শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:০৭ পূর্বাহ্ন

মানমাত্রা ছাড়িয়েছে শব্দদূষণ

মানমাত্রা ছাড়িয়েছে শব্দদূষণ

স্বদেশ ডেস্ক:

শব্দদূষণ এক নীরব ঘাতক। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শব্দশূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে, যা অতিক্রম করেছে মানমাত্রা। যেখানে শব্দের স্বাভাবিক মাত্রা ৫০ ডেসিবেল থাকার কথা, সেখানে রাজধানীর কোথাও তা নেই। শব্দদূষণের ফলে দিন দিন মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস পাচ্ছে, বাড়ছে বধিরতা। এই দূষণ রোধে আইন থাকলেও যথাযথ প্রয়োগ নেই। ঢাকার জন্য দিনের বেলায় শব্দের আদর্শ মান (সর্বোচ্চ সীমা) ৬০ ডেসিবেল। এক গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে শব্দের তীব্রতা মানমাত্রা ছাড়িয়েছে। নগরের বিভিন্ন স্থানে সাধারণভাবে শব্দের গ্রহণযোগ্য মানমাত্রার থেকে প্রায় ১ দশমিক ৩ থেকে ২ গুণ বেশি শব্দ হয়।

ঢাকা শহরের শব্দদূষণের মাত্রা নিয়ে গত জানুয়ারিতে গবেষণা করেছে বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে শব্দের তীব্রতা মানমাত্রা ছাড়িয়েছে। শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী, ঢাকার জন্য দিনের বেলায় শব্দের আদর্শ মান (সর্বোচ্চ সীমা) ৬০ ডেসিবেল। নগরের বিভিন্ন স্থানে সাধারণভাবে শব্দের গ্রহণযোগ্য মানমাত্রার থেকে প্রায় ১ দশমিক ৩ থেকে ২ গুণ বেশি শব্দ পাওয়া গেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকায় শব্দের গড় মাত্রা পাওয়া গেছে ৭৬ দশমিক ৮০ ডেসিবল। যে তিনটি সড়কের সংযোগ স্থলে সর্বোচ্চ মাত্রার শব্দদূষণ দেখা গেছে সেগুলো হলো নিউমার্কেট মোড়, নয়াপল্টন মোড় এবং প্রেসক্লাব মোড়। সেখানে শব্দদূষণের মাত্রা যথাক্রমে ১০০ দশমিক ৬৫ ডেসিবল, ৯২ দশমিক ২২ ডেসিবল এবং ৯০ দশমিক শূন্য ৩ ডেসিবল।

এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকায় শব্দের গড় মাত্রা পাওয়া গেছে ৮০ দশমিক ৫৬ ডেসিবল। যে তিনটি সড়কের সংযোগ স্থলে সর্বোচ্চ মাত্রার শব্দদূষণ পাওয়া গেছে সেগুলো হলো মোহাম্মদ বাসস্ট্যান্ড মোড়, শিয়া মসজিদ মোড় এবং মাসকট প্লাজা মোড়। সেখানে শব্দদূষণের মাত্রা যথাক্রমে ৯৯ দশমিক ৭৭ ডেসিবল, ৯৩ দশমিক শূন্য ৫ ডেসিবল এবং ৯০ দশমিক ২৭ ডেসিবল।

গবেষণা দলের প্রধান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার আমাদের সময়কে বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সেই সঙ্গে যাত্রী, চালক ও গাড়ি মালিকদের সচেতনতা নিশ্চিত করতে হবে। শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী, চিহ্নিত এলাকাগুলোতে (নীরব, আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প ও মিশ্র) সাইনপোস্ট উপস্থাপন করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারি দপ্তরগুলোর মধ্যে কাজ করছে পরিবেশ অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটি ‘শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারত্বমূলক প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প পরিচালনা করছে। এ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা শহরের শব্দদূষণ পরিস্থিতি নিয়ে ইতোমধ্যে একটি গবেষণা হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা) ও প্রকল্প পরিচালক সৈয়দা মাছুমা খানম বলেন, ‘শব্দদূষণের এ অবস্থার চিত্র পরিবেশ অধিদপ্তরের গবেষণাতেই পাওয়া গেছে। আমাদের হাতে এখন গবেষণার ফল আছে। কিন্তু আমরা এর নিয়ন্ত্রণে একাধিক কর্মসূচি নিয়েছি। এর প্রথম উদ্যোগ হিসেবে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ সংশোধন হবে। একটি সমন্বিত উদ্যোগের অংশ হিসেবে আমাদের কাজে বিআরটিএ এবং ট্রাফিককে যুক্ত করা হবে।’

শব্দদূষণের প্রধান উৎস হলো- সড়কে যানজটের সময়ে যানবাহন থেকে নির্গত শব্দ, উড়োজাহাজ, ট্রেন, শিল্পকারখানা ও বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডে সৃষ্ট শব্দ। এসব শব্দ মানমাত্রার চেয়ে বেশি হলেই সেটা মানুষের শরীর ও মানসিক স্বাস্থ্যকে ঝুঁকিতে ফেলে দেয়।

২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের ৮৮ ধারা অনুযায়ী, উচ্চমাত্রায় হর্ন বাজালে অনধিক ৩ মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ। অযথা হর্ন বাজানো বন্ধে পুলিশের ভূমিকা এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট করা নেই। ফলে পুলিশ এক্ষেত্রে কিছুই করতে পারে না।

গত ফেব্রুয়ারিতে (ক্যাপস) জানিয়েছে, শব্দদূষণের কারণে পথচারী ও সড়কে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশ স্বাস্থ্য জটিলতায় পড়ে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের ১১ দশমিক ৮ শতাংশ সদস্যের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৩৩ দশমিক ৯ শতাংশের অন্যদের কথা শুনতে কষ্ট হয়।

জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) ২০২২ সালের ‘ফ্রন্টিয়ারস ২০২২ : নয়েজ, বেন্ডজেস অ্যান্ড মিসম্যাচেস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আবাসিক এলাকায় শব্দদূষণের মাত্রা সর্বোচ্চ ৫৫ ডেসিবল ও বাণিজ্যিক এলাকায় ৭০ ডেসিবল পর্যন্ত অনুমতিযোগ্য।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877