বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২৭ অপরাহ্ন

সাকিবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ দুদকে

সাকিবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ দুদকে

স্বদেশ ডেস্ক

বিশ্বখ্যাত তারকা ক্রিকেটার ও সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, সোনা চোরাচালান, নিষিদ্ধ জুয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের অর্থ আত্মসাৎ, ক্রিকেটে দুর্নীতি, নির্বাচনী হলফনামায় তথ্য গোপনসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির একটি অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা পড়েছে।

দুদক চেয়ারম্যান বরাবর জমা পড়া

অভিযোগটি সুনির্দিষ্ট এবং দালিলিক তথ্যভিত্তিক দাবি করে অভিযোগকারী জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ অনুসন্ধানের মাধ্যমে সাকিবের বিরুদ্ধে আইনিব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। অভিযোগের বিষয়ে দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগটি দুদকের তফসিলভুক্ত। নিয়মানুযায়ী এখন কমিশন অভিযোগটি যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠাবে। এরপর সেখান থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনিব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের সূত্র ধরে দুদকে করা অভিযোগে সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে ছয় প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে ১০৪ কোটি টাকা আত্মসাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, অভিযোগটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে তদন্ত করে এতে সাকিবের বিও অ্যাকাউন্টের লেনদেনের তথ্য ও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। ফরচুন সুজ, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, ওয়ান ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক, আইপিডিসি ফাইন্যান্স ও বিডিকম অনলাইন লিমিটেডের শেয়ার কারসাজিতে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে বলা হয় অভিযোগে।

সাকিব আল হাসান শেয়ারবাজার কারসাজির নায়ক আবুল খায়ের হিরোর গ্রুপের সদস্য উল্লেখ করে অভিযোগে বলা হয়, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে সাকিব ছাড়া অন্যদের আর্থিক ক্ষতিপূরণের শাস্তি দেওয়া হয়। তখন শুভেচ্ছা দূত থেকে সাকিবকে না রাখার সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

সাকিব আল হাসান নিষিদ্ধ জুয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত উল্লেখ করে অভিযোগে আরও বলা হয়, তিনি বেট উইনার অনলাইন জুয়ার প্রতিষ্ঠানের চুক্তিবদ্ধ ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে ঘোষণা দেন এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ক্রিকেট খেলাসহ অন্যান্য গেইম এবং ক্যাসিনো জুয়ার কারবার প্রমোট করেন। সাকিব আল হাসান এ রূপ অবৈধ কার্যের মাধ্যমে নিজে অপরাধলব্ধ অর্থ উপাজর্ন করেন।

এই ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে সোনা চোরাচালানের অভিযোগও উঠেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনের সূত্র উল্লেখ করে বলা হয়, সাকিব তার ব্যবসায়িক অংশীদার রাশেক রহমানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে রিলায়েবল কমোডিটিস এক্সচেঞ্জ কোম্পানি ও বুরাক কমোডিটিস এক্সচেঞ্জ কোম্পানির মাধ্যমে আইন ও বিধি না মেনে স্বর্ণের ব্যবসা করেন। সরকারের শুল্ক ও রাজস্ব এড়িয়ে অবৈধ স্বর্ণের ব্যবসা করে চোরাচালানের অপরাধ করেছেন। এটি মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ বলে উল্লেখ করা হয়।

সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এতে বলা হয়, ২০১৬ সালে সাতক্ষীরার দাতিনাখালী এলাকায় সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্ম নামে একটি কাঁকড়ার খামার গড়ে তোলেন। ওই খামারের জন্য সফট সেল কাঁকড়া বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সংগ্রহ করে প্রায় ১ কোটি টাকা বকেয়া পরিশোধ করেননি তিনি। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে তিনি নিজে অবৈধভাবে লাভবান হয়েছেন।

এদিকে ২০১৯ সালে সাকিব আল হাসান ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পাওয়ার পর তা গোপন করায় আইসিসি থেকে তাকে দুই বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এ ছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তার আয় গোপনের অভিযোগ উঠেছে। হলফনামায় তিনি মোনাক মার্কের মালিকানা, পাওয়ার প্ল্যান্টের লাইসেন্স, পিপলস ব্যাংকের মালিকানা, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, ট্রাভেল এজেন্সি, হোটেল ব্যবসা, স্বর্ণ আমদানি, অনলাইন জুয়ার সাইটের সঙ্গে সম্পর্ক, কক্সবাজারের হোটেল হোয়াইট স্যান্ডে ২০ হাজার বর্গফুট বাণিজ্যিক স্পেসের মালিকানা, রেস্টুরেন্ট ব্যবসা, যুক্তরাষ্ট্রে স্ত্রীর নামে বাড়ি কেনার তথ্যসহ আরও অন্যান্য বিষয় হলফনামায় গোপন করেন।

আমিনুলের মতো সাকিবের ভোগান্তি হবে না, আশ্বাস আইন উপদেষ্টার

সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে হওয়া হত্যা মামলায় তার যেন ফুটবলার আমিনুলের মতো কোনো ভোগান্তি না হয়, সে বিষয়ে আশ^াস দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। সচিবালয়ে গতকাল তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সাকিবকে নিয়ে সংবাদমাধ্যমে অনেক লেখালেখি হলেও জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হকের মামলার সময় দেশের সংবাদমাধ্যম চুপ ছিল। ২০০৩ সাফজয়ী জাতীয় ফুটবল দলের গোলরক্ষক, সাবেক অধিনায়ক ও বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় আমিনুলের মামলার প্রসঙ্গ টেনে আইন উপদেষ্টা বলেন, এটি আওয়ামী লীগই তো শুরু করেছে, ঠিক না? আমিনুলকে যেভাবে অত্যাচার করা হয়েছে, তখন কি আপনারা প্রশ্ন করেছিলেন? আমিনুলকে তো জেলে ভরা হয়েছে, সাকিবের বিরুদ্ধে জাস্ট মামলা হয়েছে।

আমিনুলের মতো এমন ভোগান্তি সাকিবের যাতে ভোগান্তি না হয়, সেটি খেয়াল রাখা হবে বলে জানান আসিফ নজরুল।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877