মাসুম খলিলী :
‘বার্মা আইন’ পাস করার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘তিব্বত সমাধান আইন’ পাস করে কি চীনকে নতুন কোনো বার্তা দিতে চাইছে? দেশটি এমন একসময় এই আইন পাস করেছে, যখন দক্ষিণ চীন সাগর ও মিয়ানমার ফ্রন্টে চীনকে কনটেইন করার আমেরিকান প্রচেষ্টা নিয়ে তাইওয়ান প্রবল উত্তেজনার মধ্যে রয়েছে। এই আইন পাসের অর্থ দৃশ্যত তিব্বতের ওপর চীনের অধিকারের স্বীকৃতি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা। ভূরাজনীতি বিশেষজ্ঞরা এটিকে চলতি দশকের শেষভাগে এশীয় অঞ্চলে চীন-মার্কিন সঙ্ঘাতের লক্ষণ হিসেবেও দেখছেন; যা ঘটলে এ অঞ্চলের কোনো দেশ এর উত্তাপ থেকে রক্ষা পাবে বলে মনে হয় না।
গত ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন হাউজে প্রমোটিং এ রেজুলিউশন টু তিব্বত-চীন বিরোধ আইন পাসের পর সম্প্রতি এটি সিনেটে পাস করা হয়। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অনুমোদন করায় ‘তিব্বত সমাধান আইন’ কার্যকর হয়। এ আইনের লক্ষ বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসঙ্ঘ সনদ অনুযায়ী তিব্বত-চীন বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান করা। কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই আলোচনার মাধ্যমে তা সম্পন্ন করতে হবে।
তিব্বত সমাধান আইন ২০২৪
তিব্বত নীতি আইন (২০০২) এবং তিব্বত নীতি ও সহায়তা আইন (২০২০) এর পর এটি ২০২৪ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে পাস করা তৃতীয় উল্লেখযোগ্য আইন। এর লক্ষ্য তিব্বতে মার্কিন অবস্থান শক্তিশালী করা এবং দালাই লামার সাথে আলোচনা শুরুর জন্য চীনকে চাপ দেয়া।
এর মাধ্যমে ওয়াশিংটন আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে হারিয়ে যাওয়া তিব্বতি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও মানবাধিকারের ইস্যু আবার সামনে নিয়ে আসতে চায়। বাহ্যত এর মাধ্যমে তিব্বতের জনগণের স্বতন্ত্র ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও ভাষাগত পরিচয়ের স্বীকৃতি দেয়া এবং এড্রেস করা হবে; যা বেইজিংয়ের জন্য নতুন বিপত্তির কারণ হতে পারে।
২০০২ আইনে যুক্তরাষ্ট্র তিব্বতের ওপর চীনের দাবি স্বীকার করে নিয়েছিল। ২০০২ সালের আইনটিতে দালাই লামার সাথে সংলাপকে উৎসাহিত করা হয়েছিল শুধু একজন আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে, রাজনৈতিক প্রতিনিধি হিসেবে নয়। এর বিপরীতে, নতুন আইনে চীনকে দালাই লামা বা তার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সাথে কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই রাজনৈতিক সংলাপে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
২০২০ সালের তিব্বত নীতি ও সমর্থন আইনেও গঠনমূলক আলোচনার জন্য চাপ দেয়া হয় আর এবারের তিব্বত সমাধান আইনে বলা হচ্ছে, এ আলোচনার লক্ষ্য করা উচিত পক্ষগুলোর মধ্যে ‘পার্থক্য নিরসন’।
তিব্বতের সোয়া শ’ বছর
ব্রিটিশরা উপমহাদেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে থেকে হিমালয়ান জনপদ তিব্বত একটি বিরোধপূর্ণ অঞ্চল ছিল। বিশ শতকের শুরুর দিকে কর্নেল ইয়ংহাসব্যান্ডের নেতৃত্বে তিব্বতে ব্রিটিশ সামরিক অভিযান পরিচালিত হয়, যার লক্ষ্য ছিল এ অঞ্চলে ব্রিটিশ উপস্থিতি প্রতিষ্ঠা করা এবং ক্রমবর্ধমান রুশ প্রভাব প্রতিহত করা। এখানে তিব্বতীয় বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে ব্রিটিশদের জয় হয় এবং ১৯০৪ সালের লাসা কনভেনশন স্বাক্ষর হয়। এরপর ১৯০৭ সালে অ্যাংলো-রাশিয়ান কনভেনশন চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়, যার লক্ষ্য ছিল ঔপনিবেশিক ব্রিটেন ও রাশিয়ার মধ্যে বিশেষ ঔপনিবেশিক বিরোধ নিষ্পত্তি করা। সেই চুক্তিতে চীন সরকারের মধ্যস্থতা ছাড়া তিব্বতের সঙ্গে দুই বৃহৎ শক্তি কোনো আলোচনা করবে না বলে উল্লেখ করা হয়।
তিব্বতের সাথে ভারতের সম্পর্ক
চীন-ভারত বিরোধের সাথে তিব্বত সঙ্কটটি যুক্ত। ভারত থেকে তিব্বতে বৌদ্ধধর্মের বিস্তার এবং প্রভাবশালী বৌদ্ধ মঠের উপস্থিতি দু’টি অঞ্চলের মধ্যে শক্তিশালী সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংযোগ গড়ে তোলে। এর মধ্যে চীন-ভারত সীমান্ত বিরোধ, বিশেষ করে লাদাখ এবং অরুনাচল প্রদেশ অঞ্চলের বিরোধ ভারত ও চীনের মধ্যে সঙ্ঘাতের একটি প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তিব্বতের মর্যাদা ও ভারতের সাথে এর সম্পর্ক রয়েছে এই চলমান বিরোধের কেন্দ্রে। উভয় দেশই বিতর্কিত অঞ্চলের ওপর সার্বভৌমত্ব দাবি করে।
অবশ্য ২০০৩ সাল থেকে ভারত ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক ও ব্যাপক সহযোগিতার নীতির ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করার পর ভারত তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলকে চীনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যদিও ১৯৫৯ সালে ভারত ব্যর্থ বিদ্রোহের পর দালাই লামাকে আশ্রয় দেয়।
চীন-তিব্বত বিরোধের পটভূমি
তিব্বত হলো তিব্বত মালভূমির একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, যেখানে তিব্বতীয় বৌদ্ধধর্মকে কেন্দ্র করে একটি স্বতন্ত্র সংস্কৃতি, ভাষা এবং ধর্মীয় ঐতিহ্য রয়েছে। ১৯১৩ সালে, ১৩তম দালাই লামা কিং রাজবংশের পতনের পর তিব্বতের প্রকৃত স্বাধীনতা ঘোষণা করে দাবি করা হয় যে, তিব্বত কখনোই চীনের অংশ ছিল না। তবে ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত পিপলস রিপাবলিক অব চায়না (পিআরসি) তিব্বতের ওপর সার্বভৌমত্ব দাবি ও কার্যকর করেছে। ১৯১২ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত, তিব্বত কোনো চীনা সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল না, দালাই লামার সরকার এ অঞ্চল শাসন করে।
১৯৫১ সালে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) তিব্বত আক্রমণ করে এবং তিব্বতের নেতারা সতেরো দফা চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন, যাতে নামমাত্র তিব্বতের স্বায়ত্তশাসনের নিশ্চয়তা দেয়া হয় এবং তিব্বতের রাজধানী লাসায় চীনা বেসামরিক ও সামরিক সদর দফতর স্থাপনের ব্যবস্থা থাকে। দালাই লামা এই চুক্তির বৈধতা প্রত্যাখ্যান করে এবং এটিকে জাবরদখল বলে অভিহিত করে।
তিব্বত ও চীনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ১৯৫৯ সালে বড় অভ্যুত্থানের দিকে পরিচালিত করে। এ সময় দালাই লামা এবং হাজার হাজার তিব্বতি ভারতে আশ্রয় নেন। তিব্বতি নির্বাসিতরা ভারতের ধর্মশালায় অবস্থিত একটি নির্বাসিত সরকার, ‘সেন্ট্রাল তিব্বতি প্রশাসন’ গঠন করে।
১৯৫৯ সালের বিদ্রোহের পর চীন তিব্বতের ওপর নিয়ন্ত্রণ কঠোর করে বাক, ধর্ম ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে সীমিত করে। সেখানে জাতিগত হান চীনাদের আগমনের মাধ্যমে জনসংখ্যাগত পরিবর্তন করে। একই সাথে তিব্বতে অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগ করে।
চীন-তিব্বত ইস্যুতে বৈশ্বিক অবস্থান
চীন দাবি করে যে, ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে তিব্বত চীনা ভূখণ্ডের অংশ। চীন তিব্বতকে একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল বলে দাবি করে এবং দালাই লামাকে বিচ্ছিন্নতার জন্য অভিযুক্ত করে। দালাই লামার ভবিষ্যৎ নির্বাচন নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে চীন। এটি আশঙ্কা করছে যে, তিব্বতে তার কর্তৃত্ব চ্যালেঞ্জ করার জন্য দালাই লামার উত্তরসূরি বেছে নেয়া হতে পারে।
দালাই লামার নেতৃত্বে নির্বাসিত তিব্বত সরকার ভারতসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি পায়নি। অনেক দেশ, বিশেষ করে যারা চীনের সাথে সম্পর্কযুক্ত, একটি নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখে এবং চীনের সাথে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতায় অগ্রাধিকার দেয়। নেপাল ও ভুটানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলো চীনের সাথে উত্তেজনা এড়াতে সতর্ক অবস্থান নেয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মতো কিছু পশ্চিমা দেশ তিব্বতের স্বায়ত্তশাসন এবং মানবাধিকারের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছে। জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তিব্বতে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সাংস্কৃতিক দমনের বিধিনিষেধসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
তিব্বত আইন কী করবে
তিব্বত-চীন বিরোধ নিষ্পত্তি আইনে একটি সমাধানের কথা উল্লেখ করে বলা হয় যে, নতুন মার্কিননীতি অনুসারে তিব্বত ও চীনের মধ্যে বিরোধ আন্তর্জাতিক আইন মতে অমীমাংসিত রয়ে গেছে। তিব্বতের জন্য বিশেষ সমন্বয়কারীকে সক্রিয়ভাবে এবং সরাসরি চীনা সরকার ও কমিউনিস্ট পার্টির কাছ থেকে তিব্বত সম্পর্কে বিভ্রান্তি মোকাবেলা করার ক্ষমতা দেয়া হয়; যাতে তিব্বত সম্পর্কে কথিত বিভ্রান্তি দূর করে সমাধান নিশ্চিত করা যায়।
নতুন আইনে চীনের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলা হয় যে, তিব্বত আগে থেকে চীনের অংশ এ বক্তব্য ‘ভুল’। তিব্বতের ওপর একটি আলোচনা ও চুক্তির লক্ষ্যের দিকে বহুপাক্ষিক প্রচেষ্টায় অন্যান্য সরকারের সাথে সমন্বয় করার জন্য স্টেট ডিপার্টমেন্টের দায়িত্ব নিশ্চিত করা হয় আইনে।
বৈশ্বিক অঙ্গনে চীনের সাথে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির সাথে সাথে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্কিন সরকার নাটকীয়ভাবে তিব্বতের প্রতি সমর্থন বাড়িয়েছে। সাম্প্রতিক আনিগুলি এরই অংশ।
তিব্বত-চীন বিরোধ সমাধান আইনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত চীনা সরকার এবং দালাই লামা বা তার প্রতিনিধি বা তিব্বতি সম্প্রদায়ের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতাদের মধ্যে পূর্বশর্ত ছাড়াই সংলাপের ব্যবস্থা করা।
চীনা সরকার তিব্বতের অর্ধেকেরও কম এলাকাকে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করে। তবে আমেরিকান আইনে বলা হয় যে, তিব্বতে গানসু, কিংহাই, সিচুয়ান ও ইউনান প্রদেশের তিব্বত অঞ্চলও অন্তর্ভুক্ত।
প্রতিক্রিয়া কী হবে?
নতুন আইন কার্যকর হওয়ার পর আমেরিকান আইনপ্রণেতাদের একটি প্রতিনিধিদল তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামার সাথে দেখা করতে ভারত সফর করে। এ সময় আমেরিকান প্রতিনিধিদলটি তিব্বতের আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য মামলা শক্তিশালী করার লক্ষ্যে তিব্বতের জনগণের আকাক্সক্ষা ও বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে বেইজিংকে মোকাবেলা করতে একটি অস্পষ্ট প্রতিশ্রুতির চেয়ে বেশি কিছু করার প্রস্তাব করে।
ভারতে এই সর্বশেষ বৈঠকের প্রতিক্রিয়ায় চীন কী করবে সেটি গুরুত্বপূর্ণ। মুসলিম উইঘুরদের স্বাধীনতার আহ্বানে রাষ্ট্রপতি বাইডেন সমর্থন দিয়েছিলেন। কিন্তু উইঘুরদের ওপর বেইজিংয়ের নির্মম দমন প্রতিকারে ওয়াশিংটন কিছুই করেনি। তিব্বতিদের ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হওয়ার কোনো লক্ষণ এখনো স্পষ্ট নয়।
প্রকৃত সমর্থন ছাড়া তিব্বতে আমেরিকান সম্পৃক্ততা আরেকটি ব্যর্থ চাল হিসেবে স্মরণ করা হবে, যা একটি বৃহত্তর ভূরাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার জন্য জনগণকে আত্মনিয়ন্ত্রণের দিকে উৎসাহিত করে। এখানে প্রথম হতাহতরা আমেরিকান বা চীনারা হবে না, হবে সাধারণ তিব্বতিরা।
ইরাক, সিরিয়া, ইরান ও আফগানিস্তানে আমেরিকার সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে এর আগে দেখা গেছে, যেখানে লোকেরা শত্রু বা প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে উৎসাহিত হয়েছিল। আর প্রতিশোধ বা স্বার্থ সম্পন্ন হওয়ার পর তাদের আর মনে রাখা হয়নি।
অন্যান্য পরিস্থিতিতে যেমন সার্ব জাতীয়তাবাদীদের গণহত্যা নীতির বিরুদ্ধে বসনিয়াক ও কসোভারদের সমর্থনে আমেরিকার হস্তক্ষেপগুলো যথাযথভাবে প্রাধান্য পেয়েছে। কারণ হুমকিগুলো সহিংসতায় পরিণত হলে এটি সামরিক প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত ছিল। কিন্তু পরমাণু শক্তিধর চীন অনেক কঠিন প্রতিপক্ষ।
যুক্তরাষ্ট্র যদি তিব্বতিদের চীনা দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে রক্ষা করতে চায়, তবে এটিকে অবশ্যই টেকসই সাহায্য এবং নিরাপত্তার গ্যারান্টিসহ বাস্তব পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সেটি না করে শুধু একটি অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া উসকে দিলে প্রতিক্রিয়া ভালো কিছু হওয়ার কথা নয়।
চীনের আঞ্চলিক দাবি ইতোমধ্যে তাইওয়ান এবং দক্ষিণ চীন সাগরের বিস্তৃত অংশে বিরাজিত। এর ফলে উত্তেজনাপূর্ণ নৌ স্থবিরতা দেখা দিয়েছে এ অঞ্চলে। এসব দাবি প্রশমিত করার জন্য, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে একটি শিথিল চুক্তিকে সমর্থন করে, যাতে চীনা অগ্রগতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
ভারত সাড়া দেবে কি
তিব্বতকে কেন্দ্র করে চীনের বিরুদ্ধে কিছু করতে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে পাশে পেতে চাইবে। কিন্তু নয়াদিল্লি হিসাব না করে ওয়াশিংটনের পাশে দাঁড়াবে বলে মনে হয় না। ‘বার্মা আইন’ বাস্তবায়নের ব্যাপারে ভারত মিয়ানমারের অখণ্ডতাকে সমর্থন ও জান্তা সরকারের পাশে থেকেছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের বিষয়ে কোয়াডে আমেরিকার অংশীদার হলেও একই সাথে দিল্লি ব্রিকস ও সাংহাই সহযোগিতা সংস্থায় চীন রাশিয়ার সাথে যৌথ উদ্যোক্তা হয়েছে। কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের যুক্তি দেখিয়ে বৈশ্বিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের একান্তভাবেই লেজুড় ধরে থাকার নীতি নেয়নি।
অধিকন্তু দক্ষিণ এশিয়ায় চীনা আধিপত্য ঠেকাতে আমেরিকার সাথে থাকার ভাব নিলেও কৌশলগত একান্ত সমীকরণ কখনো তৈরি করেনি ভারত। ফলে দুই দেশ একে অন্যকে স্বার্থগত সমীকরণে বন্ধু হিসেবে দেখলেও কৌশলগত মৈত্রী সেভাবে গড়ে ওঠেনি। এটি শুধু মিয়ানমারের ক্ষেত্রে দেখা গেছে তাই নয়, সেই সাথে বাংলাদেশেও ভেতরে ভেতরে আমেরিকার প্রভাব ঠেকাতে বেইজিং-দিল্লি এক হয়ে কাজ করেছে বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক।
তাদের ধারণা, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি আমেরিকা মিয়ানমারের অংশ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে খ্রিষ্টান রাষ্ট্র গঠন করতে চায় বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি এই রাষ্ট্র গঠনের চিন্তা থেকে মনিপুর মিজোরাম নাগাল্যান্ডকে বাদ দিলেও এ অঞ্চলের ‘জো সম্প্রদায়’ যে রাষ্ট্র গঠনের মানচিত্র প্রকাশ করেছে, সেটিতে তিন দেশের অঞ্চলই রয়েছে।
আমেরিকান বার্মা আইন পাস করার সাথে উল্লিখিত এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার একটি সম্পর্ক রয়েছে বলে কৌশলবিদরা মনে করেন। এই সমীকরণ থেকে এ অঞ্চলের তিন দেশ চীন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি অঘোষিত সমঝোতা হয়ে থাকতে পারে। প্রধানমন্ত্রী যেটির কিছুটা ইঙ্গিতও দিয়েছেন ঘাঁটি করার কথা উল্লেখ করে। মিয়ানমারে সরাসরি হস্তক্ষেপের জন্য ভারত থাইল্যান্ড বা বাংলাদেশের ভূখণ্ড একান্তভাবে ব্যবহার করার মতো সুযোগ এখনো পায়নি যুক্তরাষ্ট্র। যে কারণে এটি পায়নি সেই একই কারণে তিব্বত আইনের ক্ষেত্রেও পাবে বলে মনে হয় না।
ভারতের এ ব্যাপারে নেতিবাচক সাড়া দেখেই হয়তো বা চীন ভারত সমঝোতার ব্যাপারে এক বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশন। গত ২ জুলাই তানভি মদনের লেখা এই নিবন্ধের শিরোনাম, ‘ভারত-চীন চুক্তি কি হতে চলেছে?’ এটি নিয়ে পরে কোনো কলামে আলোচনা করার ইচ্ছা থাকল। তবে আমেরিকা-চীনের দ্বন্দ্বের সুবিধা দিল্লি পেতে চাইলেও নিজের ভূখণ্ড বা দোরগোড়ায় সঙ্ঘাতের ক্ষেত্র বানাতে চাইবে বলে মনে হয় না।