শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪:০১ অপরাহ্ন

ভেজালে বাজার সয়লাব, ল্যাবে পণ্যের অভাব

ভেজালে বাজার সয়লাব, ল্যাবে পণ্যের অভাব

স্বদেশ ডেস্ক:

ভেজালের ভিড়ে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের মান নিয়ে সন্দিহান রাজধানীবাসী। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার শেষ নেই। নগরবাসীর স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য নিশ্চিত করতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের জন্য বঙ্গবাজার মোড়ে স্থাপন করা হয়েছে আধুনিক একটি খাদ্য পরীক্ষাগার বা ল্যাব। কোটিরও বেশি অধিবাসী অধ্যুষিত ঢাকা নগরীতে খাদ্যের মান পরীক্ষা করতে এ ল্যাবের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দম ফেলারও ফুরসত পাওয়ার কথা নয়। অথচ বাজারে ভেজাল তথা মানহীন খাবারের সয়লাব সত্ত্বেও এ ল্যাবে নেই কোনো কর্মব্যস্ততা। চলতি বছরের তিন মাসে মাত্র ৩১টি পণ্য এখানে পাঠানো হয়েছে মান পরীক্ষার জন্য। তাই কর্মহীন অলস সময় পার করছেন এ পরীক্ষাগারের পরীক্ষক ও টেকনিশিয়ানরা। এদিকে ল্যাবটির কার্যক্রম যেমনই চলুক, কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ আনুসঙ্গিক সব ব্যয় ঠিকই নির্বাহ করতে হচ্ছে নগর কর্তৃপক্ষকে।

জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে সিটি করপোরেশন থেকে ভেজালবিরোধী অভিযানে যেসব খাদ্যপণ্য সংগ্রহ করা হয়, তা পরীক্ষা করে মানসম্মত নাকি মানহীন, তা নির্ধারণ করা হয় এই পরীক্ষাগার থেকে। খাদ্য মানহীন হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী মামলা ও আর্থিক জরিমানা করে থাকে সিটি করপোরেশন। এক কথায়Ñ ঢাকাবাসীর নির্ভেজাল খাদ্য নিশ্চিত করার দায়িত্ব এ প্রতিষ্ঠানের; কিন্তু ৮ কর্মচারীর এ ল্যাবের কার্যক্রম নেই বললেই চলে।

২০২০ সালের ২ জুলাই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আধুনিক এই পরীক্ষাগার উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। ওই সময় ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছিলেন, এ ল্যাব আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। সঙ্গত কারণেই আমরা যে কোনো পণ্যের মান সঠিকভাবে নিরূপণ করতে পারব এবং ভেজাল পণ্যের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারব। ঢাকাবাসীর জনস্বাস্থ্য তথা স্বাস্থ্যকর খাদ্য নিশ্চিত করতে এই আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগারটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

আধুনিক এই পরীক্ষাগারটিতে এক জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষক, দুই রসায়নবিদ, দুই টেকনেশিয়ান, দুই পিয়ন ও একজন দারোয়ান রয়েছেন। গত সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিচালক না থাকায় অনেকটাই স্থবির ছিল এর কার্যক্রম। ডিসেম্বরে পরিচালক যোগদানের পর আবার শুরু হয় পরীক্ষার কাজ; কিন্তু পরীক্ষার জন্য পণ্য না থাকায় অলস সময় পার করা ছাড়া কিছু করার নেই ল্যাবের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

আধুনিক এই পরীক্ষাগারটিতে ২০২০ সালে ৩৫৬টি খাদ্যের নমুনা পরীক্ষা করে ৫৩টি মানহীন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ২০২১ সালে ৫২৩টি নমুনা পরীক্ষা করে ১০১টি এবং ২০২২ সালে ৪৪২টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪৩টি মানহীন খাদ্যপণ্য পাওয়া যায়। ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসে ৩১টি নমুনা পরীক্ষায় ৬টি মানহীন হিসেবে চিহ্নিত হয়। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৩৫২টি নমুনা পরীক্ষা করে ২০৩টি মানহীন খাদ্যপণ্য চিহ্নিত করে ল্যাবটি।

গত ১ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ল্যাবটি পরিদর্শন করে জানান, বাণিজ্যিকভাবে অর্থাৎ ব্যক্তি উদ্যোগে কেউ নমুনা নিয়ে এলে নির্ধারিত ফির বিনিময়ে পরীক্ষা করে দেবেন কেমিস্টরা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে খাদ্য পরীক্ষাগার (ল্যাব) পরিচালনয় বরাদ্দ আছে ১০ লাখ টাকা। এ ছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য খাতে নিয়মিত ব্যয়ও রয়েছে। পরীক্ষাগারটির কার্যক্রম যেমনই চলুক, এসব ব্যয় ঠিকই নির্বাহ করতে হচ্ছে নগর কর্তৃপক্ষকে।

জানা গেছে, খাদ্যদ্রব্যের নমুনা সংগ্রহ করার জন্য দুই সিটি করপোরেশনেরই নমুনা সংগ্রাহক রয়েছেন। উপরন্তু দক্ষিণ সিটিতে ১০ জন এবং উত্তরে ৮ জন ফুড ইন্সপেক্টর রয়েছেন। নমুনা সংগ্রাহকের মাধ্যমে নমুনা সংগ্রহ করে ফুড ইন্সপেক্টরের মাধ্যমে ল্যাবে পাঠানোর কথা; কিন্তু নগরীর মশক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বও এসব পরিদর্শকের ওপর। তারা এ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। ফলে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার বিষয়টি পতিত হয়েছে অনিশ্চয়তার আবর্তে।

ল্যাবসংশ্লিষ্টদের মতে, দুই সিটি করপোরেশনের আরও কিছু জনবল বাড়িয়ে নিয়মিত পরিদর্শনের মাধ্যমে নমুনা পাঠালে আর ‘ভেজাল, নির্ভেজাল’ সনদ প্রদানের মাধ্যমে চিহ্নিত করতে পারলে মানহীন খাদ্যপণ্য সরবরাহ বন্ধ হবে। এ জন্য সিটি করপোরেশনকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ তাদের।

আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগার উদ্বোধনকালের তথ্যানুযায়ী এডিবির অর্থায়নে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় ‘আরবান পাবলিক অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ সেক্টরের ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পের অধীনে ৭টি সিটি করপোরেশনে এই আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগার নির্মাণ করা হয়। ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এই পরীক্ষাগারে ৭০ প্রকারের প্রক্রিয়াজাত খাদ্যদ্রব্য পরীক্ষার সক্ষমতা রয়েছে।

ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির আমাদের সময়কে বলেন, এতদিন বাণিজ্যিকভাবে পরীক্ষা হয়নি। এপ্রিল মাস (চলতি) থেকে পুরোপুরি বাণিজ্যিকভাবে পরীক্ষাও চলবে। ল্যাব আগেও চলেছে। তবে এখন পরীক্ষার হার বেড়েছে, সামনে আরও বাড়বে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগার ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষক (এনালিস্ট) মো. শামছুল হক আমাদের সময়কে বলেন, এখানে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে খাদ্যদ্রব্যের মান নির্ণয় করা হয়। আমরা বিএসটিআই মানদণ্ড অনুযায়ী পরীক্ষা করে মানসম্মত ও মানহীন খাদ্যদ্রব্য চিহ্নিত করি। অভিযানে সংগ্রহ করা যেসব খাদ্যদ্রব্যের নমুনা পাঠানো হয়, সেখানে কোন কোম্পানির বা কোন ব্যক্তিরÑ সেটি দেখা হয় না। শুধু একটি কোড নম্বর দিয়ে ল্যাবে পাঠানো হয়। পরে আমরা কোড নম্বর মিলিয়ে সিটি করপোরেশনের ফুড ইন্সপেক্টরদের কাছে পাঠিয়ে দিই। যেসব মানহীন খাদ্যপণ্য পাওয়া যায়, সেগুলোর বিরুদ্ধে ভেজাল নিয়ন্ত্রণ আইনের অধীনে মামলা বা জরিমানা করা হয়।

আধুনিক খাদ্যদ্রব্যের মান নির্ধারণের এই পরীক্ষাগারে যে কোনো প্রকার খাদ্যদ্রব্যের মান পরীক্ষা করা সম্ভব। সিটি করপোরেশনের পাঠানো নমুনা পরীক্ষায় কোনো ফি নেওয়া হয় না। এর বাইরে পরীক্ষার ধরন অনুযায়ী ফি ধার্য করা আছে। এক্ষেত্রে চর্বি ও তেলজাতীয়; দুধ ও দুগ্ধজাতীয়; ফল ও শাকসবজির মান পরীক্ষায় ৫০০ টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা ফি লাগবে। পানির মান পরীক্ষায় ৪০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা ফি ধরা হয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877