শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৫ অপরাহ্ন

যেসব আমলে রঙিন হবে জুমার দিন

যেসব আমলে রঙিন হবে জুমার দিন

স্বদেশ ডেস্ক:

মানুষের মন-মনন অল্পতে অনেক কিছু পেতে চায়। বিশেষ করে যেগুলোর লাভ-লভ্যাংশ সরাসরি ধরা-ছোঁয়া যায় না। চোখে দেখা যায় না। সেগুলোর ক্ষেত্রে তো বনি আদম সময়-শ্রম ব্যয়ে কৃপণতার একেবারে শীর্ষে। তাই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুমিনদেরকে এমন কিছু সময় ও মুহূর্ত, দিন ও রাত, সপ্তাহ ও মাস দিয়েছেন যখন সে অল্প আমলে অনেক বেশি নেকি অর্জন করতে পারবে।

জুমার দিন হলো তার একটি। কারণ সপ্তাহের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাপূর্ণ দিন হলো জুমার দিন। জুমার দিনের ফজিলত সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। ফজিলতের কারণে জুমাবারকে সাপ্তাহিক ঈদের দিনও বলা হয় । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন―‘জুমার দিন সপ্তাহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত । (ইবনে মাজাহ : ১০৮৪)

জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি আমল-
১. গোসল করা।
২. উত্তম পোশাক পরিধান করা।
৩. সুগন্ধি ব্যবহার করা।
৪. মনোযোগের সঙ্গে খুতবা শোনা।

হাদিস শরিফে বিবৃত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন―‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে সুন্দর পোশাক পরিধান করবে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করবে, যদি তার কাছে থাকে। এরপর নামাজে আসে এবং অন্য মুসল্লিদের গায়ের ওপর দিয়ে টপকে সামনের দিকে না যায়। নির্ধারিত নামাজ আদায় করে। ইমাম খুতবার জন্য বের হওয়ার পর থেকে সালাম পর্যন্ত চুপ করে থাকে। তাহলে তার এই আমল পূর্ববর্তী জুমার দিন থেকে পরের জুমা পর্যন্ত সব সগিরা গুনাহর জন্য কাফ্ফারা হবে।’ (আবু দাউদ: ৩৪৩)

৫. দ্রুত মসজিদে যাওয়া : উত্তম আমল হচ্ছে দ্রুত মসজিদে যাওয়া। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন―জুমার দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতারা অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে আগে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। যে সবার আগে আসে সে ওই ব্যক্তির মতো যে একটি মোটাতাজা উট কোরবানি করে।

এরপর যে আসে সে ওই ব্যক্তির মতো একটি গাভি কুরবানি করে। এরপর আগমনকারী ব্যক্তি মুরগি দানকারীর মতো। তারপর ইমাম যখন বের হন তখন ফেরেশতাগণ তাদের লেখা বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগ সহকারে খুতবা শুনতে থাকেন। (সহিহ বুখারি : ৯২৯)

৬. সূরা কাহফ তেলাওয়াত : মর্যাদাপূর্ণ এই দিনের বিশেষ একটি আমল হচ্ছে সূরা কাহফ তেলাওয়াত করা।

হাদিস শরিফে বিবৃত হয়েছে, আবু সাঈদ খুদরি রাযি. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন―যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহফ পাঠ করবে তার জন্য দুই জুমা পর্যন্ত নূর উজ্জ্বল করা হবে। (সুনানে দারেমি: ৩৪০৭,আমালুল ইয়াওমী ওয়াললাইল : ৯৫২)

৭. সূরা কাহাফের শেষ দশ আয়াত পাঠ : হাদিসে বিবৃত হয়েছে, আবু দারদা রাযি. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন―‘যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা পাবে।’ (সহিহ মুসলিম : ৮০৯)

আরেক হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের শেষ ১০ আয়াত পড়বে, সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা পাবে।’ (মুসনাদে আহমদ : ৪৪৬/৬)

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের ১০ আয়াত পড়বে, সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা পাবে।’ –সুনানে তিরমিজি : ২৮৮৬

৮. বেশি বেশি দরুদ পাঠ: এই দিনের আরেকটি আমল হচ্ছে নবীজির ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা। হাদিস শরিফে বিবৃত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা বলেন― দিনসমূহের মধ্যে জুমার দিনই সর্বোত্তম। এই দিনে হজরত আদম আলাইহিস সাসামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনে শিঙায় ফুঁ দেয়া হবে। এই দিনে সব সৃষ্টিকে বেহুঁশ করা হবে। অতএব, তোমরা এই দিনে আমার ওপর অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করো। কেননা তোমাদের দরুদ আমার সম্মুখে পেশ করা হয়ে থাকে। (আবু দাউদ: ১০৪৭)

৯. দোয়ার প্রতি গুরুত্ব দেয়া : জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ একটি আমল হচ্ছে দোয়ার প্রতি মনোনিবেশ করা। হাদিস শরিফে এসেছে, জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাযি. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন―জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে একটি বিশেষ মুহূর্ত এমন আছে যে তখন কোনো মুমিন আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে যে দোয়া করবে আল্লাহ তা-ই কবুল করেন। (আবু দাউদ : ১০৪৮)

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের জুমার দিনের আমলগুলো করে নেকী অর্জনের তাওফিক দান করুন।

লেখক:

  • মুহাম্মাদ মিযানুর রহমান

মুহাদ্দিস: জামিয়া ইসলামিয়া নুরুল উলূম পান্থশালা, নরসিংদী

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877