স্বদেশ ডেস্ক:
রাশিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা ও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক অ্যালেক্সি নাভালনির মৃতদেহ লুকিয়ে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার মুখপাত্র কিরা ইয়ারমিশ।নাভালনিকে হত্যার প্রমাণ গায়েব করতেই মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ তার।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যে কারাগারে নাভালনির মৃত্যু হয়েছে সেই পেনাল কারাগারে যান তার মা ৬৯ বছর বয়সী লুদমিলা। কিন্তু তাকে বলা হয়, নাভালনির মৃতদেহ কাছের শহর সালেখার্ডের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে মর্গে গিয়ে দেখা যায় সেটি বন্ধ।
নাভালনি কারাগারে বন্দী অবস্থায় মারা গেছেন বলে গত শুক্রবার রাতে খবর প্রকাশ করে দেশটির কারা কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনার পর বিবিসিকে কিরা ইয়ারমিশ বলেন, তাদের বিশ্বাস রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনই নাভালনিকে মেরে ফেলতে বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা নিশ্চিতভাবেই জানি এটা কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, এটা হত্যাকাণ্ড। তারা এখন হত্যার প্রমাণ লোপাট করতে চাইছে। যে কারণে তারা পরিবারের কাছে মৃতদেহ হস্তান্তর করছে না এবং এই কারণে তারা পরিবারের কাছ থেকে মৃতদেহ লুকিয়ে রেখেছে।’
‘অথচ রাশিয়ার আইনানুযায়ী কোনো কারাবন্দী মারা গেলে দুই দিনের মধ্যে তার মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করতে হয়’, যোগ করেন নাভালনির মুখপাত্র।
নাভালনির মৃত্যু ও তার মৃতদেহ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি পুতিন বা তার কার্যালয়।
এদিকে নাভালনির মৃত্যুর খবর নিয়ে শুরু থেকেই ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়। কারা কর্তৃপক্ষ এ নেতার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছু জানায়নি। শুধু জানায়, শুক্রবার তিনি হাঁটতে বের হয়েছিলেন। হাঁটা শেষে ফিরেই অসুস্থ বোধ করেন এবং অজ্ঞান হয়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকদের ডাকা হয় এবং বহু চেষ্টার পরও নাভালনির জ্ঞান আর ফেরেনি। পরে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শনিবার নাভালনির দল থেকেও তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়। বলা হয়, নাভালনির মা লুদমিলার কাছে কারাগার থেকে যে কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে সেখানে লেখা আছে, ১৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ২টা ১৭ মিনিটে নাভালনির মৃত্যু হয়।
আরও বলা হয়, পরীক্ষার জন্য নাভালনির মৃতদেহ তাকে যে কারাগারে রাখা হয়েছে সেখান থেকে কাছের শহর সালেখার্ডের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে নাভলনির মা ও তার আইনজীবী মৃতদেহ গ্রহণ করতে সালেখার্ডের মর্গে যান। কিন্তু সেটি বন্ধ ছিল।
প্রসঙ্গত, উগ্রপন্থায় উসকানি, অর্থায়ন এবং একটি উগ্রপন্থী সংগঠন প্রতিষ্ঠার অভিযোগে গত বছর অগাস্টে নাভালনিকে নতুন করে ১৯ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। সেই সাজাই খাটছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই ব্যাপকভাবে মনে করা হয়ে থাকে।
গত বছরের শেষ দিকে রাশিয়ার স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ইয়ামালো-নেনেতের আর্কটিক পেনাল কলোনিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নাভালনিকে। বন্দীদের ওপর নিষ্ঠুরতার জন্য কুখ্যাতি রয়েছে এই কারাগারের।