স্বদেশ ডেস্ক:
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বর্বরতার পূর্ণ সমর্থন দেওয়ায় সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ইতিমধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ শীর্ষ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আগামীকাল শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে তার প্রথম শুনানি।
ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংগঠন আল হাক এর মহাপরিচালক শাও জাবারিন মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া গাজায় এমন ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারতো না ইসরায়েল। বাইডেনকে উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘আর কত মানুষ মারা গেলে তিনি বলবেন, যথেষ্ট হয়েছে আর নয়, আর কত? ২০ লাখ? ১০ লাখ? সাত লাখ?’
গত বছরের ৭ অক্টোবর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েল অভিমুখে হাজার হাজার রকেট ছুড়ে মুক্তিকামী ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এতে ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন এক হাজার ৪০০ জন। এরপরেই গাজায় পাল্টা আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ২৫ হাজার ফিলিস্তিনি, আহত ৫০ হাজারেরও বেশি। হতাহতদের বেশিরভাগিই বেসামরিক।
এমন অবস্থায় বিশ্বজুড়ে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হচ্ছে। সম্ভাব্য গণহত্যার কথা বলেছে জাতিসংঘ। তবে এর মধ্যেই বাইডেন প্রশাসন কংগ্রেসের অনুমতি না নিয়েই ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রির সবুজ সংকেত দিয়েছে।
এতেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে আল-হকসহ তিনটি অধিকার গ্রুপ। গত বছর নভেম্বরে তারা বাইডেনসহ অন্যান্য মার্কিন নেতাদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় সমর্থনেরঅভিযোগ এনে মামলা করেছেন। ২৬ জানুয়ারি ক্যালিফোর্নিয়ার আদালতে প্রথম শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
আল-জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাতকারে জাবরিন বলেন, মার্কিন রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থন ছাড়া এমন কিছু সম্ভব ছিল না। তার পরোক্ষভাবে নয়, প্রত্যক্ষভাবে এই যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত।
নভেম্বরের মাঝামাঝি করা ওই মামলায় বলা হয়, বাইডেন প্রশাসন আন্তর্জাতিক ও জাতীয় আইন মেনে গণহত্যা প্রতিরোধে নিসজেদের দায়িত্বপালনে ব্যর্থ হয়েছে।
১৯৪৮ গণহত্যা সনদে স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে বলা হয়েছে, যুদ্ধের সময় গণহত্যা অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। গণহত্যা ঠেকানো সবার জন্য বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক আইন হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলায় বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনিরা যে গণহত্যার শিকার হতে পারে এমন আশঙ্কার ব্যাপারে অবগত ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলের ওপর প্রভাব বিস্তার করে এই গর্হিত অপরাধ ঠেকানোর সক্ষমতা ছিল তাদের।
মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। অভিযোগে দাবি করা হয়, তারা শুধু গণহত্যা ঠেকাতে ব্যর্থই হননি, বরং এর পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছেন।
মামলায় দাবি করা হয়, মার্কিন কর্মকর্তারা ইসরায়েলের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত ছিলেন। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইউভ গ্যাল্যান্তসহ একাধিক কর্মকর্তাদের বার্তায় ফিলিস্তিনিদের ধ্বংসের উদ্দেশ্য স্পষ্ট ছিল।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ফিলিস্তিনিদের গাজা ত্যাগ করতেই হবে।
সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল রাইটস (সিসিআর) এর সিনিয়র আইনজীবী ক্যাথরিন গালাঘার বলেন, ‘ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের এই মন্তব্যগুলো বিচ্ছিন্ন নয়। তারা বুঝে শুনেই মন্তব্য করেছেন এবং তা করে দেখাচ্ছেন। কিছু দেশ তখনই ইসরায়েলকে সতর্ক করতে পারতো। যুক্তরাষ্ট্র তেমন অবস্থানেই ছিল। কিন্তু তারা কিছু করেনি। বরং নিঃশর্ত সামরিক সহযোগিতা করে গেছে তারা। আর্থিক ও কূটনৈতিক সমর্থনও দিয়ে যাচ্ছে।’
গ্যালাঘার বলেন, গণহত্যা প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্র তাদের দায়িত্বপালনে ব্যর্থ হয়েছে। এখন আইনিভাবে তাদের কাঠগড়ায় মুখোমুখি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘গণহত্যায় তারা যেন আর কোনো সামরিক সহযোগিতা করতে না পারে সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।’
বাইডেন প্রশাসনের দাবি, এই মামলার কোনো ভিত্তি নেই। পররাষ্ট্র নীতি নির্বাহী বিভাগ ঠিক করে, আদালত নয়। তাই এই মামলা গ্রহণ করা উচিত নয়।
ইয়েল ইউনিভার্সিটির আইন বিষয়ক অধ্যাপক ওনা হাথওয়ে বলেন, এই দাবি ভিত্তিহীন। বিদেশে সামরিক বাহিনী ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই যুক্তি দাঁড় করান রাজনীতিবিদরা। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন যে রাজনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র গণহত্যা ঠেকানোর দায় এড়াতে পারে না।’
গ্যালাগার বলেন, ‘এটি সামরিক নীতি নির্ধারণের বিষয় নয়। আন্তর্জাতিক আইন মানা হয়েছে কি না এখানে সেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এই দায়ভার কেউ এড়াতে পারে না। মার্কিন প্রেসিডেন্টও না।’ তিনি বলেন, এখানো অনেকগলো আইনী ব্যাপার রয়েছে। সবকিছুর মূলে রয়েছে জীবন বাঁচানোর প্রচেষ্টা।
শাওন জাবারিন বলেন, তিনি আশাবাদী যে আদালত তাদের পক্ষে রায় দেবেন। তিনি বলেন, ‘এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যারা আইনে আস্থা রাখেন, তাদের বিশ্বাস সমুন্নত রাখার জন্যই এই রায় গুরুত্বপূর্ণ।’