রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৭:৫০ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
অবশেষে দুর্নীতির মামলা হারালেন বিচারপতি অভিজিৎ

অবশেষে দুর্নীতির মামলা হারালেন বিচারপতি অভিজিৎ

স্বদেশ ডেস্ক:

ভারতের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গেপাধ্যায়ের হাত থেকে প্রাথমিকে নিয়োগ-দুর্নীতি মামলা সরিয়ে নিল দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সম্প্রতি একটি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। তাতে নিজের ব্যক্তিগত কথা, ভালোলাগা, পছন্দের বই নিয়ে যেমন বলেছিলেন, তেমনই মামলা সম্পর্কেও বলেছিলেন। সেই সাক্ষাৎকার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি পি ভি নরসিমহা দেখেন। তার অনুবাদ পড়েন। কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছ থেকে রিপোর্ট চান। তারপর ওই সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ তুলে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বলেছে, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রাথমিক নিয়োগ-দুর্নীতির মামলা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত থেকে নিয়ে অন্য কোনো বিচারপতিকে দেবেন।

সুপ্রিম কোর্টের রায় এখনো আপলোড করা হয়নি। এই নির্দেশ নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে দ্বিমত আছে। কিছু আইনজীবী মনে করছেন, প্রাথমিকে নিয়োগ-দুর্নীতি সংক্রান্ত সব মামলা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত থেকে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আবার বিকাশ ভট্টাচার্যের মতো কিছু আইনজীবী মনে করছেন, শুধুমাত্র অভিষেক ব্যানার্জি সক্রান্ত মামলাটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রায় আপলোড করা হলে, বিষয়টি স্পষ্ট হবে।

শুধু তাই নয়, গত ২১ এপ্রিল পৌরসভায় নিয়োগ-দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। পরের দিন থেকেই সিবিআই ও ইডি তদন্ত শুরু করে দেয়। এই নির্দেশের উপরেও স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

তারা বলেছে, তিন দিনের মধ্যে রাজ্য সরকার হাইকোর্টে রিভিউ পিটিশন দেবে। তারপর সাত দিনের মধ্যে হাইকোর্ট ঠিক করবে, এই নিয়ে কী নির্দেশ দেয়া হবে। ততদিন পর্যন্ত সিবিআই-ইডি তদন্ত বন্ধ রাখবে।

বিচারপতির দেয়া নির্দেশের কী হবে?
সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের পর বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঠেছে। যেমন প্রশ্ন উঠেছে, এবার কোন বিচারপতির কাছে এই মামলা যাবে? এর জবাব সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এটা ঠিক করবেন।

দ্বিতায় প্রশ্ন, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এতদিন এই মামলায় যে নির্দেশ দিয়েছিলেন তার কী হবে? আইনজীবীদের বক্তব্য, নতুন বিচারপতি বিষয়টি দেখবেন। তিনি ওই নির্দেশ বহাল রাখতে পারেন। পরিবর্তনও করতে পারেন।

তৃতীয় প্রশ্ন হলো, এর কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে? এই বিষয়ে প্রচুর রাজনীতিক মুখ খুলেছেন। অধিকাংশের মত হলো, নিয়োগ-দুর্নীতিকে যে জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়, যে জায়গায় জনমত চলে গেছে, তাকে উপেক্ষা করা সম্ভব হবে না। তাদের আশা, যে বিচারপতিই এই মামলা বিচারের ভার পান না কেন, তিনি একই পথে চলবেন।

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যা বলেছেন
তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায় সুপ্রিম কোর্টের সেক্রেটারি জেনারেলের কাছ থেকে তার সাক্ষাৎকারের অনুবাদ চেয়ে পাঠিয়েছেন। স্বচ্ছতার স্বার্থেই তিনি এটা চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার যে রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন, সেটাও তার কাছে পাঠাতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, রাত ১২টার মধ্যে এই অনুবাদ ও রিপোর্ট তার কাছে পৌঁছে দিতে হবে। তিনি রাত ১২টা পর্যন্ত তার চেম্বারে অপেক্ষা করবেন।

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, তিনি এখন থেকে আর প্রাথমিকে নিয়োগ-দুর্নীতির মামলা শুনবেন না।

রাজনীতিকদের প্রতিক্রিয়া
যিনি সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলেন, সেই অভিষেক ব্যানার্জি বলেছেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত যে নির্দেশ দিয়েছে তা শিরোধার্য। তদন্ত হোক। কেউ দোষী হলে নজিরবিহীন শাস্তি হোক। বিচারব্যবস্থার উপর আমার ভরসা আছে। প্রধান বিচারপতির রায়কে স্বাগত জানাই।’

লড়াই হারিয়ে যাবে না তো!
রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেছেন, ‘প্রক্রিয়া মানতে গিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই হারিয়ে যাবে না তো?’

আর দুই বছরের বেশি সময় ধরে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখানো চাকরিপ্রার্থীরা বলেছেন, তারা আশাহত হলেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাদের মনে আশা জাগিয়েছিলেন। দুর্নীতিবাজরা শাস্তি পাবে, তারা ন্যায় পাবেন, এটা মনে হচ্ছিল। এই অবস্থায় এই নির্দেশ তাদের কাছে ধাক্কা। তারা চাইছেন যে- বিচারপতি এবার মামলার ভার পাবেন, তিনিও যেন তাদের আশার আলো দেখাতে পারেন।
সূত্র : ডয়চে ভেলে

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877