শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:২১ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
শ্রীনিধি রেল স্টেশনে ঝুলছে তালা, যাত্রী দূর্ভোগ চরমে

শ্রীনিধি রেল স্টেশনে ঝুলছে তালা, যাত্রী দূর্ভোগ চরমে

স্বদেশ ডেস্ক:

স্টেশন মাষ্টার সংকটে তিন মাস ধরে তালা ঝুলছে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার শ্রীনিধি রেলওয়ে স্টেশনে। ফলে স্টেশনে আগত যাত্রীরা মানবেতর দুর্ভোগের শিকার বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ট্রেন কখন আসবে, কোথায় আছে, কোনো সমস্যায় ট্রেন আসবে কি আসবেনা তা এ স্টেশনের যাত্রীরা জানতে পারেনা। স্টেশন মাস্টার না থাকায় বিক্রি হয়না টিকেট, যাত্রী ওয়েটিং রুম ও পাবলিক টয়লেট তালাবদ্ধ থাকে।

সরেজমিনে জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথ এ উপজেলার ভূমির বুকের উপর দিয়ে বয়ে গেছে। ২৪ ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার এ উপজেলায় ২৭ কিঃ মিঃ রেলওয়ের মধ্যে মোট ছয়টি রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে। স্টেশনগুলো হলো-আমিরগঞ্জ, খানাবাড়ি, হাঁটুভাঙ্গা, মেথিকান্দা, শ্রীনিধি ও দৌলতকান্দি।

কিন্তু শ্রীনিধি স্টেশনে যাত্রা বিরতি করে লোকাল তিনটি ট্রেন- কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, ঈশা খাঁ ও সিলেট সুরমা মেইল ট্রেন। গত তিন মাস যাবত শ্রীনিধী রেলওয়ে স্টেশনে মাস্টার না থাকায় বন্ধ রয়েছে স্টেশনটি। এ অঞ্চলের প্রধানতম যানবাহন ট্রেন হওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে যাত্রীসেবা ও বিরুপ প্রভাব পড়েছে স্থানীয় ব্যবসা বাণিজ্যে।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্টেশন মাস্টার আক্তার হোসেনকে নরসিংদীর জিনারদী রেলওয়ে স্টেশনে বদলি করা হয়েছে । বর্তমানে শ্রীনিধী স্টেশনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। স্টেশন মাস্টার অফিস তালাবদ্ধ, বন্ধ টিকিট কাউন্টার, ওয়েটিং রুম, টয়লেটসহ সকল যাত্রী সেবা বঞ্চিত এ এলাকার ট্রেনযাত্রীরা।

সম্প্রতি দেখা গেছে, স্টেশনে তিনটি লোকাল ট্রেনের অপেক্ষায় প্রতিদিন নানান দুর্ভোগের শিকার হতে হয় যাত্রী সাধারনকে। ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা সারাদিন অপেক্ষা করে অবশেষে বাড়ী ফিরে যেতে হচ্ছে। মানুষের জীবনের মূল্যবান সময় এ স্টেশনে অপেক্ষার মাধ্যমে শেষ হয়। এ পরিস্থিতিতে যাত্রীরা বিকল্প রাস্তায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করে। ট্রেনের অপেক্ষায় বিরক্ত হয়ে অনেক যাত্রীকে স্টেশন ত্যাগ করতে দেখা যায়।

স্থানীয় কলা ব্যবসায়ী হবি মিয়ার সাথে কথা বলে জানাগেছে, এ এলাকার কলা, সবজি ট্রেনের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে বিক্রি করা হয়। ট্রেন কখন আসবে জানেন না হবির মতো আরও অনেক ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী।

এভাবেই ট্রেনের অপেক্ষায় প্ল্যাটফর্মের দাড়িঁয়ে থাকতে দেখা যায় বেশ কয়েকজন কলা ব্যবসায়ী ও সাধারন যাত্রীদের।
স্থানীয় ট্রেন যাত্রী সোহেল তাজ বলেন, শ্রীনিধি স্টেশনে যে তিনটি ট্রেন যাত্রা বিরতি করে সে ট্রেনগুলো নির্ধারিত দুই মিনিট এর কম সময় অবস্থান করে। ফলে যাত্রী ও মালামাল উঠানামা করতে করতে ট্রেনের চালক ও গার্ড এর ইচ্ছেমত ট্রেন চলে। শুধু তাই নয়, এক নাম্বার প্ল্যাটফর্মের পরিবর্তে দুই নাম্বার লাইনে ট্রেন থামায় স্টেশনটির প্লাট ফর্ম ভূমি থেকে ট্রেনের বগির উচ্চতা বেশি হওয়ায় ওঠা-নামায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় । এমনকি এতে ঘটছে ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণহানি সহ যাত্রীদের অঙ্গহানির ঘটনা।

এ এলাকার যাত্রী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য বন্ধ থাকা শ্রীনিধি স্টেশনে মাস্টার ও অন্যান্য কর্মচারি নিয়োগ দেওয়া সহ আন্তঃনগর ও তিতাস ট্রেন স্টপিজ চালু করার মাধ্যমে পুনঃরায় স্টেশনটি সচল করার জন্য রেল কর্তৃপক্ষের কাছে এলাকাবাসীর দাবী। এ উপজেলার মির্জাপুর,অলিপুরা, চান্দেরকান্দি ও রায়পুরা ইউনিয়নের চাকুরীজীবী, শিক্ষার্থী সহ বিভিন্ন পেশার মানুষ প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করে নিয়মিত।

পূর্বের স্টেশন মাস্টার আক্তার হোসেন এর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, তাকে শ্রীনিধী থেকে বদলি করায় তিনি এখন নরসিংদীর জিনারদী রেলওয়ে স্টেশনে দায়িত্ব পালন করছেন।

আমিরগঞ্জ রেল স্টেশন মাস্টার গোলাম নবী ও নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার এটিএম মুছা বলেন, নতুন করে মাস্টার নিয়োগ না দেয়া পর্যন্ত এ দুর্ভোগ থেকে উত্তরণের কোন সম্ভাবনা নেই। তবে কিছুদিনের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ ব্যাপারে রায়পুরা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাজী আবদুল মোমেন বলেন, ট্রেন নির্ভর রায়পুরা উপজেলার মানুষ। তাই প্রতিটি স্টেশনে লোকাল ট্রেন এর পাশাপাশি আন্তঃনগর বিভিন্ন ট্রেন স্টাপিজ দেয়া হলে এ উপজেলার মানুষ উন্নত সেবা পাবে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে স্টেশনে মাস্টার নিয়োগ প্রদান করে স্টেশনটি সচল করার আবেদন করি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877