সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ১১:১৯ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
৫ কোটি টাকা ও ৮ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার : যেভাবে খোঁজ পেয়েছিল র‌্যাব

৫ কোটি টাকা ও ৮ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার : যেভাবে খোঁজ পেয়েছিল র‌্যাব

স্বদেশ ডেস্ক:

রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনু ও তার ছোট ভাই দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়ার বস্তা বস্তা টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করেছে র্যাব। পুরান ঢাকার তিনটি বাসায় অভিযান চালিয়ে দুই ভাইয়ের প্রায় পাঁচ কোটি পাঁচ লাখ টাকা, ৭৩০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ৩ দফা অভিযান চালিয়ে এসব উদ্ধার করা হয়। তবে অভিযুক্ত এনামুল ও তার ভাই রূপনকে আটক করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কথিত রয়েছে অবৈধ ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর দুই ভাই গা ঢাকা দিয়েছেন। এর মধ্যে এনামুল চলে গেছেন থাইল্যান্ডে।

সূত্র জানায়, সকালে সূত্রাপুরের ৩১ নম্বর বানিয়ানগরে এনামুলের বাসায় অভিযান চালায় র্যাব-৩ সদস্যরা। এর আগের রাত থেকে বাড়িটি গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়। র্যাব সকালে অভিযানে বাড়িতে প্রবেশ করে ওই বাড়ির তৃতীয় ও পঞ্চমতলায় তিনটি ভল্ট পায়। পরে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ভল্ট তিনটি খুলে এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা ও আট কেজি বা ৭৩০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া যায়, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় চার কোটি টাকা। একই সময় বাসা থেকে পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

এরপর দ্বিতীয় অভিযান চালানো হয় আওয়ামী লীগ নেতা এনামুলের কর্মচারী আবুল কালাম আজাদের বাসায়। ওই বাসাতে পাওয়া যায় একটি ভল্ট; যা শুধু এক হাজার টাকার নোটে পূর্ণ ছিল। র্যাব জানায় ওই ভল্টে প্রায় দুই কোটি টাকা রয়েছে। একই সূত্র ধরে র্যাব সদস্যরা তৃতীয় অভিযান শুরু করে এনামুল হকের বন্ধু নারিন্দার শরৎগুপ্ত রোডের ২২/১ নম্বর বাড়িতে। এই বাড়িতে পাওয়া যায় এনামুলের টাকার ভল্ট। এই ভল্ট খুলে জব্দ করা হয় আরো প্রায় দুই কোটি টাকা। অভিযানের সময় বাড়িতে হারুনুর রশিদকে পাওয়া না গেলেও হারুনের স্ত্রী জানান, তারা এ টাকার ব্যাপারে কিছুই জানতেন না। কয়েক দিন আগে এনামুল এসে ভল্টটি তাদের বাসায় রেখে যান।

র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শফিউল্লাহ বুলবুল জানান, এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়ার ক্যাসিনোর ব্যবসা ছিল। তারা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের শেয়ারহোল্ডার। ক্যাসিনোর লাভের টাকা বাসায় নিয়ে রাখতেন। টাকা রাখলে বেশি জায়গা লাগে তাই স্বর্ণ কিনে সেগুলো ভল্টে রাখতেন। তিনি বলেন, র্যাবের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল যে কয়েক দিন আগে ইংলিশ রোডে একটি প্রতিষ্ঠানে পাঁচটি ভল্ট বানানোর অর্ডার দেন এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়া। সেই সূত্র ধরে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে র্যাব। একপর্যায়ে অনেকটা নিশ্চিত হয়ে এই অভিযান চালানো হয়। শফিউল্লাহ আরো বলেন, প্রথম অভিযানে তিনটি ভল্ট পাওয়া গেলেও বাকি দু’টি পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে ব্যাপক অনুসন্ধানের পর জানা যায়, আরো দু’টি ভল্ট এনামুলের কর্মচারী ও বন্ধুর বাড়িতে রাখা হয়েছে। এরপর সেখানে অভিযান চালিয়ে টাকা ভর্তি ভল্টগুলো পাওয়া যায়। প্রথম অভিযানে আমরা পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করি। দ্বিতীয় অভিযানে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়।

র্যাব কর্মকর্তা বলেন, তিনটি অভিযানে মোট পাঁচ কোটি পাঁচ লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে। আমাদের ধারণা, টাকাগুলো অবৈধ ক্যাসিনোর সাথে সম্পৃক্ত। তা ছাড়া এনামুলের ভাই রূপন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলো দিয়ে এনামুল ও রূপন ভয়ভীতি প্রদর্শন করত বলে র্যাবকে জানিয়েছে স্থানীয়রা। সূত্র জানায়, বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ক্যাসিনোতে অভিযান শুরু হওয়ার পর এনামুল তার অবৈধ টাকাগুলো ভল্টে ভরে নিজে থাইল্যান্ডে চলে গেছে। তার ছোট ভাইও এলাকায় নেই।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ক্যাসিনোতে অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার ফু-ওয়াং, পিয়াসী ও ড্রাগন বারে অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানে অবৈধ কিছু পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অথচ এর আগে পরিচালিত অভিযানে অবৈধ মাদক, ক্যাসিনো সরঞ্জাম, এমনকি অবৈধ অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়। গত রোববার আরামবাগ ক্রীড়া সঙ্ঘ, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানে চারটি ক্লাবেই ক্যাসিনোর সরঞ্জাম পাওয়া যায়।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর অবৈধ জুয়া ও ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে র্যাবের হাতে আটক হন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। পরে অস্ত্র ও মাদকের পৃথক দুই মামলায় তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গত শুক্রবার রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমকে আটক করে র্যাব। এ সময় বেশ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদকদ্রব্য ছাড়াও নগদ এক কোটি ৮০ লাখ টাকা, ১৬৫ কোটি টাকার বেশি এফডিআরের (স্থায়ী আমানত) নথি জব্দ করা হয়। এ ছাড়া শুক্রবার রাতে রাজধানীর কলাবাগান ক্রীড়াচক্র ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ক্লাবটির সভাপতি কৃষক লীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজকে গ্রেফতার করা হয়। জব্দ করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি ক্যাসিনোতে খেলার কয়েন, স্কোরবোর্ড ও ৫৭২ প্যাকেট তাস, আগ্নেয়াস্ত্র ও ইয়াবা। র্যাবের ধারণা, ক্লাবটিতে ক্যাসিনো ছিল। একই রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি ক্লাবেও অভিযান চালানো হয়। তবে ক্লাবটি বন্ধ থাকায় সেখানে থাকা বারটি সিলগালা করে দেন র্যাব সদস্যরা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877