স্বদেশ রিপোর্ট ॥ ইউএনজিএ সাইডলাইন বিজনেস সেমিনার ২০১৯: ইউএস-বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ইনভেস্টমেন্ট: রোল অব বাংলাদেশি আমেরিকানস’ শীর্ষক একটি সেমিনার আমেরিকা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এবং সেন্টার ফর এন আর বি’র উদ্যোগে নিউইয়র্কের লা গার্ডিয়া মরিয়ট হোটেলে বৃহঃবার সন্ধ্যায়, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ (নিউইয়র্ক সময় (বাংলাদেশ সময়: ২৭ সেপ্টেম্বর, সকাল) অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে বক্তারা বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের মেধা ও অর্থ বিনিয়োগের বিভিন্ন দিক আলোচনা করেন। তারা বলেন, যেহেতু বাংলাদেশ সরকার ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে চাইছে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা বাস্তবায়ন করতে চাইছে, সেহেতু একে বাস্তবায়নের কাজ ত্বরান্বিত করতে বাংলাদেশি আমেরিকানদের উচিত বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা। বক্তারা প্রচলিত রেমিটেন্স প্রবাহের বাইরেও মেধা ভিত্তিক রেমিটেন্সের ব্যাপারে ভাবার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। দেশে বিনিয়োগ করলে বাংলাদেশ এবং আমেরিকা উভয় দেশের কী কী সুবিধা রয়েছে তাও তুলে ধরেন বক্তারা।
অনুষ্ঠানসঞ্চালনার পাশাপাশি ও সেন্টার ফর এনআরবি’র পক্ষ থেকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারপারসন জনাব এম এস সেকিল চৌধুরী। প্রবাসীদের প্রতি সরকারের আরো যতনশীল হওয়া প্রয়োজন এমন ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, বর্তমানে ১৬ দশমিক ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেমিটেন্স প্রবাহের দেশ এখন বাংলাদেশ। তাই প্রবাসীদের দেশভিত্তিক স্বীকৃতির উদ্যোগ নেওয়া উচিত এখনই। যারা দেশের অর্থনীতির শিরা-উপ-শিরায় রক্তপ্রবাহ করছে তাদের কিছু পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আমেরিকা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক সংগঠন ইউএস চেম্বার অব কমার্সের সদস্য হিসেবে কার্যক্রম শুরু করায় অভিনন্দন জানান তিনি।
বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এসময় বলেন, “দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ছে। এখানে বিনিয়োগের মুনাফা অন্য দেশের তুলনায় বেশি। বাংলাদেশকে কেবল সাহায্যের জন্যই নয় বরং বেশি মুনাফার জন্যও নতুন বিনিয়োগ বাংলাদেশে আসতে পারে।” পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে, “বাংলাদেশ সবক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছে। তাই দেশের ইতিবাচক প্রচারে সকলের অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।”
বক্তৃতায় অংশ নিয়ে ‘বাংলাদেশে মঙ্গা নেই’ এমন দাবি করেনবাণিজ্যমন্ত্রী জনাব টিপু মুনশি। তিনি বলেন, “দেশ উন্নয়নের সোপানে অবস্থান করছে।”তার মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের বিদেশে ১ লাখ টন খাদ্য রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে এমন তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন যে, এর মাধ্যমেউপলব্ধি করা যায়- দেশ এখন খাদ্যে সত্যিকার অর্থেই স্বনির্ভর। প্রবাসীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের দিকে ফিরে তাকান। বর্তমান পৃথিবী বাণিজ্য যুদ্ধের পৃথিবী। এই সময়ে বাণিজ্যে দেশকে এগিয়ে রাখতে কাজ করুন। দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রবাসীদের সরকারি সহায়তারও আশ্বাস দেন এই মন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা জনাব সালমান ফজলুর রহমান বিনিয়োগ তথ্য উপস্থানকালে বলেন,“বিদেশি কোম্পানি বর্তমানে দেশীয় কোম্পানিগুলোকে দখল করছে। এই প্রবণতার ভাল দিক হলো- এটি এক ধরণের বৈদেশিক বিনিয়োগ।” নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনের কনসাল জেনারেল জনাবা সাদিয়া ফয়জুন্নেসা’র ‘পাওয়ার অব এ্যাটর্নির মাধ্যমে বিক্রি হওয়া সম্পত্তি’র টাকা কোথায় যাচ্ছে’ এমন প্রশ্নের জবাবে জনাব এফ রহমান বলেন, এভাবে মুদ্রা স্থানান্তর আসলে মুদ্রা পাচারের শামিল। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মানা উচিত। তবেএসময় তিনিকনসাল জেনারেলের উদ্বেগ স্বীকার করে বলেন যে, বিদেশে বাংলাদেশের বিনিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হওয়া সময়ের দাবি।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম বলেন, “দেশ বর্তমানে পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে চলেছে।বর্তমানে ৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ হচ্ছে বাংলাদেশে তার ৫২ বিলিয়নই বেসরকারি খাত থেকে এসেছে।” তিনি আরো জানান, “বেসরকারি খাতকে বিশেষ করে রপ্তানিমুখী উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, “দ্রুতই বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ৫০০০ মার্কিন ডলার ছাড়াবে।
স্বাগত বক্তব্যে আমেরিকা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী জনাব মো. লিটন আহমেদ সেমিনারটি আমেরিকা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সর যৌথভাবে আয়োজন করায় সেন্টার ফর এনআরবি’র প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, “আমেরিকা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সর পারস্পরিক বাণিজ্য প্রসারে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ উভয় দেশের দূতাবাসের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে।” তিনি বিশ্বাস করেন যে, অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে ও ব্যবসায় উন্নয়নে আমেরিকা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সর এমন একটি সংস্থা যেখানে বাণিজ্যের নতুন ধারণাসমূহ অংকুরিত হয়।
এছাড়া আলোচনায় অংশ নেন বনমন্ত্রী জনাব শাহাবুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি নিয়ে আমেরিকার নেতাদের মাথাব্যথা রয়েছে বলে খুব একটাপরিলক্ষিত হয় না।” অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি জলবায়ু ঝুঁকির ব্যপারে আমেরিকাবাসীকে সচেতন করতে প্রবাসীদের কাজ করার আহবান জানান তিনি।
এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক জনাব আবুল কালাম আজাদ বলেন,“৪র্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুতি গ্রহণ করে চলেছে। মেধাবীরা এগিয়ে আসলে বাংলাদেশ এ যাত্রায় পিছিয়ে পড়বে না। মেধাবীদের জন্য বাংলাদেশে এখন উচ্চ বেতনের চাকুরির ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। ট্যালেন্টেড হলে তারা দেশে কাজ করতে পারেন অথবা ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ সোস্যাইটির নেতা জনাব এ. আলী, প্রেসক্লাব সভাপতি আবু তাহের, এবিসিসি ডিরেক্টর আব্দুল কাদের মিয়া, এনওয়াই পিডি কর্মকর্তা জনাব হুমায়ুন কবির, বেসিস সভাপতি আলমাস কবির, ব্যাংকার ওয়াসেফ চৌধুরী, প্রিন্সটন আলফা ইউএসএ’র প্রতিষ্ঠাতা ড. শাকিল আহমেদ, অর্থনীতিবিদ ড. আহমেদ আল কবির, ওয়াশিংটন ডিসি’রবাংলাদেশ মিশনের মিনিস্টার (ইকনমিক)জনাব শাহাবুদ্দিন পাটোয়ারী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। তথ্য উপস্থাপন করেন এবিসিসি’র পরিচালক জনাব শেখ গালিব রহমান।এবিসিসি’র পক্ষ থেকে ভোট অব থ্যাংকস প্রদান করেন জনাব জেড রাসেল। জনাব তাশরিকুল ইসলাম নিরব অনুষ্ঠান পরিচালনায় সহায়তা করেন।