মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০২:২৭ অপরাহ্ন

করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর ইঙ্গিত পরিকল্পনামন্ত্রীর

করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর ইঙ্গিত পরিকল্পনামন্ত্রীর

স্বদেশ ডেস্ক:

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ইঙ্গিত দিয়েছেন, আসছে বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা কিছুটা বাড়তে পারে। তবে সেটি সেটি কতটা বাড়তে বাড়ে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে তিনি কিছু বলেননি।

জীবনযাত্রার ব্যয় ব্যাপক বৃদ্ধির কারণে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের করদাতারা হিমশিম খাচ্ছেন।

এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন এবং অর্থনীতিবিদরা আসন্ন বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। বাংলাদেশে বর্তমানে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের জন্য কোন কর দিতে হয়না। অনেকে দাবি করছেন এটি যাতে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত করা হয়।

বৃহস্পতিবার বিবিসি প্রবাহ অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান স্বীকার করেন যে বর্তমান পরিস্থিতিতে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো দরকার। তবে সেটি কত হওয়া উচিত সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।

‘মূল্যস্ফীতির কারণে একটা গ্যাপ তৈরি হয়েছে। এটার ক্ষতিপূরণের জন্য হলেও তিন লাখ টাকার পরিমাণকে যদি বাড়িয়ে দেয়া হয়, মানুষ একটা স্পেস পাবে। তার আয়ে একটু সাশ্রয় হবে। আমি যতদূর জানি, এ বিষয়ে সরকার চিন্তা-ভাবনা করছে।’

করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর বিষয়টি আসছে বাজেটে দেখা যাবে?

এমন প্রশ্নে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করতি পারি, আপনি আশা করতে পারেন, এটাকে যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে।’

প্রতিবেশী দেশগুলোতে কেমন?
প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে করমুক্ত আয়সীমা বিভিন্ন রকম। ভারতে এটি তিন লাখ রুপি, পাকিস্তানে ৬ লাখ রুপি, শ্রীলঙ্কায় ১২ লাখ রুপি ও নেপালে ৪ লাখ রুপি।

এর মধ্যে ভারতে জীবনযাত্রার ব্যয় এবং মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে প্রায় সময় কর হারে নানা রকম পরিবর্তন আনা হয়।

বাংলাদেশে ২০১৫ সালের পর করমুক্ত আয়ের সীমায় পরিবর্তন এসেছে মাত্র এক বার। ২০২০ সালে সেটা আড়াই লাখ থেকে বৃদ্ধি করে তিন লাখ টাকা করা। এরপর গত তিন বছরে এটা আর বাড়ানো হয়নি।

চাকরিজীবীরা সহজ টার্গেট?
রাজস্ব বিভাগ এনবিআর’র হিসাবে, দেশে কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন সংখ্যা প্রায় ৮৭ লাখ। এর মধ্য গেলো অর্থবছরে রিটার্ন জমা পড়েছে প্রায় ৩২ লাখ।

কিন্তু এরমধ্যে চাকরিজীবীর সংখ্যা কত বা তাদের থেকে আদায় করা করের পরিমাণ বছরে কত তার কোনো সুনির্দিষ্ট হিসাব নেই এনবিআরের কাছে।

তবে এটা ঠিক ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের থেকে কর আদায় কমে গেলে সেটা কর আয়ে প্রভাব ফেলবে। ফলে সরকার আয়করের আওতা বাড়াতে আগ্রহী।

কিন্তু এতে করে কি চাকরিজীবীরাই সহজ টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা তেমনটাই মনে করেন। বলেন, ‘নিম্ন বা মধ্যম আয়ের করদাতারা তারা সাধারণত ফাঁকি দেন না। রাজস্ব বোর্ডের ক্ষেত্রে এটা বলা যেতে পারে চাকরিজীবীরা একটা নিরাপদ জায়গা যেখান থেকে কিছু কর আসবেই,’ বলেন অধ্যাপক বিদিশা।

তিনি বলেন, অনেক ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠানের বিশাল আয় আছে। কিন্তু সেই তুলনায় তারা যে টাক্স দিচ্ছেন সেটা সঙ্গতিপূর্ণ হচ্ছে কিনা, দেখতে হবে। কারা আয়করের বাইরে থেকে যাচ্ছে, সেটা দেখতে হবে।

বৃহস্পতিবার রাতে বিবিসি প্রবাহ অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রীও স্বীকার করেন, চাকরিজীবীদের কাছ থেকে সহজে কর আদায় করা যায়।

‘চাকরিজীবীরা ভিজিবল, লিস্টেড, তালিকাভুক্ত। সুতরাং আক্রমণই বলুন বা হাত বাড়ানোই বলুন – সেটা সহজ,’ বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

বড় বড় ব্যবসায়ীদের করের আওতায় আনতে সরকার ব্যর্থ কেন? এমন প্রশ্নে পরিকল্পনামন্ত্রী দাবি করেন, সরকার ব্যর্থ নয়, তবে কিছু সমস্যা আছে।

‘যাদের কথা বললেন, তারা তো লিস্টটেড নয়। তারা দৃষ্টির আড়ালে থাকে। তাদের ক্যাপাসিটি আছে তাদের আয়কে নানাভাবে স্প্রেড (বিন্যস্ত) করে আইনের ফাঁক-ফোঁকর ব্যবহার করে ট্যাক্সটাকে, পেইনটাকে কমানো।’

তিনি বলেন, আইন এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলো কৌশলে ব্যবহার করলে সুবিধা নেয়া সম্ভব। এ বিষয়টি বন্ধ করতে আইন সংস্কার করা প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ট্যাক্স নিয়ে ক্ষোভ
বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) গত বছর এক জরিপে জানায়, ঢাকায় চার সদস্যের পরিবারে মাছ-গোশতসহ শুধু খাবার খরচ ২২ হাজার টাকার বেশি।

এমন অবস্থায় চাকরিজীবীদের উপর করের হার কমিয়ে তাদের জীবনে স্বস্তি আনার কথা বলেছে সংগঠনটি।

করমুক্ত আয়সীমা মাত্র তিন লাখ টাকা হওয়ায় প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকার বেশি আয় হলেই একজন ব্যক্তি করের আওতায় আসবেন।

কিন্তু বাংলাদেশে জীবনযাত্রার ব্যয় যেভাবে বেড়েছে, তাতে করে ২৫ হাজার টাকা একটি পরিবারের খরচ চালানোর মতো যথেষ্ট নয়। সুতরাং প্রশ্ন উঠছে যারা ২৫ হাজার টাকার কিছু বেশি উপার্জন করবেন, তারা কিভাবে আয়কর দেবেন?

এক্ষেত্রে স্বল্প এবং মধ্যম আয়ের মানুষেরা বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। তাদেরই একজন ঢাকার বেসরকারি চাকরিজীবী শাফায়েতুল ইসলাম।

অফিসে বিভিন্ন ফি কাটার পর মাস শেষে হাতে বেতন পান প্রায় ৬৫ হাজার টাকা। তিনি জানান, এর পুরোটাই তার মাস শেষে খরচ হয়ে যায়।

গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, ইন্টারনেট ও ডিশবিলসহ বাড়ি ভাড়ার পেছনে তার ব্যয় ২৫ হাজার টাকা, খাবারের পেছনে ব্যয় ২২ হাজার, দুই সন্তানের পড়ালেখা ৮ হাজার।

বাকি যে ১০ হাজার টাকা থাকে সেটা দিয়েই তাকে যাতায়াত, চিকিৎসাসহ সংসারের অন্যান্য খরচ মেটাতে হয়। কখনো সম্ভব হয়, কখনো টাকার সংকটে পড়ে যান।

কিন্তু এর মধ্যেই বছর শেষে তাকে কর দিতে হচ্ছে প্রায় ৪৩ হাজার টাকা। কিছু রিবেট পেলেও এই ট্যাক্সের পরিমাণ নিয়ে ক্ষোভ আছে তার।

‘আমার মাসিক ব্যয়ের যে অবস্থা, তাতে করে এখন মাস শেষে হাতে কিছু থাকছে না। আমাকে যখন বছর শেষে অতিরিক্ত টাকাটা দিতে হচ্ছে, ওইটা আমার জন্য বার্ডেন হয়ে যাচ্ছে।’

শাফায়েতুল ইসলাম বলছে, এখন যে হারে ব্যয় বাড়ছে সে হারে বেতন বাড়েনি।

‘করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ কিংবা এর পরের যে ধাপগুলো আছে, সেখানে কর হার কম হলে আমার কর হয়তো একটু কম আসতো। যেটা আমার জন্য একটু কম বার্ডেন হতো, হয়তো এতে পরিবারটা আরেকটু স্বচ্ছন্দে চালাতে পারতাম।’

সূত্র : বিবিসি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877