শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪৪ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ভূমি হারানোর আশঙ্কায় রাঙামাটির ১৫০ বাঙ্গালী পরিবার

ভূমি হারানোর আশঙ্কায় রাঙামাটির ১৫০ বাঙ্গালী পরিবার

স্বদেশ ডেস্ক:

বার বছর পূনর্বাসিত ১৫০ বাঙ্গালী পরিবারের ৩০০ একর জমির খাজনা নিচ্ছেন না রাঙ্গামাটির কাউখালীর ১০১ নম্বর ঘিলাছড়ি মৌজার হেডম্যান পূষ্পল কুসুম তালুকদার।

আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম হেডম্যান অ্যাসোসিয়েশনের নির্দেশে ওই এলাকার খাজনা নিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন এ মৌজা হেডম্যান। ফলে দেশের একজন বৈধ নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও রাষ্ট্রের সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে ঘিলাছড়ির দেড় শতাধিক পরিবার।

উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে ঘাগড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডজুড়ে ঘিলাছড়ি মিয়াপাড়া এলাকার অবস্থান। ১৯৭৯ সালে তৎকালীন সরকার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসব ভূমিহীনদের ঘিলাছড়ি মিয়াপাড়া পূনর্বাসন করে। ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত শান্তিবাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান অনেকে। এসব বাঙ্গালী পরিবারকে বিতাড়িত করতে এহেন কোনো নির্যাতন বাকি রাখেনি তৎকালীন শান্তিবাহিনী। গুলি, জালাও-পোড়াও ও পাশবিক নির্যাতন সইতে না পেরে ওই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে অনেক পরিবারকে। ৪৪ বছর বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে বর্তমানে টিকে আছে ১৫০ পরিবার। ২০০০ সালের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে ওই এলাকার পাহাড়ি-বাঙ্গালীর মাঝে সৃষ্ট বৈরী পরিবেশ কাটিয়ে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হতে থাকে। বসবাস করা বাঙ্গালী এলাকায় বর্তমানে ভুমি বিরোধ খুব একটা নেই বলে চলে।

বিরোধমুক্ত থাকার ফলে ১৯৮০ সাল থেকে ২০১১ সালের মার্চ পর্যন্ত ১০১ নম্বর ঘিলাছড়ি মৌজার তৎকালীন হেডম্যান জগদিশ চন্দ্র তালুকদার ঘিলাছড়ি মিয়াপাড়া এলাকায় বসবাসরত ১৫০ বাঙ্গালী পরিবারের ৩০০ একর জমির নিয়মিত খাজনা গ্রহণ করেন। জগদিশ চন্দ্র তালুকদারের বার্ধক্যজনিত কারণে ২০১১ সালের ২৫ এপ্রিল পিতার স্থলাভিসিক্ত হন ছেলে পুষ্পল কুসুম তালুকদার। বিপত্তির শুরু হয় তখন থেকেই। পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমক্রটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) মদদপুষ্ট কট্টর বাঙ্গালী বিদ্বেষী এ হেডম্যান দায়িত্ব গ্রহণের পর ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিগত ১২ বছর বাঙ্গালী অধ্যুষিত ১৫০ পরিবারের ৩০০ একর জমির খাজনা নেয়া বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ করেন ওই এলাকার মানুষ।

ততসময়ে খাজনা রশিদ দিয়ে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সেবা পাওয়ার বাধ্য বাধকতা না থাকায় খুব একটা সমস্যার মুখে পড়তে হয়নি পরিবারগুলোকে। বর্তমানে জমির খাজনা দিতে না পারায়, খাজনা রশিদের অভাবে ব্যাংক ঋণ, জমি ক্রয়-বিক্রয়সহ নানা জটিলতায় পড়তে হচ্ছে পরিবারগুলোকে। এমনকি হেডম্যান রিপোর্ট না পাওয়ায় ওয়ারিশান সূত্রে পৈত্রিক সম্পত্তি থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে অনেক পরিবার। ফলে একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অপরদিকে নানাবিধ ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে ভূমি হারানোর শঙ্কায় রয়েছে ১৫০ বাঙ্গালি পরিবার।

২০১২ সালে খাজনা প্রদান, জমি বিক্রয়ের মিউটেশনে সুপারিশ না দেয়ার অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসক বরাবর গণ স্বাক্ষর নিয়ে অভিযোগ দেয় ভুক্তভোগীরা। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ১৩ ডিসেম্বর তৎকালীন রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর কে এম সালাহউদ্দিন ভুক্তভোগীদের খাজনা আদায় ও জমি ক্রয়-বিক্রয়ের আবেদনে সুপারিশ প্রদানে অনিহাকে মৌজা হেডম্যান কার্যক্রমের পরিপন্থী উল্লেখ করে ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখের মধ্যে জবাব দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন। একই বিষয়ে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে তৎকালীন জেলা প্রশাসনের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর এ এস এম রিয়াদ হাসান গৌরব উভয় পক্ষকে শুনানির জন্য নোটিশ জারি করেন।

চিঠির পর শুনানির জন্য ধার্যকৃত তারিখে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত জবাব দেন হেডম্যান পুষ্পল। তাতে তিনি লিখেন, তার নিয়োগ পাওয়ার পূর্বে ২০০৪ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় সর্বশেষ তিন পার্বত্য জেলার ভূমি বন্দোবস্ত ও ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত নির্দেশনা থাকায় খাজনা আদায় থেকে বিরত আছেন।

সেখানে তিনি আরো লেখেন ভুক্তোভোগীদের পার্বত্য অঞ্চলের আইন, রীতি ও পদ্ধতি অনুসরণ না করে মৌজা হেডম্যানের সুপারিশ ব্যতিত বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়েছে।

২০১৩ সালের ১০ জানুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ অস্থায়ী বা অ-উপজাতীয়দের থেকে বিতর্কিত বা বিধি বহিভূতভাবে বন্দোবস্ত করা জমির মিউটেশনসহ খাজনা বা কর আদায় স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়ে সচিব, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, তিন পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসককে পাঠানো চিঠিকে মিউটেশনসহ খাজনা আদায় স্থগিত রাখার নির্দেশনা উল্লেখ করে মিউটেশনের সুপারিশ প্রদানসহ খাজনা বা কর আদায় করা সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করেন।

অথচ হেডম্যানদের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ উপজেলা ও জেলা প্রশাসন থেকে এ ধরনের খাজনা আদায় বা মিউটেশনে সুপারিশ না করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়নি বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। এছাড়াও উপজেলার অন্যান্য এলাকার সকল হেডম্যান নিয়মিতভাবেই পাহাড়ি-বাঙালি উভয় থেকে খাজনা আদায় করছেন। দিচ্ছেন মিউটেশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশও।

ঘিলাছড়ি ও মিয়াপাড়া এলাকার সমাজ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মজিবর রহমান ও সমাজ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন ও স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, হেডম্যান ক্ষমতার অপব্যবহার করে দীর্ঘ এক যুগ ধরে আমাদেরকে রাষ্ট্রের সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রেখেছেন। ১০ থেকে ১২ বছর আগে বাবা মারা গেলেও বাবার নামে থাকা জায়গা এখনো নিজেদের নামে আনতে পারিনি। হেডম্যানের সাথে বহুবার আলাপ করছি। হেডম্যান সাফ জানিয়ে দেন যে তার পক্ষে হেডম্যান রিপোর্ট দেয়া সম্ভব না। খাজনা দিতে চাইলে আঞ্চলিক পরিষদের দোহাই দিয়ে তাও নিচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ১০১ নম্বর ঘিলাছড়ি মৌজার হেডম্যান পুষ্পল কুসুম তালুকদার জানান, আঞ্চলিক পরিষদ হচ্ছে সরকারের একটা অংশ। ওটা তো সরকারের সাথে সম্পৃক্ত। পার্বত্য জেলার সকল হেডম্যানের আঞ্চলিক পরিষদ থেকে একটা নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। যার দরুণ বাঙ্গালিদের খাজনা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। সকল হেডম্যানের আঞ্চলিক পরিষদ এমন নির্দেশনা দিয়ে থাকলে উপজেলার অন্য হেডম্যানরা কিভাবে খাজনা নিচ্ছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দা সাদিয়া নূরীয়া জানান, আমারা বিষয়টি শুনেছি। তবে এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ করলে বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877