মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন

ছাত্ররাজনীতি ইস্যুতে আলোচনায় বুয়েট

ছাত্ররাজনীতি ইস্যুতে আলোচনায় বুয়েট

স্বদেশ ডেস্ক

দেশের অন্যতম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয় (বুয়েট)। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর আবরার ফাহাদ হত্যাকা-ের পর প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এখানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। সর্বশেষ গত বুধবার মধ্যরাতে সদলবলে ছাত্রলীগের সভাপতি বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার জেরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ক্লাস বর্জনসহ ৬ দফা কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনে নামেন তারা; উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট ক্যাম্পাস। এরপর এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি চালুর দাবিতে উল্টো কর্মসূচি দেয় ছাত্রলীগ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের এমন পরস্পরবিরোধী অবস্থানের মধ্যে ছাত্ররাজনীতির পক্ষে-বিপক্ষে মন্তব্য করছেন রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই। সব মিলিয়ে ছাত্ররাজনীতি ইস্যুতে এখন জোর আলোচনায় বুয়েট।

ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা অসাংবিধানিক, মৌলিক অধিকার পরিপন্থি ও শিক্ষাবিরোধী সিদ্ধান্ত- এমন আখ্যা দিয়ে গতকাল রবিবার সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে বুয়েটে প্রবেশ করেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। ছাত্রলীগের নেতাদের ভাষ্য, আপাতদৃষ্টিতে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা হলেও এখানে বিভিন্ন সংগঠন ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চালু রেখেছে। এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষ্য, বুয়েটে জঙ্গিবাদ চালু আছে কিনা, তা তদন্তসাপেক্ষ। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিশিষ্টজনরা বলছেন, ছাত্ররাজনীতি চলতে পারে। তবে ছাত্ররাজনীতির মোড়কে দুর্বৃত্তায়ন কখনোই কাম্য নয়।

এ বিষয়ে গতকাল বুয়েটের উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, তখন (২০১৯ সালে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর) যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, সেই পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে (ছাত্ররাজনীতি বন্ধের) সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেটা যদি এখন পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে তাদের আবার উদ্যোগী হতে হবে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল দলীয় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার নামে বুয়েটকে জঙ্গি রাজনীতির কারখানায় পরিণত করার প্রমাণ পেলে সরকার ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, আবরার হত্যায় কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি। বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডে নেতাকর্মীদের দণ্ড হয়েছে, কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি। বুয়েটের ঘটনারও তদন্ত চলছে।

বুয়েটের ছাত্ররাজনীতি ইস্যুতে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সঙ্গে কথা হয় আমাদের সময়ের। তিনি বলেন, আবরার হত্যাকাণ্ডের পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনীতির ব্যাপারে একটা বিরূপ মানসিকতা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ড আর রাজনীতি একেবারেই ভিন্ন বিষয়। রাজনীতির সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের কোনো সম্পর্ক নেই। যারা রাজনীতির নামে হত্যাকাণ্ড করে তারা অপরাজনীতি করে। আমার মনে হয়, বুয়েটের শিক্ষার্থীরা অপরাজনীতির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। আমরা নিশ্চয়ই চাইব না যে, আমাদের শিক্ষার্থীরা রাজনীতিবিমুখ হোক। প্রত্যেকের রাজনীতি করার অধিকার আছে সেটা যেমন লক্ষ্য রাখা দরকার, আবার কোনোভাবেই যেন ক্যাম্পাসগুলোতে অপরাজনীতি না হয় সেটাও দেখা দরকার।

বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ আমাদের সময়কে বলেন, আমাদের একটা বিষয় বিশেষভাবে অনুধাবন করতে হবে- কেবল বিশ্বমানের শিক্ষা লাভ করেই আমরা আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারব। যখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অরাজকতা দেখি, নৈরাজ্য দেখি, ছাত্ররাজনীতির নামে অনেক অনেক খারাপ কাজ দেখি তখন মনটা কষ্টে ভরে ওঠে। তিনি বলেন, বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নানা কারণে বন্ধ আছে। যেখানে রাজনীতি চালু আছে সেখানে তো সুফল দেখছি না। যদিও আমাদের দেশের আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্ররাজনীতির ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

ঢাকসুর সাবেক ভিপি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডির) সভাপতি আ স ম আবদুর রব আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমাদের দেশে ছাত্ররাজনীতি অবশ্যই প্রয়োজন রাষ্ট্র, সমাজ ও জাতীয়তাবাদ বিকাশের স্বার্থে। কিন্তু তার পূর্বে সরকারের ছত্রছায়ায় সরকারের লাঠিয়াল বাহিনী বা দুর্বৃত্ত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘অবশ্যই ছাত্ররাজনীতি সবখানে থাকতে হবে। ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করাটা একেবারেই অন্যায়, অযৌক্তিক, আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। তবে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের কেউ ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতি করছে কিনা, সেটাও বের করা দরকার। তিনি বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে, সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সনি হত্যা থেকে শুরু করে আবরার হত্যাকাণ্ডে আমরা দেখেছি, যারা ক্ষমতায় থাকে তারা এসব ঘটনা ঘটায়। যথাসময়ে এসবের সুষ্ঠু বিচার হয় না। আমি বলব, বুয়েটে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে, দলবাজি বন্ধ করে, বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন সারাদেশে যে অপকর্ম করছে, সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কিন্তু ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে নয়।

ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার সাবেক নেতা, আওয়ামী লীগের বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর এমপি বলেন, বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি হবে না এটা যেমন মেনে নেওয়া যায় না, তেমনি ছাত্ররাজনীতির নামে দুর্বৃত্তায়নও মেনে নেওয়া যায় না।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877