হল। আরে তাতেই কি সব বদলে যায়!’

রিপোর্টের শেষ অংশে লেখা হয়েছে, ফৈজাবাদ সীমানা পেরিয়ে অযোধ্যার স্বাগত তোরণ ছাড়ানোর পরেই মনে হচ্ছে, দেবস্থান নয়, কোনও যুদ্ধক্ষেত্রে চলে এলাম বুঝি। পুলিশ নির্দিষ্ট জায়গা ছাড়া গাড়ি দাঁড় করাতেই দিচ্ছে না। কৌতূহলী চোখে এ দিক ও দিক তাকালে এগিয়ে এসে পরিচয় জানতে চাওয়া হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা, হিন্দি লেখক এবং অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আফজল হুসেন বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কী, রায় কী হল না হল, তা নিয়ে এখানে যে বিরাট মাথাব্যথা রয়েছে এমনটা নয়। সবাই আতঙ্কিত এটাই ভেবেই যে ১৯৯২ যেন আবার ফিরে না আসে।’

সাইকেল ব্যবসায়ী জামালভাই বললেন, ‘গত এক মাস এই রায় নিয়ে এমনই থমথমে হয়ে রয়েছে গোটা এলাকা, যে ব্যবসা গোল্লায়। অযোধ্যাকে ঘিরে আশপাশের শহরগুলিতে এতটাই আতঙ্ক ছড়িয়েছে যে কেউ বাকিতে মাল দিতে চাইছে না আমাদের।

উত্তরপ্রদেশজুড়ে ১৪৪ ধারা
অযোধ্যা রায়ের আগে উত্তরপ্রদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন ভারতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। শুক্রবার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যসচিব ও ডিজিপির সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যসচিব রাজেন্দ্র তিওয়ারি ও ডিজিপি ওম প্রকাশ সিংকে নিজের চেম্বারে ডেকে পাঠিয়ে নিরাপত্তা ও আইন- শৃঙ্খলা নিয়ে আলোচনা করেন প্রধান বিচারপতি।
উল্লেখ্য, এই মামলার গুরুত্ব বিশ্লেষণ করে অযোধ্যা ও উত্তরপ্রদেশের সংবেদনশীল অঞ্চলগুলির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পক্ষ থেকৈ প্রায় ৪ হাজার আধা-সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়। উত্তরপ্রদেশজুড়ে জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877