স্বদেশ ডেস্ক:
গ্রিসে বন্যায় অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেন্ট্রাল গ্রিসে শত শত গ্রামবাসী পানিবন্দী হয়ে রয়েছেন। হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ছাদ থেকে মানুষজনকে উদ্ধার করেছে। পাশাপাশি সেনা সদস্যরা রাবার বোটে করে উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
শনিবার পর্যন্ত সামরিক কর্মীরা সেন্ট্রাল গ্রিসের একাধিক গ্রামে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছেন। তিন মিটার গভীর পানিতে ডুবে আছে একাধিক গ্রাম। রাবার বোটে করে সামরিক কর্মীরা উদ্ধারকাজ চালিয়েছেন। কর্মকর্তারা শুক্রবার জানিয়েছেন, বিধ্বংসী বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দশে।
এথেন্স থেকে প্রায় ৩৩০ কিলোমিটার (২০৫ মাইল) উত্তরে থেসালি এলাকায় ১০টি লাশ মেলে। গ্রিক নাগরিক সুরক্ষামন্ত্রী ভ্যাসিলিস কিকিলিয়াসের মতে, চারজন ব্যক্তির দুর্যোগের ফলে নিখোঁজ হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।
ইতোমধ্যে, মোট এক হাজার ৭০০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ২৯৬ জনকে তাদের বাড়ি থেকে এয়ারলিফ্ট করে অর্থাৎ আকাশপথে উদ্ধার করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টেলিভিশন স্টেশনগুলোতে মানুষ ফোন করে জানিয়েছেন, শত শত জন এখনো একাধিক এলাকায় আটকা পড়ে রয়েছেন।
বন্যার ফলে ঘরবাড়ি ভেসে গেছে, সেতু ভেঙে পড়ে রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। থেসালির উর্বর এলাকায় বিপুল পরিমাণে ফসল নষ্ট হয়েছে।
সরকার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে
গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোটাকিস শুক্রবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে- তার সরকার বন্যা কবলিত অঞ্চলগুলিকে সহায়তা করার জন্য ‘মানবিকভাবে যা যা কিছু করা সম্ভব’, সেটাই করবে। তিনি বন্যাবিধ্বস্ত কার্দিৎসা অঞ্চলে সফর করেছেন।
তিনি বলেছেন, প্রথম কাজ হলো বিপদের মধ্যে থাকা সব মানুষকে উদ্ধার করা, বিশেষ করে যারা কয়েক দিন ধরে পানিবন্দী এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া গ্রামে বসবাস করছেন, তাদের উদ্ধার করতে হবে।
বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়া ভবন, বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের যত দ্রুত সম্ভব সহায়তা পাওয়া উচিত বলেও উল্লেখ করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা যেভাবে হোক, আর্থিক সহায়তা দেবো, তা জাতীয় বা ইউরোপীয় তহবিল যাই হোক।
ঝড় ড্যানিয়েলে বিধ্বস্ত এলাকা
গ্রিসের বন্যার ফলে উত্তরে একটি বিশাল দাবানল তৈরি হয়েছে। দেশের সবচেয়ে উষ্ণ গ্রীষ্মেরও সাক্ষী উত্তর গ্রিস। বিজ্ঞানীরা বলছেন যে- গ্রিস জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়া দেশগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে এবং অস্বাভাবিক দুর্যোগগুলো যেন সাধারণ হয়ে উঠছে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, ১৯৩০ সালে ঝড়ের ভয়াবহতার রেকর্ড রাখার পর থেকে এই ড্যানিয়েল গ্রিসে আঘাত হানা সবচেয়ে বিধ্বংসী ঝড়। এটা শুধু গ্রিস নয়, তুরস্ক এবং বুলগেরিয়াতেও প্রভাব ফেলেছে। প্রতিবেশী তুরস্ক ও বুলগেরিয়ায় এই সপ্তাহে ভয়াবহ বন্যায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
পৃথিবী উষ্ণ হওয়ার ফলে বায়ুমণ্ডলে আরো জলীয় বাষ্প থাকে যা বিশ্বের কিছু অংশে, বিশেষ করে এশিয়া, পশ্চিম ইউরোপ এবং ল্যাটিন আমেরিকাতে ভারী বৃষ্টিপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে।
নগরায়ন এবং ভূমি-ব্যবহার পরিকল্পনার মতো অন্যান্য কারণগুলির সাথে মিলে এই তীব্র বৃষ্টিপাতের ঘটনাগুলোই বন্যার জন্য দায়ী।