মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:২৯ পূর্বাহ্ন

তালেবানের কূটনৈতিক বিজয়, কিরগিজস্তানের সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ

তালেবানের কূটনৈতিক বিজয়, কিরগিজস্তানের সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ

স্বদেশ ডেস্ক:

আফগানিস্তানের তালেবান চলতি সপ্তাহে বিশাল এক কূটনৈতিক বিজয় অর্জন করেছে। মধ্য এশিয়ার ছোট দেশ কিরগিজস্তান নীরবে গোষ্ঠীটিকে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে।

তালেবান ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ক্ষমতায় আছে। এ পদক্ষেপটি তালেবান এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ককে নির্দেশ করে। যুক্তরাষ্ট্র তালেবান সরকারের বৈধতা অস্বীকার করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক প্রচারাভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে এলেও চীন এবং রাশিয়ার নেতৃত্বে এক ডজনেরও বেশি আঞ্চলিক দেশ স্বঘোষিত ‘আফগানিস্তান ইসলামী আমিরাত’-কে গ্রহণ করেছে।

তালেবানের প্রতিক্রিয়া

কিরগিজস্তানকে একসময় এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিরগিজস্তানের সরকার তালেবানকে সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ দেয়ার তাদের সিদ্ধান্তকে প্রকাশ করেনি। তবে, তালেবানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্তটিকে তাদের আঞ্চলিক কূটনীতির সর্বসাম্প্রতিক অগ্রগতি বলে দ্রুত সুযোগ নেয়।

তালেবানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এ কথা বলে, ‘অন্যান্য দেশের পদক্ষেপের সাথে সামঞ্জস্য রেখে, কিরগিজস্তানের গৃহীত পদক্ষেপটি আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক উভয় স্তরে আফগানিস্তান ইসলামী আমিরাতের প্রতি একটি ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক স্বীকৃতির ইঙ্গিত দেয় এবং আফগানিস্তান ইসলামী আমিরাত এবং অন্যান্য দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার বিরুদ্ধে যেকোনও বাধা দূর করে।’

তালেবান আফগানিস্তানে ২০ বছর ধরে বিদ্রোহ চালানোর আগে প্রথম ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দেশটি শাসন করে। তালেবানকে বছরের পর বছর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের তালিকাবদ্ধ করা হয়। যদিও যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের একটি ‘বিদেশী সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে চিহ্নিত করেনি, তবে তারা গোষ্ঠীটির সদস্যদের ‘বিশেষভাবে চিহ্নিত বিশ্ব সন্ত্রাসী’ হিসেবে বিবেচনা করে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কিরগিজস্তান মধ্য এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় দেশ যারা তালেবানকে তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। ডিসেম্বরে, কাজাখস্তান তালেবানের সাথে তাদের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার অংশ হিসেবে গোষ্ঠীটিকে তাদের নিজস্ব সন্ত্রাসী তালিকা থেকে সরিয়ে নেয়। মে মাসে, রাশিয়া বলে তারাও এই ধরনের পদক্ষেপ বিবেচনা করছে যে তালেবানের সরকারকে তারা স্বীকৃতি দিবে কি না।

যদিও কোনো দেশ তালেবানকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি, আফগানিস্তানের ছয়টি প্রতিবেশী দেশসহ এক ডজনেরও বেশি দেশ তালেবান কূটনীতিকদের আফগান দূতাবাস বা কনস্যুলেটের দায়িত্ব নেয়ার অনুমতি দিয়েছে। তাদের মধ্যে, জানুয়ারিতে চীন, তারপরে কাজাখস্তান এবং গত মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাত, এই তিনটি দেশ স্বীকৃত তালেবান দূতকে গ্রহণ করে।

তালেবানের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে মধ্য এশিয়ার দেশগুলো রাশিয়া এবং চীন থেকে তাদের অনুপ্রেরণা নিচ্ছে। এই দুটি দেশই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আফগানিস্তানের কার্যক্ষম সরকারের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা আরো গভীর করেছে।

একটি ‘প্রয়োজনীয় মন্দ’

তালেবানের আঞ্চলিক কূটনীতি নিয়ে একটি প্রতিবেদনে, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেন কিভাবে বিভিন্ন দেশ ভিন্ন ভিন্ন এজেন্ডা অনুসরণ করে।

বিশ্লেষকরা লিখেন, আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশ যেমন ইরান, পাকিস্তান এবং উজবেকিস্তান তালেবানের সাথে মোকাবিলা করাকে তাদের ‘মূল উদ্বেগের সমাধান করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মন্দ’ হিসেবে বিবেচনা করে। এই উদ্বেগগুলোর মধ্যে উগ্রবাদি হুমকির পাশাপাশি বাণিজ্যও রয়েছে। কিরগিজস্তান এবং তাজিকিস্তানের জন্য অগ্রাধিকার হলো আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানে উদ্বৃত্ত জ্বালানি নেয়ার জন্য একটি পরিকল্পিত প্রকল্প।

বিশ্লেষকরা বলেন, চীন, ভারত এবং রাশিয়া- এই আঞ্চলিক শক্তিগুলো আফগানিস্তান থেকে ‘যেকোনো সমস্যার অতিরিক্ত প্রভাব’ রোধ করতে তাদের সম্পৃক্ততা ব্যবহার করে। রাশিয়া তালেবানকে ইসলামিক স্টেটের স্থানীয় শাখার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে বিবেচনা করে। আর যদিও চীন আফগানিস্তানের সাথে লাভজনক বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, তারাও সন্ত্রাসবাদের ভয় দ্বারা চালিত।

তারা লিখেন, আরব আমিরাত এবং কাতারের মতো দূরবর্তী দেশগুলো ‘তালেবানের ইসলামিক ব্যতিক্রমবাদকে চ্যালেঞ্জ করতে চায়। কিন্তু, তারাও তাদের নিজস্ব আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভারসাম্য বজায় রাখার প্রয়োজন দ্বারা তাড়িত’।

কৌশলগত স্বার্থ বনাম মানবাধিকার

উল্লেখযোগ্যভাবে, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের সমর্থনকারী গ্রুপ, ফ্রিডম হাউজ যে দেশগুলো তালেবানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে, তাদের কোনোটিকেই ‘মুক্ত’ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করেনি। ভিওএ-এর একটি পর্যালোচনা অনুসারে, দুটি দেশ বাদে বাকি সকলকে ‘মুক্ত নয়’ বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে৷ শুধুমাত্র পাকিস্তান এবং তুরস্ককে ‘আংশিকভাবে মুক্ত’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি যথেষ্ট সংখ্যক দেশ মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের চাইতে কৌশলগত স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়, তবে তালেবান আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে।

যদিও মানবাধিকার সব সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে অগ্রাধিকার পায়নি, বাইডেন প্রশাসন, তার পশ্চিমা মিত্রদের সাথে, মানবাধিকার, নারীর অধিকার এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনের শর্তসাপেক্ষে তালিবানকে স্বীকৃতির শর্ত দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ এবং যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতির প্রভাব অপরিসীম। বর্ধিত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা তালেবানকে তাদের কঠোর নীতি, যেমন ষষ্ঠ শ্রেণীর পরে মেয়েদের শিক্ষার উপর নিষেধাজ্ঞা বজায় রাখতে উৎসাহিত করতে পারে।

এটি ওয়াশিংটনকে তালেবানের সাথে সম্পৃক্ততা ও বিচ্ছিন্নতা বজায় রাখার দ্বৈত নীতি পুনর্মূল্যায়ন করতে বাধ্য করতে পারে। তালেবানের দখলের পর থেকে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় কূটনীতিকরা কাতারে তালেবান কর্মকর্তাদের সাথে চলমান সংলাপ চালিয়েছে। কাতারে তারা তাদের আফগানিস্তান দূতাবাসের কার্যক্রম পরিচালনা করে।

সূত্র : ভিওএ

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877