স্বদেশ ডেস্ক: ক্যাসিনো ও জুয়ার আখড়া বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা ধরা পড়লেও তাতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন না হয়ে বরং বাড়বে বলে মন্তব্য করে দলটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, দুর্নীতি ও অপকর্ম করে মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায় না বরং তার উল্টোটাই হয় বলে নেতাদের জানিয়ে আসছিলেন প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আর সেই দুর্নীতি ও অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে সোচ্চার হওয়ার ইঙ্গিত দিলেও নেতারা তা আঁচ করতে পারেননি। এরপরই ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বকে বাদ এবং সাম্প্রতিক ক্যাসিনোতে অভিযান। তিনি বলেন, আমি মনে করি যেটা করা হচ্ছে, এটা ঢেকে রাখলে লাভ হত না। অবৈধ ক্যাসিনো বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মধ্যে গতকাল রোববার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. রাজ্জাক বলেন, চাঁদাবাজি বন্ধে শেখ হাসিনা যে কতটা কঠোর, তা দলের ওই বৈঠকে থেকেও বুঝতে পারিনি। ওই বৈঠকে উনি একদিন আমাদের বলেছেন, আমরা অতটা বুঝতে পারিনি। দু’একটা সংগঠনের নামও বলেছেন।
ওখানে বলা হয়েছিল, একটি সংগঠন আপনার দীর্ঘায়ু কামনা করে ৩০ দিনের কর্মসূচি নিয়েছে। উনি শুনে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে বলেছিলেন, চাঁদাবাজি করে আমার দীর্ঘায়ু কামনা করলে কী লাভ হবে? মানুষ আমার জন্য বদ দোয়া করবে, আল্লাহও খুশি হবে না’। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আমি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বলেছি, কিছ কিছু মানুষ আমার নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম, দুর্নীতি, চাঁদাবাজিতে লিপ্ত। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। আমি কঠোর পরিশ্রম করি, মানুষের কল্যাণ-মঙ্গলের জন্য নিজেকে নিয়োজিত করেছি। আমি আমার পরিবারের বাবা-মাসহ ভাই-বোনদের হারিয়েছি। এত কঠোর পরিশ্রম করি বাংলার ১৬ কোটি মানুষের কল্যাণ, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য। সেগুলোকে যারা ম্লান করছে, তাদের সঙ্গে আর কোনো আপস নয়। যারা সীমা লঙ্ঘন করছে, অবশ্যই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বলবো তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যেতে।
এই অভিযান আওয়ামী লীগ কিংবা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করবে বলে মনে করেন কি না- এমন প্রশ্নে দলটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. রাজ্জাক বলেন, আমি মনে করি না ইমেজের কোনো ক্ষতি হবে। বরং আমাদের ভাবমূর্তি বাড়বে, মানুষের আস্থা বাড়বে। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ধুলাবালি, ময়লা, গন্ধ ঝাড়ু দিয়ে কার্পেটের নিচে যদি রেখে দেন, কেউ দেখবে না; তাতে কি ধুলাবালির অপকার থেকে আপনি রেহাই পাবেন? উট পাখি বালির মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে দিলেও তীব্র রোদ থেকে রেহাই পায় না।
দুর্নীতির অনেক অভিযানের মধ্যে এই অভিযান লোক দেখানো বলেও কেউ কেউ মনে করছেন- এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আই ওয়াশ করে তো বাংলাদেশের মানুষকে ধোঁকা দেওয়া যাবে না। দেশের মানুষ খুবই সচেতন।
টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সামনে বড় শুদ্ধি অভিযান চালাবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, অপেক্ষা করেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন নেত্রী; অবশ্যই। এ অভিযান চলমান থাকবে কি না- এমন প্রশ্নে বলেন, এটা চলমান, গতকালও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন।
অপকর্মে জড়িত ২৭ জন মন্ত্রী-এমপির তালিকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ড. রাজ্জাক সরাসরি উত্তর এড়িয়ে বলেন, কারও বিরুদ্ধে যদি ডেফিনিট কোনো প্রমাণ থাকে, অবশ্যই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। দুর্নীতি নির্মূলে সরকার সচেষ্ট। অনেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধেও দুদক তদন্ত করছে। দুর্নীতি বন্ধে সরকারি দপ্তরগুলো ডিজিটাইজেশনের বিষয়টি তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, দেশের যে উন্নয়ন হয়, তার ৮০ ভাগ খরচ হয় টেন্ডার ও প্রকিউরমেন্টের মাধ্যমে, সেখানেতো দুর্নীতির উৎস। সেই প্রকিউরমেন্ট ডিজিটালাইজড করেছি।
চলমান অভিযানে গ্রেফতার হওয়া জি কে শামীমের অনেক সরকারি কাজ পাওয়ার কথা জানালে তিনি বলেন, জাহাঙ্গীরনগর ইউনির্ভাসিটির কাজ ই-টেন্ডারিং এ হয়েছিল। এ কারণেই জাহাঙ্গীরনগরে সফল হয়নি। শামীমের কথা বলছেন, সিস্টেমগুলো শুরু হয়েছে, একটু হয়ত সময় লাগবে। সিস্টেমগুলো আমাদের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে।