স্বদেশ ডেস্ক: ভারতের ব্যাপক এলাকা খরার কবলে পড়তে পারে। এমনকি ভারতের যে এলাকাগুলো এতদিন ‘খরাপ্রবণ’ বলে চিহ্নিত হয়নি, সেসব অঞ্চলও এবার খরার কবলে পড়তে পারে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’ এবং ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ইসরো’র এক যৌথ পর্যবেক্ষণে এই অশনি সঙ্কেত দেওয়া হয়েছে।
গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় গত চার বছর ধরে গবেষণাটি চালানো হয়েছে । তার প্রথম পর্বটি সবে শেষ হয়েছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার’-এ গবেষণাপত্রটি ছাপা হয়েছে
অ্যারোসল দ্রুত ভারী করছে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
গরমকালে দক্ষিণ এশিয়ার বায়ুমণ্ডলে বিপুল পরিমাণে অ্যারোসল কণা জমা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, তার পরিমাণ উদ্বেগজনক ভাবে বেড়ে গেছে। ভারতসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বায়ুমণ্ডলে অ্যারোসলের স্তর গত চার বছরে এতটাই পুরু হয়ে গেছে যে, তা বায়ুমণ্ডলের একেবারে নীচের স্তর ট্রপোস্ফিয়ার থেকে পৌঁছে গেছে তার উপরের স্তর স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারেও। যেহেতু বিষাক্ত গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির নির্গমন থেকেই অ্যারোসলের জন্ম হয়, তাই অ্যারোসলের মাধ্যমে দূষণ কণা প্রচুর পরিমাণে পৌঁছে যাচ্ছে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারেও।
যে মেঘে বরফ কণা, সেখানেও দ্রুত বাড়ছে অ্যারোসল
দেখা গেছে, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে যে মেঘগুলিতে বরফ কণা মিশে থাকে, ওই অঞ্চলের তাপমাত্রা খুব কম হয় বলে, সেখানেও ঢুকে পড়েছে অ্যারোসল কণা। আর তাদের পরিমাণ, ঘনত্ব ও আকার উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে।
প্রশান্ত মহাসাগরে ‘এল নিনো’র দরুন গত বছরেই ভয়াবহ খরার কবলে পড়েছিল পশ্চিম ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা। নাসা, ইসরোর যৌথ গবেষণার ইঙ্গিত, বায়ুমণ্ডলে অ্যারোসলের স্তর অত্যন্ত পুরু হয়ে যাওয়ায় ভারতে এ বার সেই খরা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে চলেছে।
গবেষক, তিরুপতির ‘ন্যাশনাল অ্যাটমস্ফেরিক রিসার্চ ল্যাবরেটরি’ (এনএআরএল বা ‘নার্ল’)-র আবহাওয়া বিজ্ঞানী মুরলী বেঙ্কট রত্নম বলেন,
গবেষণার একটি ধাপ সবে শেষ হয়েছে। আমরা কাজ করেছি এশিয়ান ট্রপোপোজ অ্যারোসল লেয়ার বা ‘অ্যাটাল’ নিয়ে। বেলুনের মাধ্যমে কয়েকটি সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতিকে ট্রপোস্ফিয়ার ছাড়িয়ে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার পর্যন্ত পাঠিয়ে। বেলুনের মাধ্যমে এই পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হয়েছে বলে এই পদ্ধতিকে ‘ব্যাটাল’ ও বলা হয়।’’
গবেষণা বলছে, গাছপালা পোড়ানো ও কলকারখানা থেকে বেরিয়ে আসা বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়ায় ওই অ্যারোসল্স কণাদের জন্ম হয়। জীবাশ্ম জ্বালানির অতি ব্যবহারে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন উত্তরোত্তর বেড়ে যাওয়ায় বায়ুমণ্ডলে উদ্বেগজনক ভাবে বেড়ে গিয়েছে অ্যারোসল কণাদের পরিমাণ। তার ফলে, অ্যারোসলের স্তর ভীষণ পুরু হয়ে গিয়েছে। ট্রপোস্ফিয়ার ছাপিয়ে তা পৌঁছে গিয়েছ়ে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে।