রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৩১ অপরাহ্ন

ফেসবুকে দেয়া পোস্টের কারণেই বুয়েট শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যা?

ফেসবুকে দেয়া পোস্টের কারণেই বুয়েট শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যা?

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নিহত শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। আর এরপর মধ্যরাতে নিজের আবাসিক হল শেরে বাংলা হলে পাওয়া যায় তার লাশ। আবরার সর্বশেষ শনিবার বিকেল ৫টা ৩২ মিনিটে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি সাম্প্রতিক বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে লিখেছেন।

ধারণা করা হচ্ছে- ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেয়া স্ট্যাটাসের কারণে তাকে শিবিরকর্মী সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বুয়েটের শেরে বাংলা হলের দ্বিতীয়তলা থেকে সোমবার ভোররাতে নিহত আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া বলে জানা গেছে।

যে ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে এত কথা, সেখানে কি লিখেছিলেন নিহত শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ? নয়া দিগন্ত অনলাইনের পাঠকদের সুবিধার্থে নিহত ফাহাদের সর্বশেষ ফেসবুক স্ট্যাটাস হুবহু তুলে ধরা হল-

‘১. ৪৭ এ দেশভাগের পর দেশের পশ্চিমাংশেে কোন সমুদ্রবন্দর ছিল না। তৎকালীন সরকার ৬ মাসের জন্য কলকাতা বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ করল। কিন্তু দাদারা নিজেদের রাস্তা নিজেদের মাপার পরামর্শ দিছিলো। বাধ্য হয়ে দুর্ভিক্ষ দমনে উদ্বোধনের আগেই মংলা বন্দর খুলে দেওয়া হয়েছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ ইন্ডিয়াকে সে মংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য হাত পাততে হচ্ছে।

২. কাবেরি নদীর পানি ছাড়াছাড়ি নিয়ে কানাড়ি আর তামিলদের কামড়াকামড়ি কয়েকবছর আগে শিরোনাম হয়েছিল। যে দেশের এক রাজ্যই অন্যকে পানি দিতে চাই না সেখানে আমরা বিনিময় ছাড়া দিনে দেড়লাখ কিউবিক মিটার পানি দিব।

৩. কয়েকবছর আগে নিজেদের সম্পদ রক্ষার দোহাই দিয়ে উত্তরভারত কয়লা-পাথর রপ্তানি বন্ধ করেছে অথচ আমরা তাদের গ্যাস দিব। যেখানে গ্যাসের অভাবে নিজেদের কারখানা বন্ধ করা লাগে সেখানে নিজের সম্পদ দিয়ে বন্ধুর বাতি জ্বালাব।

হয়তো এসুখের খোঁজেই কবি লিখেছেন-
“পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলি দাও,
তার মত সুখ কোথাও কি আছে
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।” #’

এদিকে পুলিশ ও সহপাঠী সূত্রে জানা গেছে, রোববার রাতে হলের কক্ষে ছিলেন আবরার। হল থেকে তাঁকে রাতে কোনো এক সময় বাইরে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর কে বা কারা তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে। সহপাঠীরা জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আবরার সক্রিয় ছিলেন। লেখালেখি করতেন। এ কারণে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করছে তাঁরা।

পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘আবরারের পায়ে ও ঊরুতে আঘাতের চিহ্ন ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আঘাতজনিত কারণে তাঁর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। আমরা সতর্কতার সঙ্গে তদন্ত করছি।’

হল প্রভোস্ট মো: জাফর ইকবাল খান বলেন, সোমবার ভোররাত পৌনে তিনটার দিকে খবর পাই এক শিক্ষার্থী হলের সামনে পড়ে আছে। কেন সে বাইরে গিয়েছিল, কী হয়েছিল, তা এখনো জানা যায়নি। তাৎক্ষণিকভাবে বুয়েটের চিকিৎসক দিয়ে তাঁকে পরীক্ষা করা হয়। ওই চিকিৎসক জানান তিনি বেঁচে নেই। পরে পুলিশকে খবর দিই। পুলিশ এসে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।

বুয়েটের চিকিৎসক মাশুরুক এলাহী বলেন, খবর পেয়ে সোমবার ভোররাত তিনটার সময় ঘটনাস্থলে আসি। একতলা ও দোতলার মাঝামাঝি জায়গাতে আবরারকে পড়ে থাকতে দেখি। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বুঝতে পারি ছেলেটি বেঁচে নেই। আবরারের মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আঘাতজনিত কারণে তিনি মারা গেছেন। সেই সম্ভাবনাই বেশি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877