রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৩ অপরাহ্ন

সংরক্ষিত নারী আসন: আওয়ামী লীগে নতুন মুখের সম্ভাবনা

সংরক্ষিত নারী আসন: আওয়ামী লীগে নতুন মুখের সম্ভাবনা

স্বদেশ ডেস্ক

এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে নতুন সদস্যদের আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, তাদের দলের হয়ে ৩৫ থেকে ৪০ জন নারী নতুন করে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হতে পারেন। এদের মধ্যে দু-একজন মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন বলেও জানা গেছে।

মহিলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ও অন্যান্য পেশাজীবী সংগঠনের নারী নেত্রীরা রাজধানীর ধানমন্ডি কার্যালয়ে দলের নেতাদের কাছে তাদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দিচ্ছেন।

সংসদে ৩০০টি আসন ছাড়াও নারীদের জন্য ৫০টি সংরক্ষিত আসন রয়েছে। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২২৩ টি আসন পেয়েছে। এছাড়া ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৫৮ জনই আওয়ামী লীগের নেতা-সমর্থক।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে, দলটি স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের ভাগে পাওয়া সংরক্ষিত আসনগুলোতেও প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ২৮ জানুয়ারি, রোববার সব স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যকে গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সে সময় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সংরক্ষিত নারী আসনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের অন্তর্ভুক্তির ফলে এবার এই সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যের সংখ্যা কমবেশি ৪৭ জন হবে। একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মোট সংসদ সদস্য ছিলেন ৪৩ জন।

সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বাছাই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, বেশির ভাগ পুরোনো সংসদ সদস্য বাদ পড়বেন। তবে আওয়ামী লীগের ভাগ থেকে ১৪ দলের শরিকদের পছন্দের তিন থেকে চারজন নারীকে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য করার সম্ভাবনা রয়েছে।

ফেব্রুয়ারির শুরুতে সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন। এরপর আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা করে মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করবে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, সংরক্ষিত নারী আসন থেকে কাকে সংসদ সদস্য করা হবে তা নিয়ে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন শেষ হলে মন্ত্রিসভায় বেশ কিছু নতুন মুখ অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের ৪৩ জন সংসদ সদস্য ছিল। এদের মধ্যে খাদিজাতুল আনোয়ার, রুমানা আলী, সুলতানা নাদিরা এবং তাহমিনা বেগম ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আইনপ্রণেতা হন। বাকি ৩৯ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে কয়েকজনের ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া বাকিরা নতুন মুখ হবেন।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সংরক্ষিত নারী আসনে প্রার্থী দিতে বেশ কিছু বিষয় বিবেচনা করছে দলটি। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে যারা দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন তারা এখন এই আসনের জন্য বিবেচনাধীন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান ও আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন নাহার লাইলী। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ফরিদুন নাহার লাইলী দলীয় টিকিট পেয়েছিলেন কিন্তু জাতীয় পার্টির জন্য তার নির্বাচনী এলাকা ছেড়ে দেওয়ার দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।

এদিকে সেলিব্রিটি, লেখক ও শিল্পীদের মধ্য থেকে অন্তত দুজনকে সংরক্ষিত নারী আসনে স্থান দেওয়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রে লাকী ইনামসহ কয়েকজনের নাম আলোচনায় আছে বলে জানা গেছে।

দুই থেকে তিনজন আইনপ্রণেতা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী থেকেও আসতে পারেন। একাদশ জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন আরমা দত্ত, বাসন্তী চাকমা ও গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার। তাদের মধ্যে আরমা দত্ত আবারও থেকে যেতে পারেন।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র অনুযায়ী, নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আইনপ্রণেতা সাধারণত পার্টিতে তাদের পিতা বা স্বামীদের অবদানের কারণে দলীয় মনোনয়ন পান। বিশেষ করে ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে যারা এমএনএ (জাতীয় পরিষদের সদস্য) ছিলেন তাদের পরিবারের সদস্যরা অগ্রাধিকার পান। ১৯৭৫ সালের পর যারা দলে অবদান রেখেছেন তাদের পরিবারের সদস্যদেরও সংসদ সদস্য করা হবে। এছাড়া ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর যাদের তার পাশে পেয়েছিলেন তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নারী নেত্রীও সংসদে স্থান পাবেন।

গত সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে প্রতিনিধিত্ব না থাকা জেলাগুলো এবার অগ্রাধিকার পাবে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগের অনেক নারী নেত্রী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে দলীয় টিকিট পাননি। তাদের মধ্যে অনেকেই সংরক্ষিত নারী আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়ে সংসদে আসতে পারেন।

১৪ দলের শরিকদের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও জাতীয় পার্টি (জেপি) সমঝোতার মাধ্যমে ছয়টি আসন ভাগে পেয়েছিল। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র দুজন নির্বাচনে জয় পেয়েছেন।

আওয়ামী লীগের সূত্র জানিয়েছে, শরিকরা তাদের দুটি আসন দিয়ে সংরক্ষিত নারী আসনের ভাগ পাবে না। জোটের শরিকদের মধ্য থেকে আওয়ামী লীগের কোটায় ৩-৪ জনকে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য করা হতে পারে।

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া একবার টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কখনো সংসদ সদস্য হতে পারেননি। এবার আওয়ামী লীগ তাকে আসন সমঝোতার মাধ্যমে ছাড়ও দেয়নি। ফলে তার স্ত্রীকে সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য করার সম্ভাবনা রয়েছে।

জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর স্ত্রী আফরোজা হক গত সংসদের শেষের দিকে সংসদ সদস্য হন। এবার ইনু নির্বাচনে হেরে গেছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারও কোনো সমঝোতার আসন ভাগে পাননি। আওয়ামী লীগ তাকে সংরক্ষিত আসন থেকে সংসদ সদস্য করার আশ্বাস দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, এবার তাদের একজন বা দুজনকেই সংসদ সদস্য করা হতে পারে।

৭ জানুয়ারির নির্বাচনে জেপির আনোয়ার হোসেন মঞ্জু হেরে যান। তার স্ত্রী বা পরিবারের কোনো সদস্য সংরক্ষিত আসন থেকে সংসদ সদস্য হতে পারেন বলে আলোচনা চলছে।

এবারের নির্বাচনে জয়ী হন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তার স্ত্রী লুৎফুন নেছা খান সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। তাকে সংসদ সদস্য করা হবে নাকি অন্য কাউকে করা হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।

এদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেছেন, সংরক্ষিত নারী আসনে অনেক শ্রেণী-পেশার সমন্বয় থাকবে। তবে দলের জন্য অবদানকে সব কিছুর ঊর্ধ্বে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877