স্বদেশ ডেস্ক:
চলতি বছরের শুরু থেকে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল পুনর্গঠন নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। গত সেপ্টেম্বরেই শ্রমিকদলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল কিন্তু হয়নি। তারপরও শ্রমিকদলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা, শ্রমিক দলকে গতিশীল করার লক্ষ্যে খুব দ্রুতই একটি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ঘোষণা করে একটি সফল কাউন্সিল সম্পন্ন করা হবে।
দেশের রাজনীতিতে এখন সার্বিকভাবে চলছে ক্রান্তিকাল। এ অবস্থায় বিএনপির রাজনীতিতে শ্রমিক দলের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। আর সে জন্য শ্রমিক দলকে করতে হবে আরো শক্তিশালী ও গতিশীল। মূলত এসব দিক সামনে রেখেই দ্রুত এ উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার বলে মনে করছেন শ্রমিকদলের নেতাকর্মীরা।
উল্লেখ্য ২০১৪ সালের ১৯-২০ এপ্রিল সপ্তম কাউন্সিলে আনোয়ার হোসাইনকে সভাপতি ও নুরুল ইসলাম খান নাসিমকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির নাম শ্রম অধিদফতরে জমা দেয়া হয়। কিন্তু পরে আবুল হোসেনকে সভাপতি ও আবুল খায়ের খাজাকে সাধারণ সম্পাদক করে পাল্টা একটি কমিটি জমা হলে বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা হয়। এরপর জমাকৃত দুটি কমিটির একটি কমিটিকেও অনুমোদন দেয়নি শ্রম অধিদফতর। শ্রমিকদল সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে গত ৩০ মার্চ দলের সভা করে এ বছরের সেপ্টেম্বরে কাউন্সিল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। যদিও সেপ্টেম্বরে কাউন্সিল কি কারণে হয়নি সেটা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।
শ্রমিকদলের কাউন্সিলের বিষয় জানতে চাইলে সংগঠনটির সভাপতি আনোয়ার হোসাইন নয়া দিগন্তকে জানান, কাউন্সিলের জন্য আমাদের যথাযথ প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়নি। আমাদের বিভিন্ন ইউনিটের সম্মেলনও শেষ হয়নি। তবে আমরা খুব দ্রুত একটি সুন্দর কাউন্সিল অনুষ্ঠিত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি। ডিসেম্বর নাগাদ কাউন্সিল হতে পারে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডিসেম্বর তো খুব কাছে। আমরা চেষ্টা করছি খুব দ্রুত কাউন্সিল করার জন্য।
সেপ্টেম্বরে কাউন্সিল সম্পর্কে জানতে চাইলে শ্রমিক নেতা আবুল খায়ের খাজা নয়া দিগন্তকে জানান, শ্রমিকদলে গণতন্ত্র নেই। দুই বছরের জন্য গঠিত কমিটি ছয় বছর পার করে দিয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশের পরও কেন সেপ্টেম্বরে কাউন্সিল করা হয়নি তা বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, দলের জন্য গুলি খেয়েছি, শত শত মামলার আসামি হয়েছি, আজ সেই দলকে নানা অনিয়মের মাধ্যমে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে।
সেপ্টেম্বরে শ্রমিকদলের কাউন্সিল কেন হয়নি এবং কবে নাগাদ হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান নয়া দিগন্তকে বলেন, কাউন্সিল করার জন্য যেসব প্রস্তুতি নেয়া দরকার ছিল তা সম্পন্ন হয়নি। এ জন্য একটু দেরি হচ্ছে। তবে খুব শিগগিরই আমরা কাউন্সিল করার জন্য চেষ্টা করছি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও শ্রমিকদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাফরুল হাসান এ বিষয়ে বলেন, শ্রমিকদলের বিভিন্ন ইউনিট কমিটি গোছানো হয়নি। এগুলো গুছিয়ে তারপরে সম্মেলনটা করতে হবে। কাউন্সিলের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি সকল প্রস্তুতি নিচ্ছে। আশা করি ২০২০ সালের জানুয়ারি-ফেব্র“য়ারির মধ্যে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপির সহশ্রমবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান নয়া দিগন্তকে বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেপ্টেম্বরে কাউন্সিল হওয়ার কথা থাকলেও কি কারণে সেটি হলো না তা বোধগম্য নয়। আর কবে হবে সে বিষয়েও আমাদের সাথে কোনো আলোচনা হয়নি। তিনি আরো বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের পরে ইউনিট এবং অন্যান্য জেলা মহানগর কমিটিগুলোর করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তাই শ্রমিকদলকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে দ্রুত কাউন্সিল হওয়া প্রয়োজন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিকদলের সভাপতি কাজী আমির খসরু এ ব্যাপারে বলেন, শ্রমিক দলের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির ৩৫ জনের মধ্যে দু-একজন ছাড়া সবাই নিষ্ক্রিয়। তারা সবাই ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। তারা জানেন কাউন্সিল হলে তারা বাদ পড়বেন। মূলত এ কারণেই তারা কাউন্সিল দিতে দেরি করছেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিকদলের সহসভাপতি আনোয়ার হোসাইন খান বলেন, বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ নেতা সরকারি ট্রেড ইউনিয়ন করেন। তারা চাকরি হারানোর ভয়ে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে আসেন না। আমাদের শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন সকল প্রোগ্রামে দৌড়াদৌড়ি করলেও অনেককেই সক্রিয় দেখা যায় না। তিনি আরো বলেন, আমরা চাই দ্রুত একটি কাউন্সিল দেয়ার মাধ্যমে আমাদের নতুন নেতৃত্ব ঠিক করা হোক।