রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:১৫ অপরাহ্ন

প্রতিদিন দেশে আত্মঘাতী হচ্ছে গড়ে ৩০ জন

প্রতিদিন দেশে আত্মঘাতী হচ্ছে গড়ে ৩০ জন

স্বদেশ ডেস্ক:

সারাপৃথিবীর মতো বাংলাদেশেও প্রতিবছর বাড়ছে আত্মহনন ও আত্মহত্যা চেষ্টার মতো সামাজিক সমস্যা। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আত্মহত্যাকে মানসিক অসুস্থতার চেয়ে বড় অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। যার ফলে আত্মহত্যা প্রবণতা হ্রাস করা যাচ্ছে না।

পরিসংখ্যান বলছে, দেশে প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন আত্মহত্যা করেন। আর প্রায় ৬৫ লাখ মানুষ রয়েছেন যারা আত্মহত্যাপ্রবণ। এমন পরিস্থিতিতেই অন্যান্য দেশের মতো আজ বাংলাদেশেও পালিত হবে বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য ‘আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাজ করি একসাথে’। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিবছর যৌথভাবে দিবসটি পালন করে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে ১৪ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ আত্মহত্যা। গত বছর দেশে ১১ হাজার ৯৫ জন আত্মহত্যা করেন। যা ২০১৭ সালে ছিল ১১ হাজার ৬৫ জন, ২০১৬ সালে ১০ হাজার ৬০০ জন, ২০১৫ সালে ১০ হাজার ৫০০ জন, ২০১৪ সালে ১০ হাজার ২০০ জন, ২০১৩ সালে ১০ হাজার ১২৯ জন, ২০১২ সলে ১০ হাজার ১০৮ জন, ২০১১ সালে ৯ হাজার ৬৪২ জন, ২০১০ সালে ৯ হাজার ৯৬৫ জন।

এ ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশে পুরুষদের আত্মহত্যার পরিমাণ বেশি থাকলেও বাংলাদেশে নারীরা আত্মহত্যা বেশি করছেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ ৯৭০টি ঘটনা পর্যালোচনায় নারীদের ওপর শারীরিক, যৌন ও মানসিক নির্যাতন এবং ইভটিজিংয়ের ঘটনা বাড়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারাকে আত্মহত্যার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ ছাড়া অবিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রে বিয়ের আগে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য হওয়া অথবা স্বেচ্ছায় যৌন সম্পর্ক স্থাপনের পর গর্ভধারণের কারণে অনেকে আত্মহত্যা করেন। বেশিরভাগ নারী আত্মহত্যা করেন গলায় ফাঁস দিয়ে আর পুরুষেরা কীটনাশক খেয়ে। এভাবে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন আত্মহত্যা করছে।

যদিও বাংলাদেশের আইনে আত্মহত্যা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে দ-বিধির ৩০৯ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি আত্মহত্যার চেষ্টা করে এবং এ ধরনের অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্যে কোনো কাজ করে, তবে ওই ব্যক্তি এক বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদ- অথবা অর্থদ- অথবা উভয় দ-ে দ-িত হবেন।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম বলেন, আবেগতাড়িত ও পরিকল্পিত এ দুধরনের আত্মহত্যা হয়। দেশে আবেগতাড়িত আত্মহত্যার পরিমাণ বেশি। এটি একটি মানসিক সমস্যা। সঠিক সময়ে চিকিৎসা পেলে এ ধরনের ঝুঁকি থেকে বাঁচানো সম্ভব। তিনি আরও বলেন, আইনে অপরাধের কথা থাকলেও এর প্রয়োগ নেই। তবে অনেকেই আত্মহত্যার চেষ্টাকারীদের অপরাধী ভেবে মানসিক চিকিৎসা করানো থেকে দূরে থাকে। মনে রাখতে হবে আত্মহত্যায় একাধিকবার চেষ্টার প্রবণতাও রয়েছে।

চিকিৎসকদের মতে, আত্মহত্যাকারীদের ৯৫ শতাংশই মানসিক রোগে ভোগেন। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৬৫ লাখ মানুষ আত্মহত্যার ঝুঁঁকির মধ্যে রয়েছে। কিন্তু আত্মহত্যা প্রতিরোধের জন্য যথেষ্ট মানসিক চিকিৎসালয় ও কাউন্সিলিং সেন্টার দেশে নেই। বাংলাদেশে মানসিক রোগের চিকিৎসকের সংখ্যা মাত্র ২০০। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন জেলায় আত্মহত্যা চেষ্টার ঘটনা ঘটলেও জেলা পর্যায়ে ওইসব ব্যক্তিদের মানসিক রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই।

শুধু ২২টি মেডিক্যাল কলেজ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও পাবনার হাসপাতালে হয় মানসিক রোগের চিকিৎসা। পুরনো আটটি মেডিক্যাল কলেজের একটিতেও এ বিষয়ের অধ্যাপক নেই। ফলে মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সেবা বিঘিœত হচ্ছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877