স্বদেশ ডেস্ক: গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি রপ্তানিতে ১০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা (ভর্তুকি) দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এছাড়া তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ১ শতাংশ হারে ভর্তুকি দেওয়া হবে। গত অর্থবছরের ৩৫টি খাতের সঙ্গে এই নতুন দুটি খাত যোগ করে পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা দেবে সরকার।
গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক রপ্তানির চারটি খাতে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ হারে ভর্তৃকি দেয়া হচ্ছে। এবার রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে অবশিষ্ট সব খাতে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ১ শতাংশ হারে রপ্তানি প্রণোদনা বা ভর্তুকি দেয়া হবে।
২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটেই এই ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। এজন্য বাজেটে অতিরিক্ত ২ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সে বিবেচনায় বলা যায়, এবার নগদ সহায়তা পাওয়া নতুন খাতের মধ্যে আসলে গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি (কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক্যাল হোম ও কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য) যোগ হয়েছে। দু-একটি ছাড়া সহায়তার হারের ক্ষেত্রেও খুব একটা হেরফের হয়নি। এক সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রপ্তানি বাণিজ্যকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে চলতি অর্থবছরে এই ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত জাহাজীকৃত পণ্য রপ্তানির বিপরীতে এই ভর্তুকি দেওয়া হবে। হাতে তৈরি পণ্য (হোগলা, খড়, আখের/নারিকেলের ছোবড়া, গাছের পাতা, খোল, গার্মেন্টসের ঝুট কাপড় ইত্যাদি) রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
গতবার সিনথেটিক ও ফেব্রিকসের মিশ্রণে তৈরি পাদুকা রপ্তানিতে ১৫ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হয়েছিল। এবার ভর্তুকির হার অপরিবর্তিত রেখে পণ্য তালিকায় ব্যাগ যোগ করা হয়েছে।
গতবার পেট বোতল-ফ্লেক্স রপ্তানির বিপরীতে ৫ শতাংশ ভর্তুকি দেয়া হয়েছিল। আবোর তা বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।
গতবারের মতো এবারও ১০ শতাংশ হারে যে সব খাতে ভর্তুকি দেওয়া হবে, সেগুলো হচ্ছে, ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্য, ফটোভোলটাইক মডিউল, মোটরসাইকেল, কেমিক্যাল পণ্য (ক্লোরিন, হাইড্রোক্লোরিক এসিড, কস্টিক সোডা ও হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড), রেজার ও রেজার ব্লেডস, সিরামিক দ্রব্য, টুপি, কাঁকড়া ও কুঁচে (হিমায়িত ও সফটসেল, পরিবেশ ও বন বিভাগের ছাড়পত্র গ্রহণ সাপেক্ষে) এবং গ্যালভানাইজড শিট/কোয়েলস।
অর্থাৎ কোনো রপ্তানিকারক এই নয়টির ১০০ টাকার পণ্য রপ্তানি করলে সরকারের কাছ থেকে ১০ টাকা নগদ সহায়তা পাবেন।
গতবারের মতো এবারও দেশীয় বস্ত্র খাতে শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র-ব্যাকের পরিবর্তে বিকল্প নগদ সহায়তা ৪ শতাংশ, বস্ত্র খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অতিরিক্ত সুবিধা ৪ শতাংশ, নতুন পণ্য বা বাজার সম্প্রসারণ সহায়তা (আমেরিকা, কানাডা ও ইইউ ছাড়া) ৪ শতাংশ, ইউরো অঞ্চলে বস্ত্র খাতে রপ্তানিকারকদের জন্য বিদ্যমান ৪ শতাংশের অতিরিক্ত বিশেষ সহায়তা ২ শতাংশ, কৃষিপণ্য ও প্রক্রিয়াজাত কৃষি পণ্যে ২০ শতাংশ, গরু-মহিষের নাড়ি-ভুঁড়ি, শিং ও রগ (হাড় ছাড়া) রপ্তানিতে ১০ শতাংশ, হালকা প্রকৌশল পণ্য রপ্তানিতে ১৫ শতাংশ, শতভাগ হালাল মাংস রপ্তানিতে ২০ শতাংশ, বরফ আচ্ছাদনের হারভেদে হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রপ্তানিতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হবে।
চামড়াজাত পণ্য ও আসবাব রপ্তানিতে ১৫ শতাংশ, জাহাজ, প্লাস্টিক পণ্য ও পেট বোতল- ফ্লেক্স রপ্তানিতে ১০ শতাংশ, শস্য ও শাকসবজির বীজ এবং পাটকাঠি থেকে উৎপাদিত কার্বন রপ্তানিতে ২০ শতাংশ, পাটজাত দ্রব্যাদি রপ্তানিতে ২০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ সহায়তা পাওয়া যাবে। আলু রপ্তানিতে ২০ শতাংশ, সাভারে চামড়া শিল্প নগরীতে স্থানান্তরিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে ক্রাস্ট ও ফিনিশড লেদার রপ্তানিতে ১০ শতাংশ এবং পাটজাত চূড়ান্ত দ্রব্য রপ্তানিতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হবে। একইসঙ্গে দেশে উৎপাদিত কাগজ ও কাগজ জাতীয় দ্রব্য রপ্তানিতে ১০ শতাংশ এবং আগর ও আতর রপ্তানিতে ২০ শতাংশ ভর্তুকির বিষয়টি অপরিবর্তিত আছে। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি, সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার, অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যালসে ইনগ্রিডিয়েন্টস (এপিআই), অ্যাকুমুলেটের ব্যাটারি রপ্তানিতে ভর্তুকি পাবেন রপ্তানিকারকরা।