স্বদেশ ডেস্ক:
বহিষ্কারের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও বেপরোয়া মাঠের বিএনপি। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে ঘোষণা দেয় কেন্দ্র। কেন্দ্রের এ সিদ্ধান্ত অমান্য করলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। তবু মাঠ ছাড়তে নারাজ তৃণমূলের নেতারা। ৮ মে প্রথম ধাপে ১৫০ উপজেলায় ভোট। এর মধ্যে বিএনপির ৪৫ নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তৃণমূল নেতারা বলছেন, জাতীয় আর স্থানীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে তাঁদের জনপ্রিয়তা তুলে ধরার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকবেন। এতে বিএনপির অনেক নেতার সম্ভাবনা জেতার। এদিকে বিএনপির কেন্দ্র আশাবাদী মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ২২ এপ্রিলের আগেই সবাই ভোট থেকে সরে দাঁড়াবেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক জানান, কেউ যদি দলের নির্দেশনা অমান্য করেন তাহলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জানা গেছে, ইতোমধ্যে যাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাঁদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। বিএনপি এক সংবাদ বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না কারণ তারা ‘প্রহসনমূলক নির্বাচনে’ অংশ নিতে চায় না। সোমবার রাতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থা স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। ৮ মে থেকে চার ধাপে অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানদের সঙ্গে একাধিক ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
জানা যায়, নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্তে বিএনপির হাইকমান্ড অটল থাকলেও সারা দেশের নেতাদের অনেকে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যাঁরা বিগত সময়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন তাঁরা নির্দলীয় ব্যানারে প্রার্থী হবেন। এজন্য লন্ডন বা কেন্দ্রীয় নেতাদের সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় থাকছেন না। কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবদল সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে দলের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখার জন্য এবার তিনি চেয়ারম্যান পদে ভোট করছেন। একই উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলামের নামও চেয়ারম্যান পদে আলোচনায় রয়েছে। তিনি নিয়মিত এলাকায় মাঠ চষছেন। জানতে চাইলে বলেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না। বর্তমান সরকার অবৈধভাবে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। তাদের ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য তারেক রহমানের বার্তা শরিফুল আলমের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। এজন্য নেতা-কর্মীদের চাঙা রাখছি। সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমকেও সক্রিয় ও শক্তিশালী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি। জানা জায়, কুমিল্লা দক্ষিণে সাবেক এক সংসদ সদস্য উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ শাহিনুজ্জামান বলেন, নির্বাচনে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। বন্দর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল বলেন, উপজেলা নির্বাচন করব ইনশা আল্লাহ। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার দুবারের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা দেলোয়ার হোসেন ভূইয়া দুলাল বলেন, তৃণমূলের অনেক নেতাই নির্বাচন করতে আগ্রহী। বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পরপরই উপজেলা নির্বাচন বিএনপিকে অনেকটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। ঘোষণা দিয়ে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলে বিরোধীদের কাছ থেকে সরকারের ‘বৈধতা’ পাওয়ার বিষয়টি সামনে আসবে। মনে হতে পারে, সরকারকে মেনে নিয়েছে বিএনপি। এর সুযোগ নেবে সরকার। এ সুযোগ দিতে চায় না বিএনপি। এদিকে নির্বাচনে অংশ না নিলে মাঠপর্যায়ে জনপ্রতিনিধিত্বশীল নেতাদের ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
সামগ্রিক প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন ‘শান্তিপূর্ণ হবে না’ বলেই তাঁরা মনে করেন। ফলে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত তাঁরা আগে থেকেই নিয়ে রেখেছেন। বিএনপি এখনো সে সিদ্ধান্তেই অটল রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন শুরু হয়। বিএনপি ২০২১ সালের মার্চের পর থেকে সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি। বরং দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের অনেক নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করে। এর আগেও সিটি করপোরেশন বা ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। তা সত্ত্বেও দলটির তৃণমূলের অনেক নেতা অংশ নিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে দেড় শতাধিক প্রার্থী বিজয়ীও হয়েছেন।