সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১৮ পূর্বাহ্ন

স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে চোখ উপড়ে নির্মমভাবে হত্যা

স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে চোখ উপড়ে নির্মমভাবে হত্যা

স্বদেশ ডেস্ক:

ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহনের টিকিট কাউন্টারে চাকরি করতেন ফারুক। একই পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার নিজাম উদ্দিন। সন্তান অসুস্থ তাই চিকিৎসা করানোর জন্য নিজামের কাছে পাওনা টাকা চেয়ে চাপ দিলে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হন ফারুক। এ ঘটনায় পাঁচ ঘাতককে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মূল পরিকল্পনাকারী মো. নিজাম উদ্দিন (৩৬), মো. সোহাগ (৩৮),  মো. জহিরুল ইসলাম (৪৮),  মো. রনি হোসেন (২৩) ও  মো. বাদশা (২৩)। এ সময় হত্যায় ব্যবহৃত স্ক্রু ড্রাইভার ও লোহার রড উদ্ধার করা হয়।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার  পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নিজাম এবং ভুক্তভোগী ফারুক হোসেন একসঙ্গেই টঙ্গীর চেরাগআলী এলাকায় ঢাকা এক্সপ্রেস নামক একটি পরিবহনের কাউন্টারে কাজ করতেন। দীর্ঘ ৫-৬ বছরের পরিচয়ের সুবাদে তাদের মধ্যে প্রায়ই লেনদেন হতো। নিহত ফারুক তার পাওনা টাকা পেতে চাপ সৃষ্টি করায় নিজাম তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনার অংশ অনুযায়ী ঢাকা এক্সপ্রেসের একটি খালি বাসে ফারুক হোসেনকে তুলে নিয়ে পূর্বাচল ৩০০ ফিট এলাকায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে ফারুককে বাসে উঠানোর পর গ্রেপ্তারকৃত সোহাগ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তাকে গুরুতর আঘাত করে। এসময় বাদশাহ বাসের টুলবক্স থেকে স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে ফারুখের এক চোখ উপড়ে ফেলে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর ৩০০ ফিট থেকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের এশিয়ান হাইওয়ের পাশে রঘুরামপুর এলাকার রাস্তার পাশে ফারুকের লাশ ফেলে বাস নিয়ে লক্ষ্মীপুরের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যায় ঘাতকরা। গ্রেপ্তার এড়াতে তারা আত্মগোপনে চলে যায়।

 

ঘটনার বিবরণ দিয়ে কমান্ডার মঈন জানান, গত ৮ই জানুয়ারি নিজাম উদ্দিনের কাছে ফারুক পাওনা টাকা চাইলে তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। ফারুকের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে নিজাম তাকে উচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য গ্রেপ্তার সোহাগ, জহিরুল, রনি ও বাদশাসহ আরও কয়েক জনের সঙ্গে পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ওইদিনই রাত আনুমানিক সাড়ে ৭টায় নিজাম মোবাইলে ফোন করে ফারুককে টাকা নেয়ার জন্য কাউন্টারে আসতে বলে। ফারুক টাকা নিতে কাউন্টারে আসলে নিজামের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে  সোহাগ, জহিরুল, রনি ও বাদশা ভিকটিমকে মারধর করে বাসে তুলে নিয়ে যায়। এরপর তাকে হত্যা করে লাশ ফেলে পালিয়ে যায়। তিনি আরও জানান, গত ৯ই জানুয়ারি সকাল আনুমানিক ১০টায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের এশিয়ান হাইওয়ে রাস্তার পাশে একটি চোখ উপড়ানো অজ্ঞাতনামা মৃতদেহ দেখে স্থানীয় লোকজন নিকটস্থ র?্যাব ক্যাম্পকে অবহিত করে। র?্যাব-১ ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রাথমিকভাবে মৃতদেহের সঙ্গে থাকা মানিব্যাগে বিভিন্ন নথিপত্র এবং ওআইভিএস ডিভাইসের মাধ্যমে অজ্ঞাতনামা মৃতদেহটির নাম ও পরিচয় শনাক্ত করতে সক্ষম হয় এবং পরিচয় নিশ্চিত হয়। পরে ভিকটিমের মা বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ১১ই জানুয়ারি রাতে র?্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র?্যাব-১১’র সহায়তায় র?্যাব-১’র যৌথ আভিযানিক দল রাজধানীর উত্তরা, গাজীপুরের টঙ্গী এবং লক্ষ্মীপুরের রায়পুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জড়িত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে।

মঈন বলেন, ভুক্তভোগী ফারুক স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবার নিয়ে রাজধানীর তুরাগের বাউনিয়া এলাকায় বাস করতেন। তিনি গাজীপুরের টঙ্গী চেরাগআলী এলাকায় ঢাকা এক্সপ্রেস নামের একটি পরিবহনের টিকিট কাউন্টার ম্যান হিসেবে কাজ করতেন। টিকিট বিক্রির লভ্যাংশ দিয়েই নিজের ও পরিবারের খরচ চালাতেন। মূলহোতা নিজাম উদ্দিন ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহনে ৭ বছর ধরে কাউন্টার ম্যানেজার হিসেবে গাজীপুরের টঙ্গী চেরাগআলী বাসস্ট্যান্ডে চাকরি করতো। ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুরের সদর থানায় ১টি হত্যাচেষ্টার মামলা রয়েছে। বাদশা গাজীপুরের টঙ্গীতে একটি গ্রিল ওয়ার্কশপে কাজ করতো। তার সঙ্গে গ্রেপ্তার নিজাম উদ্দিন ও রনির পূর্ব পরিচয়ের সূত্রে সখ্যতা ছিল। এ ছাড়া গ্রেপ্তার রনি ঢাকা এক্সপ্রেস ও লাবিবা ক্লাসিক পরিবহনের টঙ্গী স্টেশনের কাউন্টার মালিক। সোহাগ ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহনে ১৭ বছর ধরে সুপারভাইজার হিসেবে চাকরি করতো। তার বিরুদ্ধেও ঝালকাঠি, রাজাপুর থানায় মারামারি সংক্রান্ত ১টি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার জহিরুল ইসলাম ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহনে ৪ বছর ধরে ড্রাইভার হিসেবে চাকরি করতো। তার বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুরের সদর থানায় ১টি মামলা রয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877