স্বদেশ ডেস্ক:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া দুই আসামি মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) রাত ১০টা ১ মিনিটে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে বলে রাজশাহী জেলা কারাগার থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
এদিন রাত সোয়া ৯টার দিকে কারাগারের পেছনের দিকের গেট দিয়ে সিভিল সার্জন, জেলা প্রশাসনের গাড়িসহ চারটি গাড়ি ঢুকতে দেখা যায়। পরে রাত ১১টার দিকে এসব গাড়ি কারাগার ত্যাগ করে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি হলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের বরখাস্ত হওয়া সাবেক সহযোগী অধ্যাপক মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত অধ্যাপক এস তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হন অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ। দু’দিন পর ৩ ফেব্রুয়ারি রাবিতে তার কোয়ার্টারের বাসার পেছনের ম্যানহোল থেকে অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। ওইদিন রাতে তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় পুলিশ অধ্যাপক তাহেরের সহকর্মী সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও স্থানীয় জাহাঙ্গীর আলমসহ আটজনকে গ্রেফতার করে।
এরপর ৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতারদের মধ্যে তিনজন আদালতে জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে তারা বলেন, অধ্যাপক এস তাহের বিভাগের একাডেমিক কমিটির প্রধান ছিলেন। একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মহিউদ্দিন অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য কমিটির সুপারিশ চেয়ে আসছিলেন। কিন্তু গবেষণা জালিয়াতির কারণে অধ্যাপক তাহের তা দিতে অস্বীকার করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মহিউদ্দিন হত্যার পরিকল্পনা করেন।
বালিশ চাপা দিয়ে খুনের পর বাড়ির ভেতরে থাকা চটের বস্তায় ভরে অধ্যাপক তাহেরের লাশ বাসার পেছনে নেয়া হয়। লাশ গুমের জন্য জাহাঙ্গীরের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুলের স্ত্রীর ভাই আবদুস সালামকে ডেকে আনা হয়। তাদের সহায়তায় বাসার পেছনের ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে তাহেরের লাশ ফেলে দেয়া হয়।
২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেন।
সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম, তার ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর ভাই আব্দুস সালাম। তবে বিচারে খালাস পান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও জাহাঙ্গীরের বাবা আজিমুদ্দিন মুন্সি।
পরে সাজাপ্রাপ্তরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। আপিল বিভাগ মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের রায় বহাল রাখলেও নাজমুল আলম ও নাজমুলের স্ত্রীর ভাই আব্দুস সালামের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন করেন।
সর্বশেষ মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন। কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রায় ছয় মাস আগে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছিলেন তারা। সে আবেদন নাকচ করেন রাষ্ট্রপতি। এরপর সব প্রক্রিয়া শেষে বৃহস্পতিবার রাতে দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।