বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩০ অপরাহ্ন

আর ব্যাকফুটে খেলতে চায় না বিএনপি

আর ব্যাকফুটে খেলতে চায় না বিএনপি

স্বদেশ ডেস্ক:

নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে সরকারবিরোধী আন্দোলন টেনে চলছে বিএনপি। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা কর্মসূচিগুলোতে দলটির মূল ফোকাস ছিল নেতাকর্মীদের পাশাপাশি জনগণকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা, সরকারবিরোধী সব দলকে এক মেরুতে নিয়ে আসা এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবির পক্ষে দেশে বিদেশে জনমত তৈরি করা। বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলেছেন, তাদের এই লক্ষ্য সঠিক পথেই এগিয়েছে। এত দিন তারা ব্যাকফুটে থেকে ধীরে ধীরে ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছেন। এখন আর ব্যাকফুটে নয়, রাজপথ নিয়ন্ত্রণ করেই তারা সামনে এগোবেন। আগামী ২৮ অক্টোবর থেকে সেই ‘মহাযাত্রা’ শুরু হবে।

আগামী ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে জনতার ঢল নামানোর পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি । পথে পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে, হামলা করলে সেখানেই প্রতিরোধের চিন্তাও করছে দলটি। দলটির শীর্ষ কয়েকজন নেতা বলেছেন, সমাবেশে নেতাকর্মীর ঢল নামাতে চান তারা। ফলে নেতাকর্মীরা যেন সমাবেশে না আসতে পারেন, সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বাধা দেয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। এ ছাড়া পথে পথে বিএনপি নেতাকর্মীকে পুলিশি হয়রানি বা তাদের ওপর হামলাও হতে পারে। তাই সমাবেশে যোগ দিতে নেতাকর্মীরা বিভিন্ন কৌশলে সড়ক, রেল ও জলপথে আগেভাগেই ঢাকায় ঢুকছেন। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে তারা ঢাকায় আসছেন।

বগুড়ার গাবতলী পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, গাবতলী উপজেলা থেকে গত শনিবার রাতে শতাধিক নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকায় গেছেন। এখনো যাচ্ছেন। এ জেলা থেকে ঢাকা মহাসমাবেশে কমপক্ষে ৩০ হাজার নেতাকর্মীরা যাবেন বলে দাবি করছেন নেতারা।

খুলনা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এস এম মনিরুল হাসান বাপ্পী জানান, তারা ইতোমধ্যে প্রস্তুতি সভা করেছেন। জেলার ৯টি উপজেলা থেকে প্রায় চার হাজার নেতাকর্মী মহাসমাবেশে যোগ দেবে। তবে কোনো বাস ভাড়া করে নেতাকর্মীরা এক সাথে ঢাকায় যাবে না। নেতাকর্মীরা যে যার মতো সমাবেশের আগে ঢাকায় পৌঁছে যাবে। সমাবেশের আগের দিন বাস বন্ধ করে দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ঢাকায় আগত কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শুধু ঢাকা মহানগরেই নয়, সারা দেশে অভিযান চলছে। তাদের বেশির ভাগ নেতাকর্মী বাড়িছাড়া। মামলা না থাকলেও পুরনো মামলায় অজ্ঞাত আসামির তালিকায় তাদের অনেকে গ্রেফতার হয়েছেন। ঘরে থাকলেও বিপদ আর রাজপথে থাকলেও বিপদ। তাই বিপদকে মাথায় নিয়ে তারা রাস্তায় নেমেছেন। সামনের কয়েকদিনে আরো বাধা-বিপত্তি শুরু হবে। তারা জানান, এবারের মহাসমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য তারা বিভিন্ন কৌশল নিয়েছেন। প্রতিবার ঢাকায় কর্মসূচিতে আসার সময় যানবাহন বন্ধ থাকা, পথে পথে তল্লাশিসহ নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন তারা। সে কারণে এবার তারা মহাসমাবেশের আগেই ঢাকায় চলে আসেন। হোটেলে থাকলে সেখানে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আটক করে। সে কারণে বন্ধু-বান্ধব অথবা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপে গত ১৮ অক্টোবর জনসমাবেশ থেকে এই মহাসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই কর্মসূচি থেকে মহাযাত্রা শুরুর কথা বলেছিলেন তিনি। তার ওই ঘোষণার পর থেকেই সেদিন কি ঘটতে যাচ্ছে, কি ঘটবে তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- ওইদিন শুধু শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। সেখান থেকে পরবর্তি কর্মসূচি করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। দলটির অভিযোগ, বিএনপির এই কর্মসূচি ঘোষণার আগে থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। কর্মসূচি ঘোষণার পর সেটা আরো বেশিমাত্রা লাভ করেছে। গত ১৭ অক্টোবর থেকে সারা দেশে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৪৯টি মামলা করা হয়েছে। যাতে ১৩ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ছয় শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

ঢাকা মহানগরের নেতাকর্মীরা জানান, কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে তারা কৌশলে চলাফেরা করছেন। বাসাবাড়িতে যাচ্ছেন না। একেক দিন একেক জায়গায় ভবঘুরের মতো থাকছেন। একাধিক নেতাকর্মী এক জায়গায় জড়ো হচ্ছেন না। এর মধ্য দিয়েও মহাসমাবেশ সফল করতে দিন-রাত কাজ করছেন তারা। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। ওইদিন স্মরণকালের সবচেয়ে বড় গণজমায়েত করতে কাজ করছেন বলেও জানান তারা।

জানা গেছে, বিএনপির ঘোষিত মহাসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে ক্ষমতাসীন দল কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে, আবার অন্য দিকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরাও সেসব কাটিয়ে উঠতে কী কৌশল নিতে পারে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। যদিও দলের কেউ কেউ মনে করছেন- বৈশ্বিক চাপে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। আগের মতো এবারের মহাসমাবেশে সরকার বাধা দেবে না। তবে বেশির ভাগ নেতা মনে করছেন, পূজার ছুটির পর ধরপাকড় আরো বাড়বে। যারা নেতৃত্ব দিতে পারেন, যারা বেশি লোকসমাগম ঘটাবেন তাদেরকেই টার্গেট করা হয়েছে। তবে এসবে এবার আর তারা দমে যাবেন না। পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে এসেছে যে সরকার বাধা দিলেই তারা ঘরে ফিরে যাবেন, এমনটা এবার হবে না। ঢাকার মহাসমাবেশে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে যারা আসবেন, তাদের অনেকেই ফিরে যাবেন না। পরবর্তী কর্মসূচিতে তারা অংশ নেবেন। এর আগেও যুবদলের যুব সমাবেশ এবং বিএনপির জনসমাবেশে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতাকর্মীদের অনেকেই রয়ে গেছেন পরবর্তী কর্মসূচি বাস্তবায়নে।

নেতাকর্মীরা জানান, তাদের হারানোর কিছু নেই। বিগত ১৫ বছর ধরে তাদের নামে অনেক মামলা হয়েছে, অনেকবার কারাগারে গেছেন, হামলার শিকার হয়েছেন। নিজেদের ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক ও সামাজিক জীবন আজ ধ্বংসের মুখে। ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ। আয়-রোজগার নেই। এমন অবস্থায় এবার এই আন্দোলনকে তারা বাঁচা-মরার লড়াই হিসেবে নিয়েছেন। এবারো তারা সফল হতে না পারলে সারাজীবন কারাগারে কিংবা পালিয়ে বেড়াতে হবে। তাই নতুন জীবনের আশায় এবার নিজেদের সর্বোচ্চ ভূমিকা নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, তারা শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ করতে চান। সব ধরনের বাধা মোকাবেলায় বিকল্প কৌশলও ঠিক করে রাখা হয়েছে। যত বড় বাধাই আসুক, এবার কর্মসূচি সফল করতে নেতাকর্মীরা পিছু হটবেন না। কেন্দ্র থেকে যে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে, তা বাস্তবায়ন করবেন। তবে বাধা এলে এবার আর ছাড়া নয়, প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। নতুন করে ধরপাকড় ও মামলার ব্যাপারে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তবে মামলার বা গ্রেফতারের ভয় উপেক্ষা করে দলের কর্মসূচি বাস্তবায়নেরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অতীতে কর্মসূচি সফল করতে গিয়ে যেসব দুর্বলতা সামনে এসেছে, তা-ও তারা এবার বিবেচনায় রেখে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সভায় এ নির্দেশনা দিয়ে দলটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, গণতান্ত্রিক শক্তির মহাযাত্রা, গণবিরোধী শক্তির পতনের যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। ২৮ অক্টোবর থেকে ফ্যাসিবাদ পতনের চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলন শুরু হবে। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের এই আন্দোলনের সম্মুখভাগে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অতীত অভিজ্ঞতায় তারা দেখেছেন- বিএনপির কর্মসূচিতে সরকার যত বাধা দিয়েছে তত বেশি লোকসমাগম ঘটেছে। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর তাদের বিভাগীয় গণসমাবেশ বানচাল করতে সরকার হামলা করেছে, দলীয় কার্যালয় তচনছ করেছে, একজন কর্মীকে হত্যা করেছে। কিন্তু তাতে কি জনতার ঢল থামাতে পেরেছে? এবারো পারবে না। বরং আগের চেয়ে আরো অনেক বেশি জনস্রোত আসবে- সেটাকে আটকানোর সাধ্য সরকারের নেই।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877