স্বদেশ ডেস্ক:
টাঙ্গাইলের ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের একটি মামলায় মৃত বিবাদিকে উপস্থিত পেয়ে তার সাথে কথা বলে নোটিশ জারি করে তা আদালতের নথিতে শামিল করেছেন জারিকারক সোহেল রানা। অথচ ওই বিবাদি নোটিশ জারির ২৪ বছর আগেই মারা গেছেন। এ অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট আদালতে এই ভৌতিক নোটিশ জারিকারকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেছেন বিবাদি পক্ষের আইনজীবী। শুনানি শেষে বিচারক জারিকারকের বিরুদ্ধে শোকজের আদেশ দেন।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ৭ অক্টোবর টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার ৮ নম্বর আউশনারা ইউনিয়নের টিকরী গ্রামের মো: ফজলুর রহমান খান ও তার স্ত্রী মোছা: শিউলী বেগম বাদি হয়ে একই গ্রামের মো: জোয়াহের আলী খানের বিরুদ্ধে রেকর্ড সংশোধনের একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর ৩০৩৪/২০১৫)। বিচারক যথারীতি মামলার বিষয়ে অবগত করতে বিবাদি বরাবর নোটিশ পাঠানোর আদেশ দেন। এ মামলায় জোয়াহের আলী খান ছাড়াও টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ও জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসারকেও বিবাদি করা হয়েছে।
পরে জারিকারক সোহেল রানা বিবাদি জোয়াহের আলী খান বরাবর নোটিশ জারি করেন নোটিশ জারির কৈফিয়তে তিনি উল্লেখ করেনÑ “১৭/১০/১৫ তারিখে বেলা অনুমান ২.৩০ নোটিশে লিখিত স্থানে হাজির হইয়া মোকাবেলা ব্যক্তিগণের পরিচয় মতে ১ নং বিবাদির বাড়িতে হাজির হইয়া তাহাকে হাজির পাইয়া নোটিশের মর্ম জ্ঞাত করাইলে তিনি মর্ম জ্ঞাত হইয়া নিজ নাম স্বাক্ষর করিয়া নকল নোটিশ রাখিতে বলিলে তিনি অস্বীকার করেন বিধায় তাহার বাড়ির সদর দরজার সহিত লটকাইয়া দিয়া রীতিমতভাবে জারি করিয়াছি। ততসময় মোকাবেলা ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন। নোটিশ সামিল ১৮/১১/১৫।” অথচ ১ নম্বর বিবাদি জোয়াহের আলী খান ১৯৯১ সালের ১০ নভেম্বর মারা যান। আর নোটিশ জারির সময় উপস্থিত মোকাবেলা ব্যক্তি হিসেবে ওই গ্রামের মো: আবদুর রাজ্জাক ও মো: খন্দকার জমশের আলীর নাম উল্লেখ করেন জারিকারক।
গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল এই মামলার ধার্য তারিখ। এ দিন মধুপুরের ৮ নম্বর আউশনারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কর্তৃক জোয়াহের আলীর মৃত্যুর সনদপত্র আদালতে দাখিল করেন বিবাদি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এম এ করিম মিঞা। সেই সনদপত্রে জোয়াহের আলী খানের মৃত্যুর তারিখ বিগত ১৯৯১ সালের ১০ নভেম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। একই সাথে তিনি নোটিশ জারিকারক সোহেল রানার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও আবেদন করেন। টাঙ্গাইলের ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের বিচারক সেকান্দার জুলকার নাঈন শুনানি শেষে জারিকারক সোহেল রানার বিরুদ্ধে শোকজের আদেশ দেন।
এ বিষয়ে মামলার বিবাদি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এম এ করিম মিঞা বলেন, জারিকারকেরা অসদুপায় অবলম্বন করে মৃত ব্যক্তির ওপরেও নোটিশ জারি দেখাচ্ছে। আবার অপর পক্ষের কাছ থেকে টাকা পেয়ে জীবিত ব্যক্তিকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি মর্মে নোটিশ গড় জারি দেখাচ্ছে। এতে মামলার দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হচ্ছে এবং পক্ষগণ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
টাঙ্গাইল জেলা অ্যাডভোকেট বার সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো: রফিকুল ইসলাম খান আলো বলেন, জনশ্রুতি আছে জারিকারকেরা ৯৯ পার্সেন্ট দুর্নীতিগ্রস্ত। তারা বাদি-বিবাদি উভয়ের বাড়িতে গিয়ে বকশিসের নামে টাকা নেয়, আর টাকা না পেলে মামলার ক্ষতি করার ভয় দেখায়। তারা পক্ষদ্বারা প্রভাবিত হয়ে নোটিশ গড় জারি দেখায়। আবার কখনো নোটিশ জারি করলেও সময়মতো আদালতের নথিতে শামিল করে না। এতে মামলার পক্ষগণ মারাত্মক হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এসব দুর্নীতিগ্রস্ত জারিকারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার।