স্বদেশ ডেস্ক:
সাকিব আল হাসানের সাথে কী আলাপ হয়েছিল জুয়াড়ির? কি প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল সাকিবকে? এ নিয়ে কৌতুহলের শেষ নেই। আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিট(আকসু) তাদের তদন্তে এ বিষয়গুলো খুঁজে পেয়েছে। তার কিছু অংশ প্রকাশ করেছে আইসিসি। তারা জানিয়েছে ওই জুয়াড়ির নাম দীপক আগরওয়াল। তার সাথে হোয়টসঅ্যাপে সাকিবের আলাপ হয়েছে।
দীপক আইসিসির সন্দেহভাজনদের একজন। আইসিসি জানিয়েছে, সাকিব তার সঙ্গে নিয়মিত কথা চালিয়ে গেছেন, কিছু মেসেজ মুছে ফেলেছেন ফোন থেকে, এমনকি ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখাও করতে চেয়েছেন।
২০১৭ (বিপিএল)
আইসিসির প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের বিপিএলের সময় সাকিবের পরিচিত এক লোকের কাছ থেকে তার ফোন নম্বর সংগ্রহ করেন ভারতীয় জুয়াড়ি দীপক আগরওয়াল। ওই ব্যক্তির কাছে বিপিএলে খেলা আরও ক্রিকেটারদের ফোন নম্বরও চেয়েছিলেন আগারওয়াল।
নভেম্বরের মাঝামাঝিতে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠিয়ে সাকিবের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ চায় আগরওয়াল।
জানুয়ারি ২০১৮
সাকিবের সাথে তার দ্বিতীয় দফা যোগযোগ হয় ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। দেশের মাটিতে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়েকে নিয়ে আয়োজিত ত্রিদেশীয় সিরিজের সময়। ওই টুর্নামেন্টের সময় আবার আগারওয়ালের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কয়েকবার আলোচনা হয় সাকিবের।
১৯ জানুয়ারির শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে সাকিব ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন। সেদিন সাকিবকে অভিনন্দন জানিয়ে একটি বার্তা পাঠান আগরওয়াল। সেখানে তিনি জানতে চান, ‘আমরা কি এখানে কাজ করব নাকি আইপিএল পর্যন্ত অপেক্ষা করব?’
এখানে ‘কাজ’ বলতে এখানে দলের ভেতরের খবর আগরওয়ালকে সরবরাহ করার কথা বোঝানো হয়েছে বলে জানিয়েছে আইসিসি। এই যোগাযোগের কথা সাকিব আইসিসি বা বিসিবি বা কোনো ধরনের দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষকে জানাননি।
চার দিন পর আবার আগরওয়াল মেসেজ পাঠান, ‘ব্রো, এই সিরিজে কিছু হবে?’
যথারীতি এই ঘটনাও সাকিব সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষকে জানাননি।
এপ্রিল ২০১৮
২৬ এপ্রিল আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে খেলেন সাকিব। ম্যাচের দিন আগরওয়াল সাকিবের কাছে একজন ক্রিকেটারের ব্যাপারে জানতে চান যে সে ওই ম্যাচে খেলবে কিনা। আবারও জানতে চান দলের ভেতরের খবর।
এছাড়া সাকিবের সাথে বিটকয়েন, ডলার অ্যাকাউন্ট নিয়ে কথা বলেন আগরওয়াল। জানতে চান সাকিবের ডলার অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত। এই আলোচনার সময়ই সাকিব বলেন, যে তিনি আগে দেখা করতে চান আগরওয়ালের সাথে।
সেদিনের বেশ কিছু বার্তা সাকিব মুছে ফেলেন। পরে জিজ্ঞাসাবাদে সাকিব জানান, সেগুলো ছিল দলের ভেতরে খবর জানতে চাওয়ার
কথা।
আইসিসি জানিয়েছে, ওই আলোচনার পরই আগরওয়ালকে নিয়ে সাকিবের ভাবনা হতে থাকে। আগারওয়াল একজন জুয়াড়ি হতে পারেন ভেবেও সাকিবের ধারণা হয়। তবে সেদিনের কথাও সাকিব সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষকে জানায়নি।
তদন্তের জন্য এ বছরের ২৩ জানুয়ারি ও ২৭ অগাস্ট সাকিবকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগের কর্মকর্তারা। নিয়ম অনুযায়ী আকুস কোন ক্রিকেটারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে ওই দেশের বোর্ডকে না জানিয়েই। জিজ্ঞাসাবাদে সাকিব জানান যে, আগরওয়ালের কাছ থেকে কয়েকবার প্রস্তাব পেয়েও তিনি তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাননি। এটাও বলেন যে, তিনি জানতেন প্রস্তাব পেয়েও না জানানো মানে আইসিসির বিধি ভঙ্গ করা।
সাকিব দাবি করেছেন, আগরওয়ালের অনুরোধে সাড়া দিয়ে কোনো তথ্য তাকে দেননি। আগরওয়ালের কাছ থেকে অর্থ বা উপহারও নেননিও।
তিনবার প্রস্তাব পেয়েও কর্তৃপক্ষকে না জানানোর কথা যেহেতু প্রমাণিত হয়েছে, তাই সে আইনে শাস্তি পেয়েছেন সাকিব।