শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৭:২৪ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
যেভাবে অপসারিত হলেন শোভন-রাব্বানী

যেভাবে অপসারিত হলেন শোভন-রাব্বানী

স্বদেশ ডেস্ক:

নানা অভিযোগ, বিতর্ক ও সমালোচনার মুখে থাকা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে সংগঠনের প্রথম সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রথম যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে ছাত্রলীগের নেতৃত্বের বিষয়টি আলোচনায় উঠলে সাংগঠনিক অভিভাবক শেখ হাসিনা এই সিদ্ধান্ত দেন। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেন। বৈঠক থেকে আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। মানুষ জানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নতি হবে। এই বিশ্বাস ও আস্থা ধরে রাখতে হবে। মানুষের আকাক্সক্ষা পূরণে কাজ করতে হবে। আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত যেসব নেতাকর্মী আছে তাদের প্রত্যেককে আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে। তাহলে আমরা আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে পারব।

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশের প্রতি ও জনগণের প্রতি আমাদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে যা আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে মনে রাখতে হবে। সেইভাবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। অন্যরা উড়ে এসে জুড়ে বসে ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যে সমস্ত দল গঠন করেছে তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। আর তারা সেই দায়িত্বও নেয় না। তারা আসে নিজেদের ভাগ্য গড়তে। যখন ক্ষমতায় ছিল তারা তাই করে গেছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দায়িত্বশীল দল হিসেবে যখনই ক্ষমতায় এসেছে জনগণের জন্য কাজ করেছে। মনে রাখতে হবে আমরা জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠনের লোক। আমাদের দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে হবে। সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। সে কথা মাথায় রেখে সংগঠন থেকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সুসংগঠিত করে গড়ে তুলতে হবে। নিয়মিত যাতে সম্মেলনটা হয় সেই জন্য প্রস্তুতি এখন থেকেই নিতে হবে। আমাদের যত উপ-কমিটি রয়েছে তারাও তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে আশা করি। বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, অগ্নিসন্ত্রাস আমরা কঠোর হস্তে দমন করেছি। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, সেটা অব্যাহত থাকবে।

প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পরই শুরু হয় রুদ্ধদ্বার বৈঠক। সেখানে ছাত্রলীগ প্রসঙ্গ আলোচনায় আসলে প্রধানমন্ত্রী দুই শীর্ষ নেতাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘শোভন-রাব্বানীকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। তবে ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি বহাল থাকবে। পদাধিকার বলে আল নাহিয়ান খান জয় ছাত্রলীগের ১ নম্বর ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ায় সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন। আর লেখক ভট্টাচার্য এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থাকায় তিনিই সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েছেন। তারা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।’ তাদের দ্রুততম সময়ে ছাত্রলীগের সম্মেলন করার তাগিদ দেয়া হয়েছে বলেও জানান কাদের।
গত বছরের ১১ ও ১২ মে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন ছাড়াই শেষ হয় ছাত্রলীগের দুই দিনব্যাপী ২৯তম জাতীয় সম্মেলন। পরে ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে থাকা সিন্ডিকেট ভেঙে প্রধানমন্ত্রী কমিটি দেয়ায় শোভন-রাব্বানীর প্রতি আলাদা নজর ছিল আওয়ামী লীগের সব মহলের। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ও দলের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশাকে আমলে না নিয়ে একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন তারা।

সংগঠনের মধ্যে সৃষ্টি হয় চরম বিশৃঙ্খলা। চাঁদা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পহেলা বৈশাখের কনসার্টে অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়ে মাফ পায় তারা। কমিটি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, দেরিতে ঘুম থেকে উঠা, মাদক সিন্ডিকেট, পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বিতর্কিতদের স্থান দেয়া, নিজেদের অনুষ্ঠানে অতিথি করেও আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদ, ডা: দীপু মনি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং সর্বশেষ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ থেকে চাঁদা দাবি নিয়ে সম্প্রতি সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় ছাত্রলীগ। প্রায় ৮৬ কোটি টাকা চাঁদা দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির নালিশের পরই ক্ষুব্ধ হন শেখ হাসিনা। এরপরই গণভবনে শোভন-রাব্বানীর প্রবেশের স্থায়ী পাস স্থগিত করা হয়।

এ দিকে ছাত্রলীগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের চার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, বি এম মোজাম্মেল হক ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের সাথে কয়েক দফায় সাক্ষাৎ করেও সেখান থেকে তেমন কোনো আশার বাণী পাননি ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। এর বাইরে আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় অন্তত ১০ নেতার কাছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ধর্ণা দিয়েও হতাশ হয়েছেন। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মমতাময়ী নেত্রী’ সম্বোধন করে একটি চিঠি লেখে সকল কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চান গোলাম রাব্বানী। এরপরও শেষ রক্ষা হয়নি দুই শীর্ষ নেতৃত্বের।

আ’লীগের কাউন্সিল : আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বৈঠকে। এর আগে ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই হিসাবে আগামী ২৩ অক্টোবর এই কমিটির তিনবছর পূর্ণ হবে। ২০১৬ সালের ওই সম্মেলনে টানা অষ্টমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। আর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনে টানা দুই বারের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে সভাপতিমণ্ডলীতে স্থান দেয়া হয়। এ ছাড়া সম্মেলনে ১৯ সদস্যের সভাপতিমণ্ডলীর মধ্যে ১৪ জন এবং ৪ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধক্ষ্য পদে নেতাদের নাম ঘোষণা করা হয়। সব মিলিয়ে ২০তম জাতীয় সম্মেলনে ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ২১টি পদে নেতা নির্বাচন করা হয়। এরপর ধীরে ধীরে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে দলটি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877