স্বদেশ ডেস্ক:
রোহিঙ্গা ক্যাম্পজুড়েই এখন মিয়ানমারে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে। কিন্তু দুবারের ব্যর্থতার পরে এবারও প্রত্যাবাসন সফল হবে কিনা, তা নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে রয়েছে শঙ্কা।
টেকনাফের নেসার পার্ক এলাকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আবু শামার বাসাটি আর ১০টি ঘরের মতোই বাঁশের বেড়া আর ছাদে মোটা ক্যানভাস কাপড় দিয়ে তৈরি। ১০ ফুট বাই ১০ ফুট সেই ঘরের দরজার সামনে বসে সাথে কথা বলার সময় একটু পর পর আসা বাতাসে ঘরের ছাদ নড়াচড়া করছিল।
‘এখানে এভাবে থাকতে কষ্ট হয়, বাড়ির কথা মনে পড়ে’ – বলছিলেন আবু শামা। কিন্তু মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ যেসব কথা বলে তাদের নিয়ে যেতে চাইছে, তাতে তিনি যাবেন না।
আঞ্চলিক রোহিঙ্গা ভাষায় আবু শামা বলেন, ‘তারা আমাদের নিয়ে ক্যাম্পে রাখবে। সেখানে তারা এই রকম ছোট ছোট ঘর বানিয়েছে। আমাদের নাগরিকত্ব দেবে না, অতিথির মতো একটা কার্ড দেবে। সেখানে গেলে তো আমাদের সেই ক্যাম্পেই আটকে রাখা হবে।’
তিনি বলেন, ‘এখানে অন্য দেশে ক্যাম্পে আছি, কিন্তু নিজের দেশে গিয়েও কেন ক্যাম্পে থাকবো? তারা কোনো দিন আমাদের ঘরবাড়িতে যেতে দেবে, সেই বিশ্বাস হয় না।‘
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পরিবেশ দেখাতে বাংলাদেশ থেকে যে ২০ জনকে গত শুক্রবার মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে ছিলেন আবু শামাও।
সেখানে পরিবেশ ঘুরে দেখে তার কাছে স্বস্তিকর মনে হয়নি। কারণ তার মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে নিয়ে গিয়ে তাদের আবার আটকে রাখার একটা পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ পর্যায়ক্রমে জমি-জমা, নাগরিকত্ব দেয়ার যেসব কথা বলছে, তাতেও তিনি কোন ভরসা পাচ্ছেন না।
এমনকি তাকে নিজের ফেলে আসা গ্রামেও যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি। দূর থেকে তিনি শুধুমাত্র দেখতে পেয়েছেন যে একসময় যেখানে তার গ্রাম ছিল, সেই কাউয়ার বিল এখন ফাঁকা মাঠ- ঘাস-জঙ্গল গজিয়ে গিয়েছে।
একই রকম বক্তব্য মিয়ানমার ঘুরে আসা আরেকজন রহিমা বেগমেরও।
মাত্র ৩৫ বছর বয়সেই ১১ সন্তানের মা-হওয়া রহিমা বেগম বলছেন, ‘তারা যদি আমাদের নিয়ে ক্যাম্পেই রাখে, তাহলে তো আমরা এক ক্যাম্প থেকে আরেক ক্যাম্পে গিয়ে পড়লাম। এখানে তাও তো ভালো, কেউ ভয়ভীতি দেখায় না।‘
রহিমা বেগমের ছয় সন্তান মারা গেছে। জীবিতদের মধ্যে এক মেয়ে এখনো মিয়ানমারে রয়েছে, বাকি চারজন তার সাথেই থাকে। এদের সবাইকে নিয়ে তিনি ক্যাম্পের একটি কক্ষে থাকেন।
এই ছেলেমেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই তিনি মিয়ানমারে যেতে চান। কিন্তু সেজন্য তার রয়েছে আলাদা দাবি।
‘আমাকে আমার বাড়িতে যেতে দিক। আমাকে কোন রেশন, কোনো টাকাপয়সা দেয়া লাগবে না। আমাদের ঘরবাড়িও আমরাই তৈরি করে নেবো। খালি আমাদের সেই গ্রামে গিয়ে নিরাপদে বসবাসের সুযোগ দিক আর নাগরিকত্ব দিক, তাইলেই হবে,’- বলছেন রহিমা খাতুন।
মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপের ফ্র্যাংকপুরে তার একটি ছোট ভিটে-বাড়ি ছিল, বাড়িতে গাছপালা, গরু-ছাগল ছিল।
কিন্তু এখন সেখানে আর কোনো ঘরবাড়ি নেই। পুরো জায়গাটি জঙ্গলের মতো হয়ে রয়েছে বলে তিনি দেখতে পেয়েছেন।
বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর ২০ জন বাসিন্দা আর সাতজন সরকারি কর্মকর্তার একটি প্রতিনিধি দলকে গত ৫ মে মিয়ানমারে নিয়ে গিয়েছিল সেদেশের কর্তৃপক্ষ।
চীনের মধ্যস্থতায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের যে আলোচনা চলছে, সেই প্রত্যাবাসনের পরিবেশ দেখাতে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
মংডু শহর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে অনেকটা বাংলাদেশের গুচ্ছগ্রামের আদলে মডেল ভিলেজ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে চার হাজার রোহিঙ্গা থাকতে পারবে, এমন ১৫টি মডেল ভিলেজ তৈরি করা হচ্ছে।
এর মধ্যেই এরকম দুটি গ্রাম তৈরি করা হয়েছে, যা প্রতিনিধি দলকে দেখানো হয়।
প্রথমে ‘এনভিসি’, পরে নাগরিকত্ব- সন্তুষ্ট নয় রোহিঙ্গারা
মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রথমে তাদের ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট (এনভিসি) দেয়া হবে। পরবর্তীতে নাগরিকত্ব দেয়া হবে।
কিন্তু সেখানকার পরিবেশ সন্তুষ্ট করতে পারেনি রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলকে। ওই প্রতিনিধি দলের একাধিক সদস্যের সাথে কথা হয়েছে বিবিসি বাংলার।
তাদের সবার বক্তব্যে একটি মিল পাওয়া গেছে, সেটি হলো, তারা নাগরিকত্ব পাওয়ার নিশ্চয়তা ছাড়া মিয়ানমারে যেতে চান না।
শুরুতে ক্যাম্পে কিছুদিন রাখার যে পরিকল্পনা জানিয়েছে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ, তাতেও তাদের আপত্তি রয়েছে। তাদের দাবি, যাদের ফেরত নেয়া হবে, তাদের নিজ নিজ গ্রামেই থাকার সুযোগ দেয়া হোক।
মোহাম্মদ সলিম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘আমাদের গ্রামগুলোয় সেনাবাহিনী ও পুলিশের ব্যারাক, ফাঁড়ি ও চৌকি তৈরি করা হয়েছে। আর আমাদের থাকার জন্য কিছু জায়গায় ক্যাম্পের মতো করে শেড তৈরি করা হয়েছে। একটা রুম আর একটা টয়লেট। তারা যদি আমাদের সত্যিই নিয়ে যেতে চায়, তাহলে আমাদের গ্রামেই আমাদের থাকার সুযোগ করে দিক। আমাদের মেহমান করে না নিয়ে নাগরিকত্ব দিয়ে দিক।‘
তিনি বলছেন, যেভাবে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেটা থাকার মতো না। তার কাছ থেকে যারাই শুনেছেন, তারাও এভাবে যেতে রাজি না।
তিনি বলছেন, ২০১২ সালে মিয়ানমারের ভেতরে কিছু রোহিঙ্গাকে সেখানকার ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তারপর থেকে আজও তারা সেখানেই রয়েছে। আমরা গেলে যদি আমাদের এভাবে রেখে দেয়, তখন কী হবে?
কুতুপালং, উখিয়া, টেকনাফের ক্যাম্পগুলোয় এই তথ্যটি বেশ ছড়িয়ে পড়ছে।
আমার যাদের সাথেই কথা হয়েছে, তাদের বেশিরভাগই বলছেন, মিয়ানমারের ভেতরের রোহিঙ্গাদের তারা ক্যাম্পের মতো করে আটকে রাখছে, তাদের যদি সেভাবে আটকে রাখে, তখন তারা কী করবে, সেই দুশ্চিন্তা তাদের রয়েছে।
টেকনাফ এবং উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় দেখেছি, এখানে-ওখানে আড্ডা বা চায়ের দোকানে এই প্রত্যাবাসনের বিষয়টি নিয়েই কথা বলছিলেন সবাই।
এদের কেউ কেউ যেমন মিয়ানমারের এই প্রচেষ্টাকে লোকদেখানো আরেকটা প্রতারণা বলে বর্ণনা করছেন, আবার কেউ কেউ ফিরে যাওয়ার কথাও ভাবছেন।
ক্যাম্পের একটি অংশে গোল হয়ে বসে এই নিয়েই কথা বলছিলেন কয়েকজন।
প্রত্যাবাসনের পরিকল্পনা জানিয়ে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ যে পুস্তিকা দিয়েছে, সেটা পড়ে শোনাচ্ছিলেন ক্যাম্পের হেড মাঝি মোঃ মামুনুর।
প্রত্যাবাসন নিয়ে ক্যাম্পের লোকজনের মনোভাব প্রসঙ্গে তিনি বলছেন, ‘আমাদের মধ্যে মিয়ানমারে যাওয়া নিয়ে নানারকম মত আছে। যারা অনেক দিন ধরে এই দেশে আছে, নানারকম সুযোগসুবিধা পাচ্ছে, তারা যেতে চায় না।’
তিনি বলেন, ‘আবার অনেকেই আছে, যারা এইরকম ক্যাম্পে সারাজীবন কাটানোর চেয়ে নিজের দেশে ফিরে গিয়ে কিছু একটা করতে চায়।‘
তিনি বলছিলেন, সবাই এখন অপেক্ষা করছে, মিয়ানমারে প্রথম দলটি গিয়ে কেমন অভ্যর্থনা পায়, সেটি দেখার জন্য।
‘তাদের সাথে যদি ওরা ভালো ব্যবহার করে, তারা যদি নিরাপদে থাকে, তাহলে এখান থেকে অনেকেই ফিরে যাবে,’ তিনি বলছেন।
এরকমই একজন হোসেইন। ২০১৭ সালের অগাস্ট মাসে খুইন্নাপাড়ায় যখন মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী হামলা করে মানুষজনকে হত্যা করতে শুরু করেছিল, বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছিল, সেই সময় তিনি টানা পাঁচ দিন হেঁটে বাংলাদেশে এসে পৌঁছান। তার কানের পাশ দিয়ে গুলি চলে গিয়েছিল।
তারপরেও তিনি মিয়ানমারে ফিরে যেতে চান।
‘এখানে থেকে কি করবো? কতদিন এভাবে ক্যাম্পে পড়ে থাকবো? কাজ নেই, পরিচয় নাই, কোথাও যেতে পারি না। আমার ছেলে-মেয়েগুলো বড় হচ্ছে, ওদের ভবিষ্যৎ কি হবে? ওই খানে গেলে তাও নিজের দেশ, একটা পরিচয় হবে। কিছু একটা করে খেতে পারবো,’ বলছিলেন হোসাইন।
তিনি এর মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন, নাগরিকত্ব না দিলেও শুধু বসবাসের সুযোগ দিলেই তিনি মিয়ানমারে ফিরে যাবেন। এখন প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শেষ পর্যন্ত কী হয়, সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় ঘুরে এরকম অনেক পক্ষ বিপক্ষের মতামত পাওয়া গেল। কেউ কেউ নাগরিকত্ব, ভিটেমাটির অধিকার ছাড়া যেতে চান না, আবার কেউ কেউ কিছুটা নিশ্চয়তা পেলেই মিয়ানমারে ফিরে যেতে আগ্রহী।
সত্তর বছরের জুলেহা পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ছয় বছর আগে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি বলছেন, ‘আমি এখানে একদিনও থাকতে চাই না। কি হবে এই দেশে থেকে। মরণের আগে অন্তত দেশের ভিটায় মরতে চাই। কিন্তু ওরা কি সেই সুযোগ দেবে? সবাই যদি যায়, আমি দেশে ফিরে যাবো।’
তের বছর বয়সে ছয় দিন ধরে হেঁটে হাইন্দাপাড়া থেকে বাংলাদেশে এসেছিলেন মোঃ হারেছ। তিনি এখন ক্যাম্পে ছোটখাটো কাজ করেন।
তিনি বলছেন, ‘তারা শুধু আমাদের নিরাপত্তা দিক, আমাদের নিরাপদে বসবাসের সুযোগ করে দিক। তাহলে আমরা সবাই চলে যাবো। কিন্তু এখন ডেকে নিয়ে যদি আবার তাড়িয়ে দেয়, তখন কী হবে?’
উখিয়ার ইউনুস মাঝি বলছেন, ‘এর আগে দুইবার আমাদের তাড়িয়ে দিয়েছে। শেষবার মেরে কেটে ঘরবাড়িতে আগুন দিয়েছে। আবার গিয়ে আবার মারধর খেয়ে ফেরত আসতে চাই না। তারা যদি নিতেই চায়, অন্যসব জাতির মতো আমাদেরও সমান অধিকার দিয়ে, নাগরিকত্ব দিয়ে নিয়ে যাক।’
আশাবাদী বাংলাদেশের কর্মকর্তারা
মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার ব্যাপারে রোহিঙ্গাদের মধ্যে নানারকম মত থাকলেও বাংলাদেশের কর্মকর্তারা আশা করছেন, প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া এবার শুরু করা যাবে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) কমিশনার মিজানুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ’মিয়ানমারের সদিচ্ছা রয়েছে বলে আমরা দেখতে পেয়েছি। বাংলাদেশের কাছে রোহিঙ্গা সঙ্কটের একমাত্র সমাধান হচ্ছে প্রত্যাবাসন। আমরা চাই সেটা যেন টেকসই হয় এবং স্বেচ্ছামূলক হয়। আমরা সেই প্রত্যাবাসনটা শুরু করতে চাই,’ তিনি বলছেন।
প্রত্যাবাসনের পরের ধাপ নিয়ে আলোচনা করতে এ মাসের মাঝামাঝি মিয়ানমারের আরেকটি প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে। সেখানে প্রত্যাবাসন শুরুর তারিখ নির্ধারণ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানোর পর মিয়ানমারের সেই প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসবে। তারা এসে আবার রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলবে।
নাগরিকত্ব না দেয়া হলে এবং নিজ ভিটায় ফেরার সুযোগ না থাকলে মিয়ানমারে ফেরত না পাওয়ার যে কথা বলছে রোহিঙ্গারা, সেই প্রসঙ্গে তিনি বলছেন, ‘সেই জন্যই তো মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল এসে আবার রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলবে। তাদের আস্থা অর্জনের জন্য, তাদের যেসব বিষয়ে সংশয় রয়েছে, সেগুলো নিরসনের জন্য তারা কথা বলবে। না হলে তো তাদের আর আসার দরকার হতো না।’
‘রোহিঙ্গাদের যেসব বিষয় নিয়ে কনসার্ন আছে, আলোচনার মাধ্যমে সেগুলো সমাধান হয়ে যাবে’ – বলেন মিজানুর রহমান।
রোহিঙ্গাদের দাবির প্রসঙ্গে তিনি বলছেন, ‘যে সঙ্কট দীর্ঘদিন ধরে তৈরি হয়েছে, সেটা তো একদিনে সমাধান হবে না। তবে সেটার সমাধানের জন্যই তো এই প্রসেসটা শুরু হয়েছে। একটা প্রসেসের মাধ্যমেই আস্তে আস্তে সবকিছুর সমাধান হবে।‘
বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার কী কী করছে, সেগুলো রোহিঙ্গাদের সামনে তুলে ধরার জন্যই তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ নানারকম প্রস্তুতি নিয়েছে, রোহিঙ্গাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছে।
এখনো মিয়ানমারে যে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে, সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে, তাদের সাথেও কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়েছে।
রোহিঙ্গা নেতারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, প্রতিনিধি দলের অসন্তোষের বিষয়টি জানতে পেরে শনিবার কয়েকজন রোহিঙ্গা সদস্যকে কক্সবাজারে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের সঙ্গে কথা বলে আশ্বস্ত করানোর চেষ্টা করেন।
তারা এই রোহিঙ্গা সদস্যদের বলেছেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতেই হবে, যদিও কাউকে জোর করে মিয়ানমারে পাঠানো হবে না।
মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের ওপর আস্থার রাখার পরামর্শ দিয়ে তারা বলেছেন, মিয়ানমারে যাওয়ার পরে যদি কোন সমস্যা হয়, তাহলে তাদের আবার বাংলাদেশে আসার সুযোগ থাকবে। কিন্তু প্রত্যাবাসন শুরু না হলে তারা কোনদিনই নিজেদের বাড়িঘরে ফেরত যেতে পারবে না।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ আট লাখ ৮৮ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর তালিকা মিয়ানমারের কাছে পাঠিয়েছিল।
এরপর মিয়ানমারের পক্ষ থেকে ৬৮ হাজার রোহিঙ্গার একটি ফিরতি তালিকা পাঠানো হয়। ওই তালিকা থেকে পরিবার ভিত্তিক প্রত্যাবাসনের জন্য প্রাথমিকভাবে ১,১৪০ জনকে বাছাই করা হয়।
এর মধ্যে ৭১১ জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমার সম্মতি দিলেও বাকি ৪২৯ জনের ব্যাপারে তাদের আপত্তি ছিল। গত মার্চে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল এসে এদের সহ মোট ৪৮০ জন রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই করে দেখেছে।
২০১৭ সালের অগাস্ট মাসে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের মুখে আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আসে। আগে আসা রোহিঙ্গা মিলিয়ে বাংলাদেশে এখন প্রায় সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। যাদের একজনকেও গত ছয় বছরে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়নি।
এর আগেও চীনের মধ্যস্থতায় দুই দফার প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, কিন্তু তা সফল হয়নি।
সূত্র : বিবিসি