রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৬:১৭ পূর্বাহ্ন

বাবার সম্পত্তিতে মেয়ের প্রাপ্য……?

বাবার সম্পত্তিতে মেয়ের প্রাপ্য……?

নাজনীন বেগম: বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমান অগ্রগতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের দৃশ্যমানতায় সার্বিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণও স্পষ্ট হচ্ছে। সবাইকে নিয়ে যদি প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা চলমান না থাকে তাহলে অনেকেই পেছনে পড়ে যেতে সময় লাগবে না। তবে বাংলাদেশ এখন আর তেমন দুঃসহ সামাজিক অবস্থানকে অতিক্রম করে সার্বজনীন সম্পৃক্ততার উন্নয়নের গতিধারা সবার কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। তেমন আলোকে অর্ধাংশ নারীও কোনভাবেই নির্দিষ্ট আলয়ে আটকে থাকার অবস্থায় নেই। নারীরা আজ শিক্ষার আলোকে আলোকিত হয়ে বিভিন্ন সময়োপযোগী কর্মক্ষেত্রে সম্পৃক্ত হচ্ছে। সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে ব্যর্থ হলে সামগ্রিক উন্নয়ন দৃষ্টির আড়ালেই থেকে যায়। ফলে এ কথা অনস্বীকার্য যে নারী আজ সফলতার সঙ্গে উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে তাদের অংশীদারিত্ব প্রমাণ করে যাচ্ছে। শিক্ষকতা, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং নতুন সময়ের আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির আঙিনায় তারা জোরালোভাবে নিজেদের সম্পৃক্ত করে যাচ্ছে। তার পরেও প্রশ্ন থেকে যায় গতানুগতিক সমাজ সংস্কারের সমস্ত অভিশাপ কি পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে সামাজিক অগ্রগতির সঙ্গে চৈতন্যের নবজাগরণের ঘাটতি পুরনো সব বিধি ব্যবস্থাকে অতিক্রম করে আজও কি অর্ধাংশ এই গোষ্ঠী বিভিন্ন মাত্রায় তাদের যৌক্তিক দাবি আর অধিকারকে নিজের আয়ত্তে আনতে পেরেছে? গ্রামনির্ভর বাংলাদেশ এখনও দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সমস্ত পুরনো আবর্জনাকে মুছে ফেলতে পুরোপুরি সফল হয়নি। গ্রামীণ সমাজ কাঠামোর গভীরে প্রোথিত পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতাকে কি সবাই জয় করতে পেরেছে? একেবারে অজ পাড়াগাঁ কিংবা প্রত্যন্ত অঞ্চলে অসহায়, পিছিয়ে পড়া নারীর সামাজিক অবস্থা কতখানি তাদের অনুকূলে তেমন চিত্রও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে সময় নিচ্ছে না। অতি সাধারণ ঘরের মেয়েরা বাল্যবিয়ের মতো প্রাচীন কুসংস্কারের আবর্তে পড়ার সংখ্যাও খুব কম নয়। বাল্যবিয়ে মানেই অকাল মাতৃত্ব এখনও কত কিশোরীর জীবন বিপন্ন করে দিচ্ছে তাও বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে উঠে আসছে। আর পণপ্রথার বলি তো হরহামেশাই অনেক সম্পন্ন ঘরের মেয়েদেরও রেহাই দিচ্ছে না। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা শুধু নির্বিত্ত হওয়ার কারণেই যে অসহায়ত্বকে মোকাবেলা করছে তা কিন্তু নয় অনেকে আবার সহায় সম্পদ থাকার জন্যও নিজের মেয়ের সর্বনাশ দেখতে হচ্ছে। অর্থাৎ সম্পদশালী পিতার আরও দুরবস্থা, যখন উপর্যুপরি মেয়ের জামাইয়ের অর্থ দাবির চাহিদা মেটাতে গিয়ে নিজেকে বিত্তহীন অবস্থায় দাঁড়াতে হয়। আবার এমন অসহায় কন্যারা শুধু যে যৌতুকের বলি হচ্ছে তা কিন্তু নয়, অনেকে আবার উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বাবার সম্পত্তি থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। হিন্দু আইনে মেয়েদের পিতৃ সম্পত্তির ওপর কোন অধিকারই থাকে না। বিয়ের সময় বাবা মেয়েকে তার সাধ্যমতো সবকিছু দিয়ে তাকে পরের বাড়িতে সংসার ধর্ম পালন করতে পাঠায়। ফলে তাদের তেমন কোন দাবিও থাকে না। কিন্তু ইসলামী আইনে মেয়েরা বাবার সম্পত্তি তাদের ভাইদের তুলনায় অর্ধেক পায় এবং সেটা তাদের আইনী অধিকারও। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের রক্ষণশীল মানসিকতায় অনেক পিতা মনে করেন মেয়েরা পরের বাড়িতে গিয়ে সংসার-ধর্ম পালন করে। সেখানেই তাদের বসতি, অধিকার, পাওনা-দাবি সবই।
সুতরাং বাবার সম্পত্তি মোটামুটি তার পুত্র-সন্তানদের জন্য থাকাই বাঞ্ছনীয়, শুধু তাই নয়, অনেক রক্ষণশীল বাবা ছেলেদের নামেই পুরো উইলটা করে যান তার সম্পত্তির। সবচেয়ে দুঃখজনক একজন মেয়ে জানেও না তার অধিকার কতখানি। প্রচলিত আইন কিভাবে সমস্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার পাশে দাঁড়াতে পারে। বাবার করে যাওয়া বিধানকে সর্বসম্মতিক্রমে মেনে নিয়ে সব কিছু থেকে সরেও দাঁড়ায়। আর অবিবেচক ও স্বার্থপর ভাইয়েরাও বোনকে তার ন্যায্য পাওনা থেকে দূরে সরিয়ে রেখে নিজেরাই সব আত্মসাত করে নেয়। গ্রামগঞ্জে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন দৃশ্য বিরল নয়। মেয়েরা জানেও না এখন এমন আইনও আছে যেখানে মেয়ের বিনা অনুমতিতে ভাইয়েরা বোনকে কোনভাবেই তার বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে পারবে না। বাবা ছেলেদের লিখে দিয়ে গেলেও মেয়ের অনুমতি ছাড়া সে সম্পত্তি ভোগ করা যাবে না। মেয়ের কোন আপত্তি নেই এই মর্মে আদালত থেকে ওয়ারিশ সার্টিফিকেট দাখিল করতে হবে। সুতরাং কোন মেয়ে যদি এই ধরনের সম্পত্তির অধিকার নিয়ে বিপন্নতার শিকার হয় তাহলে তাকে আইনের আশ্রয় নিতে হবে। উকিলের পরামর্শে আইনী কার্যবিধি সম্পন্ন করা ছাড়া ভাইয়েরা বাবার সম্পত্তি একতরফাভাবে দখল করতে পারবে না সম্পত্তি সমর্পণের ব্যাপারে তাদের পক্ষে উইল থাকলেও।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877