শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১২:১৩ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ফোর্বসের তালিকায় ৯ বাংলাদেশি বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা একসময় বিশ্বে রোল মডেল হবে চাহিদার চেয়ে ২৩ লাখ কোরবানির পশু বেশি আছে : মন্ত্রী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এডিপির সর্বোচ্চ ৩৮৮০৯ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে এলজিইডি বিদেশী সাহায্যপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দুবাইয়ে বিদেশীদের গোপন সম্পদের পাহাড়, তালিকায় ৩৯৪ বাংলাদেশীও সেলিম প্রধানকে জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিলের নির্দেশ বহাল ফের আটকে গেলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অর্থ ছাড় উপজেলা নির্বাচন জনগণের সাথে প্রতারণা করার নির্বাচন : রিজভী মালয়েশিয়ার হুমকি : হামাস নেতাদের সাথে আনোয়ারের ছবি ফেরাল ফেসবুক
ভারতের নূহর দাঙ্গায় বহু মুসলিম ও রোহিঙ্গা গ্রেফতার

ভারতের নূহর দাঙ্গায় বহু মুসলিম ও রোহিঙ্গা গ্রেফতার

স্বদেশ ডেস্ক:

ভারতের হরিয়ানাতে সাম্প্রতিক দাঙ্গা ও সহিংসতার পর বেছে বেছে শুধু একটি সম্প্রদায়ের লোকজনকেই আটক করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে।

রাজ্যের নূহ ও গুরগাঁওতে গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় এযাবত মোট ২০২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ৮০ জনকে ‘প্রিভেনটিভ ডিটেনশনে’ আটক করা হয়েছে বলে হরিয়ানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল ভিজ নিশ্চিত করেছেন।

যদিও এই গ্রেফতার ব্যক্তিদের ধর্মীয় পরিচয় সরকার প্রকাশ করেনি, তবে এদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই নূহ ও আশপাশের এলাকার মুসলিম বাসিন্দা বলে বিবিসি বিভিন্ন সূত্র মারফত নিশ্চিত হতে পেরেছে।

ধৃতদের মধ্যে নূহর কাছে তাউরুর একটি বস্তির বাসিন্দা দুই-তিন ডজন রোহিঙ্গা মুসলিমও রয়েছে। পুলিশ বলেছে, এই রোহিঙ্গারা দাঙ্গার দিন হিন্দুদের মিছিলে পাথর ছোঁড়ায় জড়িত ছিলেন।

এছাড়া নূহ ও মেওয়াট শহরের বিভিন্ন এলাকায় হানা দিয়ে পুলিশ শতাধিক মুসলিম যুবককে তুলে নিয়ে গেছে বলে জানা যাচ্ছে।

অন্যদিকে নূহর পাশের অভিজাত গুরগাঁওতে একটি মসজিদে হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত মাত্র চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে গুরগাঁও পুলিশ নিশ্চিত করেছে।

গত সোমবার (৩১ জুলাই) মধ্যরাতে বিপুল সংখ্যক জনতা ওই মসজিদে হামলা চালায় এবং মসজিদের ভারপ্রাপ্ত ইমাম সেই ঘটনায় নিহত হন।

এই দাঙ্গায় জড়িত সন্দেহে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের বিট্টু বজরঙ্গী নামে এক নেতাকে হরিয়ানা পুলিশ ফরিদাবাদ থেকে গ্রেফতার করেছিল – কিন্তু তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জামিন পেয়ে গেছেন।

অন্যদিকে, মোনু মানেসর নামে যে হিন্দুত্ববাদী নেতা ও ইউটিউবারকে কেন্দ্র করে নূহতে সহিংসতার সূত্রপাত হয়েছিল বলে অভিযোগ, পুলিশ এখনো তার বিরুদ্ধে কোনো এফআইআরই দায়ের করেনি।

এদিকে, গত বৃহস্পতিবার থেকে নূহতে বুলডোজার দিয়ে যে ‘অবৈধ স্থাপনা’ ভাঙার অভিযান শুরু হয়েছে তাতেও বেছে বেছে শুধু মুসলিম বাসিন্দাদেরই টার্গেট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। হিন্দু-অধ্যুষিত অভিজাত গুরগাঁও কিন্তু সেই অভিযান থেকেও ছাড় পেয়েছে।

তবে সোমবার (৭ আগস্ট) পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট তাদের এক নির্দেশে এই বুলডোজার অভিযান স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে।

রোহিঙ্গাদের ধরপাকড়
নূহ জেলার সদ্য দায়িত্ব পাওয়া পুলিশ প্রধান নরেন্দর বিজরানিয়া জানিয়েছেন, তাউরুতে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প থেকে তারা প্রায় ২৫-৩০ জন রোহিঙ্গা মুসলিমকে আটক করেছেন।

তিনি জানান, এই রোহিঙ্গারা হরিয়ানা সরকারের নগরোন্নয়ন বিভাগের জমি দখল করে সেখানে অবৈধভাবে শিবির স্থাপন করে বসবাস করছিলেন।

তবে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ৩১ জুলাই নূহতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মিছিলে পাথর ছোঁড়াতেও যুক্ত ছিল – পুলিশ তার প্রমাণ পেয়েছে বলেও দাবি করেন বিজরানিয়া।

নূহ ও তাউরুর বিভিন্ন বস্তিতে হাজার দুয়েকেরও বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করেন – তাদের বেশিরভাগেরই জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী সংস্থার জারি করা ‘শরণার্থী কার্ড’ও রয়েছে।

এই গরিব খেটে-খাওয়া মানুষগুলো কিছুতেই দাঙ্গাতে জড়াতে পারেন না বলে দাবি করেছে দিল্লিতে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সংগঠন।

ভারতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অধিকার আন্দোলনের সাথে যুক্ত আলি জোহর যেমন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘নূহতে এই রোহিঙ্গারা ক্ষেতে-খামারে বা ছোট দোকানে দিনমজুরি করে দিনে বড়জোর দুই-আড়াই শ’ টাকা রোজগার করেন।’

ভারতে যাদের অস্তিত্ত্ব ও বেঁচে থাকাটাই নড়বড়ে, তারা গিয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামায় জড়াবেন বা হিন্দুদের ধর্মীয় শোভাযাত্রায় পাথর ছুঁড়বেন – সেই অভিযোগ কতটা বিশ্বাস্য, এই প্রশ্নও তুলছেন আলি জোহর।

নূহর শিবির থেকে দিল্লিতে পালিয়ে আসা মুহাম্মদ আবদুল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গা যুবকও বিবিসিকে বলেছেন, শুধুমাত্র মুসলিম বলেই তাদের এভাবে পুলিশি হেনস্থা ও নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা এদেশে শরণার্থী, এখানকার হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সাথে আমাদের কোনো সম্পর্কই নেই – তবুও শুধু শুধু পুলিশ আমাদের হয়রানি করছে।’

মোনু মানেসর কোথায়?
নূহতে গত সোমবার ভিএইপির ধর্মীয় শোভাযাত্রায় মোনু মানেসর নামে একজন বিতর্কিত হিন্দুত্ববাদী নেতা যোগ দেবেন, এই খবরকে ঘিরেই এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়েছিল।

মোনু মানেসর নিজেও সোশ্যাল মিডিয়াতে ভিডিও পোস্ট করে জানিয়েছিলেন, তিনি ওই মিছিলে থাকবেন।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে জুনেই ও নাসির নামে লাগোয়া রাজস্থানের দুজন মুসলিম যুবককে গাড়িসহ জীবন্ত জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনায় ওই রাজ্যের পুলিশ মোনু মানেসরকে খুঁজছে – কিন্তু বিজেপিশাসিত হরিয়ানাতে তিনি প্রায় প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

নূহ ও মেওয়াটের মুসলিমরা তখন থেকেই প্রশ্ন তুলছেন, মোনু মানেসর কিভাবে আইনের নাগাল থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আর কিভাবেই তিনি মিছিলে যোগ দিতে পারেন?

মোনু মানেসর নিজেকে একজন ‘গোরক্ষক’ বলে পরিচয় দেন। কথিত গরু পাচারকারীদের গাড়িকে তিনি ও তার দলবল কিভাবে ধাওয়া করে শাস্তি দিয়ে থাকেন, সেই সব ভিডিও তিনি নিজের ইউটিউব চ্যানেলে নিয়মিত পোস্ট করে থাকেন।

গত বছরের অক্টোবরে এক লাখ সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা অতিক্রম করার পর ‘জনপ্রিয়’ এই ইউটিউবারকে গুগল ‘সিলভার প্লে বাটন অ্যাওয়ার্ড’ দিয়েও স্বীকৃতি জানিয়েছিল।

গত সোমবারের শোভাযাত্রায় ‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পরামর্শেই’ শেষ পর্যন্ত তিনি আর যোগ দেননি বলে মোনু মানেসর পরে জানিয়েছিলেন। তবে ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে।

সপ্তাহখানেক হয়ে গেল মোনু মানেসর আর প্রকাশ্যে আসছেন না।

মোনু মানেসরের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে কি না, এই প্রশ্নের জবাবে হরিয়ানা পুলিশের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ‘আপনারা যার কথা বলছেন, তিনি ঘটনার সময় সেখানে ছিলেন এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’

নূহর দাঙ্গায় যেসব এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, তার কোনোটিতেও মোনু মানেসরের নাম নেই।

সূত্র : বিবিসি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877