স্বদেশ ডেস্ক:
কুড়িগ্রামের দুর্গম সীমান্ত এলাকা অনন্তপুর। একসময় বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী এ এলাকার নাম হয়তো জেলা সদরের অনেকেই জানত না। তবে ১৪ বছর আগে দুর্গম এই সীমান্তের দুর্নাম ছড়িয়ে পড়ে দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও। যদিও এর জন্য প্রাণ দিতে হয় ১৫ বছর বয়সী ফেলানী খাতুনকে। মূলত অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ তোলে, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ফেলানীকে মেরে ঝুলিয়ে রাখে সীমান্তের কাঁটাতারে। প্রাণহীন নিথর দেহে বাদুড়ঝোলা কিশোরীর প্রাণের বিনিময়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রকাশ পায় দুই দেশের সীমান্তে যুগ যুগ ধরে চলে আসা বিএসএফের বর্বরতা। এমন ঘটনায় ১৪ বছরের মেয়ে হত্যার বিচার পাননি ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম।
বিএসএফ সীমান্তে কী ধরনের বর্বরতা চালায়, সেটার চিত্র পাওয়া গেছে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) গত ১১ বছরের বার্ষিক সীমান্ত সংঘাতের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো ঘেঁটে। আসকের হিসাব অনুযায়ী গত ১১ বছরে (২০১৪-২৪) বাংলাদেশের সীমান্তগুলোয় শুধু বিএসএফের গুলিতেই প্রাণ হারিয়েছে ২৮৯ বাংলাদেশি। সীমান্তরক্ষীদের গুলিতে এর একমাত্র ও অদ্বিতীয় উদাহরণ হলো আমেরিকা মহাদেশে যুক্তরাষ্ট্র আর মেক্সিকোর সীমান্ত। বাংলাদেশ-ভারত আর যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো দেশের সীমান্তে এমন হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় না।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের এমন পরিস্থিতির নেপথ্য কারণ হিসেবে বিগত ক্ষমতাসীনদের নতজানু অবস্থানকে দায়ী করছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আব্দুল হামিদ। বাংলাদেশ হাইকমিশন দিল্লিতে ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ডিফেন্স অ্যাডভাইজার (সামরিক উপদেষ্টা) হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন এই সামরিক কর্মকর্তা।
দীর্ঘ সময়ে কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটা আসলে বিগত সরকারের সময় দুই দেশের যে সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কের আওতায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ ধরনের বর্ডার কিলিং বা ফেলানী হত্যা এসব বিষয়ে কোনো ধরনের জোরালো প্রতিবাদ করা হয়নি। তবে সাধারণ মানুষের ভেতরে সেই রক্তক্ষরণ ছিল, আছে। সাধারণ মানুষ এ ধরনের ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবাদ করতে চেয়েও প্রতিবাদ করতে পারেনি। প্রতিবাদ করতে গিয়ে তারা বিভিন্ন ধরনের দমন-পীড়নে পড়েছে।’