স্বদেশ ডেস্ক:
বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ চলতি মাসেই শুরু হচ্ছে। ঝুঁকি এড়াতে সনাতন পদ্ধতির শাবল আর হাতুড়ি দিয়েই ভবনটি ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। ইতোমধ্যে ভবন ভাঙ্গতে ঠিকাদারি একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তির প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার অথবা বুধবার রাজউকের সাথে চুক্তি চূড়ান্ত করবে সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের এই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। চুক্তি সম্পাদনের পর চলতি অক্টোবরেই শুরু হবে ভবন ভাংার কাজ। তবে বড় ধরনের ঝুঁকি এড়াতে ‘কন্ট্রোলড ডেমোলিশন’ বা নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ পদ্ধতি বাদ দিয়ে সনাতন পদ্ধতির সেই শাবল আর হাতুড়ির মাধ্যমেই ১৫তলা ভবনটি ভেঙে ফেলার চুক্তি হচ্ছে।
রাজউক সূত্র জানায়, আদালতের রায়ের পর হাতিরঝিলে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ভবন ভাঙতে বিজিএমইএকে কয়েক দফা সময় দেয়া হয়। তারপরেও তারা ভবন ভাংতে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। পরে গত ১৬ এপ্রিল ভবনটি ভাঙতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয় রাজউক নিজেই। যদিও ওই সময়ের আগেই বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ তাদের অফিস উত্তরায় স্থানান্তর করে। কিন্তু ১৫তলা ভবনের অন্যান্য ফ্লোরে তখনো ভাড়া দেয়া বাইরের অনেক প্রতিষ্ঠানের অফিস ছিল। এ ছাড়া কোন পদ্ধতিতে ভবনটি ভাঙা হবে সেটি নিয়েও দোটানায় পড়ে রাজউক। পরে অবশ্য প্রাথমিকভাবে রাজউক সিদ্ধান্ত নেয় ‘কনট্রোলড ডেমোলিশন’ বা নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ পদ্ধতি ব্যবহারের। কিন্তু বড় ধরনের কম্পন বা ঝাঁকুনিতে আশপাশের বহুতল ভবনের বড় কোনো ক্ষতির আশঙ্কায় সেই পরিকল্পনা থেকেও শেষ পর্যন্ত সরে আসে রাজউক।
রাজউকের প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে জানান, আধুনিক পদ্ধতি তথা ‘কন্ট্রোলড ডেমোলিশন’ বা নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ পদ্ধতি ব্যবহার করে ভবন ভাঙা হলে আশপাশের এলাকাতেও বড় ধরনের একটি কম্পন বা ঝাঁকুনি সৃষ্টি হবে। এতে অন্যান্য বহুতল ভবনের বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া রাস্তার পাশের গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইনসহ অন্যান্য নাগরিক জরুরি সেবার যেসব লাইন রয়েছে সেগুলোরও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া কাওরান বাজারের মতো ব্যস্ত এলাকা এবং যেখানে বহু সুউচ্চ ভবন রয়েছে সেখানে এই ধরনের উচ্চমাত্রা বিস্ফোরণ পদ্ধতি ব্যবহার করাও নিরাপদ নয়। তাই সনাতন পদ্ধতি হাতুড়ি আর শাবলের মাধ্যমেই বিজিএমইএ ভবন ভাঙার সিদ্ধান্তই যুক্তিযুক্ত।
এ দিকে ভবনটি ভাঙার দায়িত্বে নিয়োজিত রাজউক হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক রায়হানুল ফেরদৌস এই প্রতিবেদককে জানান, বিজিএমইএ ভবন ভাঙার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে রাজউক। ভবন ভাঙার জন্য টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও চূড়ান্ত করা হয়েছে। সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান ভবন ভাঙার কাজটি করবে।
গত ৩ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন হাতিরঝিলের বিজিএমইএ ভবনে গিয়ে দেখা গেল সামনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। পাশের ছোট একটি ফটক দিয়ে ভেতরে গিয়ে দেখা গেল পুরো নিচতলায় ময়লা আবর্জনার স্তূপ, যেন কত আগের একটি পরিত্যক্ত ভবন এটি। এসবের মাঝেই নিচতলায় দু’জন পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের একজন শাখাওয়াত ও অন্যজন রুবেল। পুলিশের এই দুই সদস্য জানালেন, তারা প্রতি শিফটে তিনজন করে তিনটি শিফটে ৯ জন এখানে দায়িত্ব পালন করেন। উপরের সব ফ্লোরই এখন ফাঁকা। এই ভবনের বিদ্যুৎ, গ্যাস এমনকি পানির সংযোগও নেই। বাথরুমের মতো জরুরি কোনো কাজ সারতেও তাদের যেতে হয় পাশের কোনো ভবনে।
প্রসঙ্গত, গার্মেন্ট কারখানা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) নামেই মূলত এই ভবনটির নাম ‘বিজিএমইএ কমপ্লেক্স’। সর্বসাধারণের কাছে এটি বিজিএমইএ ভবন নামেই পরিচিত। রাজউকের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে হাতিরঝিল ও বেগুনবাড়ি খালের জলাশয়ের মাঝখানে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এ নিয়ে আদালতে মামলা হলে আদালত বিজিএমইএর নিজ খরচে ভবনটি ভাঙতে রায় দেয়। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ আপিল করলে ২০১৬ সালের ২ জুন সেটিও খারিজ হয়ে যায়।
পরে ২০১৭ সালের ৫ মার্চ আপিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা বিজিএমইএর আবেদনটিও খারিজ হয়ে যায়। এরপরও ভবন না ভাঙতে আদালতের কাছে বারবার সময় চায় বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। তবে সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২ এপ্রিল মুচলেকা দিয়ে ভবন ভাঙতে এক বছর সময় পায় তারা।
অবশ্য অনেক আগেই অর্থাৎ ১৯৯৮ সালে বিজিএমইএ তাদের প্রধান কার্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য সোনারগাঁও হোটেলের পাশে হাতিরঝিলের এ জায়গাটি রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবির কাছ থেকে পাঁচ কোটি ১৭ লাখ টাকায় কেনে। নির্মাণ শেষে ২০০৬ সালে ভবনটি উদ্বোধন করা হয়। ভবনের নিচেই প্রবেশ পথের বাম পাশে এখনো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়ার নামে ভিত্তিপ্রস্তরের ফলক লাগানো আছে।
অবৈধভাবে বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙার বিষয়ে গতকাল শনিবার রাজউকের চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদের সাথে নয়া দিগন্তের পক্ষ থেকে কয়েক দফায় তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।