রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৫২ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়ালো শ্রীলঙ্কা রাজধানীতে ৩৪ চোরাই মোবাইলসহ চোরচক্রের সদস্য গ্রেপ্তার হোয়াটসঅ্যাপে স্লিপ গ্রহণ করবে হাইকোর্ট বেঞ্চ সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে সরকার, গ্রেপ্তারের নির্দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ দাবানলের মধ্যেই চলছে লুটপাট, কারফিউ জারি অন্তঃসত্ত্বা সাংবাদিককেও হুমকির অভিযোগ টিউলিপের বিরুদ্ধে সিরিয়ায় আসাদের ‘বিশ্বস্ত’ কর্মকর্তার প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড এবি পার্টির চেয়ারম্যান মঞ্জু ও সম্পাদক ফুয়াদ মাদুরোকে গ্রেপ্তারে আড়াই কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রির ঘরে, মৃদু শৈত্যপ্রবাহ
আরেক দফা বাড়বে জীবনযাত্রার ব্যয়

আরেক দফা বাড়বে জীবনযাত্রার ব্যয়

স্বদেশ ডেস্ক:

চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে এমনিতেই সাধারণ মানুষের চিড়েচ্যাপ্টা দশা; জীবনযাত্রার ব্যয়নির্বাহ নিয়ে আছে যারপরনাই দুশ্চিন্তায়। এর মধ্যেই শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক-কর বাড়িয়েছে সরকার। এতে বছরের শুরুতেই মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও এক দফা বেড়ে যাবে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে শুল্ক-কর বাড়ানো সংক্রান্ত দুটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অধ্যাদেশ দুটি হলো- মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং দি এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫। এই দুটি অধ্যাদেশ জারির প্রেক্ষাপটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগ এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে। এর ফলে এই অধ্যাদেশের পরিবর্তনগুলো সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়েছে। এর আগে গত ১ জানুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এনবিআরের ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব পাস করা হয়। এর পর আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়। জাতীয় সংসদ না থাকায় অধ্যাদেশ দিয়েই শুল্ক-কর বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, আমাদের রাজস্ব ও জিডিপি অনুপাত খুবই কম। আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা সবই ঋণনির্ভর, ঋণের চাপও বাড়ছে। এগুলো অর্থনীতিকে আরও ঝুঁকির মুখে ফেলছে। অন্যদিকে আইএমএফের বিভিন্ন শর্ত ও লক্ষ্যমাত্রা এখনও পূরণ করতে পারিনি- এ চাপও রয়েছে। এমন বাস্তবতায় রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তামাক ও মদের মতো যেসব ক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে সেটি যৌক্তিক; কিন্তু পোশাক, রেস্তোরাঁসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে শুল্ক-কর বাড়ানো হলে নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হতে পারে। কেননা তারা এমনিতে সার্বিকভাবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে রয়েছেন। আমার মনে হয় প্রত্যক্ষ কর কীভাবে বাড়ানো যায়, আগামী বাজেটে সেদিকে বেশি জোর দেওয়া উচিত। পরোক্ষ কর, যেটা সাধারণ মানুষের ওপর বেশি চাপ ফেলে সেটার ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে হবে। এজন্য কর আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি ডিজিটাইজেশনে বেশি জোর দিতে হবে। ভ্যাটের ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তর ও বিভিন্ন হারের পরিবর্তে সার্বিকভাবে একটি হার করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ না করে আরও একটু কমিয়ে সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য করা যেতে পারে।

এনবিআরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মুঠোফোনের সিম বা রিমকার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে প্রতিদিনের মুঠোফোনে কথা বলার খরচ ও ইন্টারনেট ব্যবহারে খরচ বাড়বে।

রেস্তোরাঁয় খেতে গুনতে হবে বাড়তি খরচ। কারণ সব ধরনের রেস্তোরাঁর বিলের ওপর ভ্যাট ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এত দিন এই হার ছিল ৫ শতাংশ। এতে শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণি পরিবার-পরিজন নিয়ে রেস্তোরাঁয় খেতে গেলে এখন বেশি খরচ হবে। পাশাপাশি উৎসব কিংবা বিভিন্ন উপলক্ষে মিষ্টি কিনে খেতেও খরচ বাড়তে পারে। কারণ মিষ্টির দোকানের ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

পোশাকের আউটলেটের বিলের ওপর ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে দ্বিগুণ অর্থাৎ ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে ব্র্যান্ডের দোকান বা বিপণিবিতান থেকে তৈরি পোশাক কিনতে গেলে এখন বেশি খরচ গুনতে হবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্র্যান্ড ও নন-ব্র্যান্ড উভয় ক্ষেত্রেই নতুন ভ্যাট প্রযোজ্য হবে। এতে পোশাকের দাম বাড়বে। এর প্রভাব বাণিজ্যেও পড়তে পারে। কারণ দাম বেড়ে গেলে বিক্রি কমে যেতে পারে।

শুল্ক-কর বৃদ্ধির তালিকায় রয়েছে আমদানি করা বিভিন্ন ফল। এর মধ্যে আছে- আঙুর, আপেল, আম, কমলালেবু ও নাশপাতি। আরও রয়েছে ফলের রস। এ ছাড়া স্থানীয় উৎস বা দেশের মধ্যে উৎপাদিত তামাকযুক্ত সিগারেট, রং, মদের বিল, পটেটো ফ্ল্যাকস, প্লাস্টিক ও মেটাল চশমার ফ্রেম, রিডিং গ্লাস, সানগ্লাস, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ও তাতে ব্যবহৃত তেল, সিআর কয়েলসহ বেশ কিছু পণ্যে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। সব ধরনের টিস্যুর ওপর ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ভ্যাট বেড়ে দ্বিগুণ হওয়ার ফলে টিস্যুর দাম বাড়তে পারে।

টেইলারিং শপ ও টেইলার্সেও ভ্যাটের হার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে দরজির দোকানে পোশাক বানাতে আগের চেয়ে এখন বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে।

এদিকে ভ্রমণপিপাসু মধ্যবিত্ত ও নিম-মধ্যবিত্তের জন্য ভ্রমণের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। কারণ নন-এসি হোটেলে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট দ্বিগুণ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতদিন যা সাড়ে ৭ শতাংশ ছিল। অর্থাৎ ভ্যাটের হার দ্বিগুণ করা হয়েছে।

আকাশপথে ভ্রমণের ক্ষেত্রেও আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। অভ্যন্তরীণ পথে বিমানযাত্রায় আবগারি শুল্ক ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হয়েছে। সার্কভুক্ত দেশ ভ্রমণে আবগারি শুল্ক ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা এবং সার্কভুক্ত দেশের বাইরে (এশিয়ার মধ্যে) ২ হাজার থেকে বাড়িয়ে আড়াই হাজার টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া ইউরোপ ও আমেরিকা ভ্রমণে আবগারি শুল্ক ৩ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার টাকা করেছে এনবিআর।

উল্লেখ্য, বিমান টিকিটের দামের সঙ্গে যাত্রীদের কাছ থেকে এই শুল্ক আদায় করা হয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877