বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ১১:০৯ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ফোর্বসের তালিকায় ৯ বাংলাদেশি বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা একসময় বিশ্বে রোল মডেল হবে চাহিদার চেয়ে ২৩ লাখ কোরবানির পশু বেশি আছে : মন্ত্রী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এডিপির সর্বোচ্চ ৩৮৮০৯ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে এলজিইডি বিদেশী সাহায্যপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দুবাইয়ে বিদেশীদের গোপন সম্পদের পাহাড়, তালিকায় ৩৯৪ বাংলাদেশীও সেলিম প্রধানকে জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিলের নির্দেশ বহাল ফের আটকে গেলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অর্থ ছাড় উপজেলা নির্বাচন জনগণের সাথে প্রতারণা করার নির্বাচন : রিজভী মালয়েশিয়ার হুমকি : হামাস নেতাদের সাথে আনোয়ারের ছবি ফেরাল ফেসবুক
গণবিরোধী সরকার জবাবদিহিতার ধার ধারে না

গণবিরোধী সরকার জবাবদিহিতার ধার ধারে না

স্বদেশ ডেস্খ:

আগামী মার্চে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম আবারো বৃদ্ধি করবে সরকার- এমন তথ্য জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, গণবিরোধী সরকার জবাবদিহিতার ধার ধারে না। এই অবৈধ সরকারের পক্ষে কোনো গণরায় নেই।

গত ৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচন জনগণকর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় জনগণের ওপর প্রতিশোধ নিতেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, দখলদার সরকারেরা ঐতিহ্যগতভাবেই নিপীড়ক হয়। জনগণকে শত্রুপক্ষ ভাবে। তাই ক্ষমতা দখলে রেখে একের পর এক জনগণের ওপর অত্যুগ্র মাত্রায় জুলুমের খড়গ নামিয়ে আনে। জনগণের প্রতি এই ঔদাসীন্য ও তাচ্ছিল্যভাব ক্ষমার অযোগ্য। জনজীবন দুর্বিষহ করে তুলতেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করছে সরকার। এই সিদ্ধান্ত হবে অতীব নিষ্ঠুর। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি হলে এর চেইন রিএকশনে জনসাধারনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। কৃষি শিল্প, কলকারখানা গভীর সঙ্কটে পড়বে। এমনিতেই বাজারে দ্রব্যমূল্যের দাম হু-হু করে বাড়ছে। মানুষ তার প্রয়োজনীয় খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। এরপর এই দাম বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের ওপর চরম আঘাত আনবে। মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষরা এমনিতেই কঠিন কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছে। দেশে ৮০ শতাংশ মানুষের আয় বাড়েনি। অনাহারে-অর্ধাহারে কোনোরকম জীবন কাটাচ্ছে। তার ওপর সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করে জনগণকে বিপদের মুখে ঠেলে দিবে।

তিনি বলেন, সামনে রমজান মাস, তার আগেই এই দাম বৃদ্ধি হবে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’য়ের মতো। উন্নয়নের নামে দেশ-বিদেশ থেকে ব্যাপকহারে ঋণ নিয়ে জনগণের ওপর বিপুল পরিমানে বাড়ানো হয়েছে ঋণের বোঝা। সরকারের হরিলুটের আর্থিক নীতির কারণে দেশের রাজকোষ প্রায় শূণ্য হয়ে পড়েছে। এখন ডলার সঙ্কটের কারণে কয়লা উৎপাদনের খরচ বাড়ার কথা বলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি সরকারের একটি অমানবিক খেলা বলে জনগণ মনে করে।

জনগণের প্রশ্ন, ডলারের রিজার্ভ গেলো কোথায়- এমন মন্তব্য করে রিজভী বলেন, উন্নয়নের ফানুস দেখিয়ে ডলার কারা আত্মসাৎ করেছে, কারা বিদেশে সম্পদ পাচার করেছে? অর্থ পাচার করেছে? বিশাল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে তা জনগণ জানে। এখন বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতে দাম বৃদ্ধি করা বিভিন্ন কায়দায় জনগণের রক্ত চুষে নেয়ার আরেকটি পৈশাচিক পন্থা।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দাম বৃদ্ধির উদ্যোগে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান রিজভী।

বিএনপির এই মুখপাত্র অভিযোগ করেন, গতকাল ছিল মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ওইদিনটি জাতির এক গৌরবউজ্জ্বল দিন। দিনটি আমাদের ভাষার অধিকার তথা মানুষের সহজাত মৌলিক মানবাধিকার আদায়ের এক মহিমান্বিত দিন। আগ্রাসী আধ্যিপত্যবাদী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে স্বজাতির রুখে দাঁড়ানোর দিন। বর্তমান শাসকগোষ্ঠী বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য অন্তপ্রাণ দেখালেও বাস্তবে দেশকে পরিণত করা হচ্ছে ভিনদেশী ভাষা ও সংস্কৃতির পরিচর্যা কেন্দ্র হিসেবে। আত্মনির্ভরশীলতার স্থলে পরনির্ভরশীলতাকে করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় নীতি। এখন ভারত থেকে কচুরমুখীও আমদানি করতে হয়। প্রকাশনা শিল্পকে ধ্বংস করে বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তক পর্যন্ত এখন ছেপে আসে ভারত থেকে। পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত অনেক প্রবন্ধ কবিতায় বানান ভুলে ভর্তি। বাংলাদেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের বাংলা ভাষার চর্চাকে ভুলিয়ে দেয়ার জন্য নানা কায়দায় পাশ্ববর্তী দেশের রাষ্ট্রভাষার চর্চাকে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে নিরন্তরভাবে। নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতির বদলে ব্যাপকভাবে ভিনদেশী ভাষা ও সংস্কৃতির প্রসার ঘটাতে তাদের গল্প, কবিতা ও কার্টুনের বইয়ের পাশাপাশি সিনেমা ও নাটকের ব্যাপক আমদানি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, সরকার বাংলাদেশের বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মূল্যবোধকে অগ্রাহ্য করে পাঠ্যপুস্তকে ভিনদেশী চেতনা ঢোকানো হয়েছে। কোমলমতি শিশুদের মনে জাতীয় ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য বাংলাদেশের কবি সাহ্যিতিকদের দেশাত্মবোধক যে সমস্ত গল্প, কবিতা এবং বরেণ্য জাতীয় নেতৃবৃন্দের জীবনী পাঠ্যপুস্তক থেকে ক্রমান্বয়ে বাদ দেয়া হয়েছে, দলীয় এবং ভিনদেশী সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের প্রভাবে। ইংরেজী ও হিন্দির মিশ্রনে বিকৃত বাংলা ভাষার চর্চায় এবং প্রযুক্তির বিকৃত ব্যবহার ও চর্চার ফলে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মৌলিক ভাষা ও সাংস্কৃতিক চেতনা। মাতৃভাষা, মাতৃভূমি ও দেশপ্রেম প্রকাশে কপটতা ও রাজনৈতিক শঠতা উৎসাহিত করা হচ্ছে সরকারিভাবে। বাংলাভাষার আন্তর্জাতিক মর্যাদা চাই, জাতিসঙ্ঘের দাফতরিক ভাষা বাংলা চাই ইত্যাদি সরকারি প্রোপাগান্ডা অব্যাহত রয়েছে। অথচ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়েও বাংলা ভাষা চর্চার কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি।

তিনি বলেন, শিক্ষানীতির কোনো মৌলিক কাঠামো গড়ে তোলা হয়নি। পাশের হার বাড়িয়ে দেয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। শিক্ষার্থী উত্তরপত্রে কিছু লিখুক আর না লিখুক, তাকে পাশ করানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে শিক্ষকদের। বলা হয়েছে, ফেল করানো যাবে না। অথচ পড়াশুনা করেই পাশ করতে হয়। শিশু শ্রেণী থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। একেকবার একেক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে হযবরল করা হয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থাকে স্কুলমুখি না করে কোচিং সেন্টার ও গাইড বইমুখি করা হয়েছে। সুতরাং শিক্ষা ব্যবস্থায় এহেন অরাজকতায় কখনোই বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধি ঘটবে না। একটি মেধাহীন জাতি তৈরি করার জন্য সরকারি ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, নির্বাচন যে সুষ্ঠু হয়নি এটা আজ প্রমাণিত। বিশ্ব মিডিয়াতে লেখালেখি হচ্ছে, এটি ভারতীয় প্রেসক্রিপশনে হয়েছে।

সম্প্রতি কিছু গণমাধ্যম তার মন্তব্য না নিয়ে প্রকাশ করেছে- এমন অভিযোগ করে রিজভী বলেন, গণমাধ্যম কর্মীরা স্বাধীনভাবে লিখবে। আমি আহবান করব, গণমাধ্যম কর্মীরা যা কিছুই লেখেন না কেন, আমার মন্তব্য দিলে অবশ্যই আমার কাছ থেকে মন্তব্য নিয়ে নিয়ে লিখবেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নুল আবদিন ফারুক, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, নির্বাহী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম তেনজিং, যুবদলের সাহিত্য ও প্রচার সম্পাদক মেহবুব মাসুম শান্ত প্রমুখ।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877