শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪১ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বাতিল হচ্ছে গুচ্ছ পরীক্ষা চালু হচ্ছে এনটিএ পদ্ধতি

বাতিল হচ্ছে গুচ্ছ পরীক্ষা চালু হচ্ছে এনটিএ পদ্ধতি

স্বদেশ ডেস্ক:

শুধু একটি পরীক্ষার মাধ্যমে দেশের সব ক’টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য সুযোগ পাবেন শিক্ষার্থীরা। সেই লক্ষ্যেই গঠন করা হচ্ছে ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি বা এনটিএ। আর এই পদ্ধতি চালু হলে বাতিল হবে বর্তমানের গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা। আগামী বছর থেকেই এনটিএ’র মাধ্যমে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষা নেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। আগামীকাল সোমবার এনটিএ’র গঠন প্রক্রিয়া ও কার্যপরিধি নিয়ে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়ে সভা ডাকা হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একসাথে ভর্তি পরীক্ষা নিতে একটি ইউনিক কাঠামো গঠন নিয়ে কাজ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইতঃপূর্বে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে এবং অভিভাবকদের ব্যয় কমাতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হলেও সেখানে সব বিশ্ববিদ্যালয় অংশ না নেয়ায় শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ কমেনি। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরো বেড়েছে। গত দুই বছর গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষা নিয়ে অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরও অভিযোগ রয়েছে। চলতি বছর গুচ্ছ থেকে দু’টি বিশ্ববিদ্যালয় বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণায় গুচ্ছের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে ।

সূত্র মতে, এনটিএ’র অধীনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে যুক্ত করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। এ লক্ষ্যে আগামীকাল সোমবার শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে কোর কমিটির সভা ডাকা হয়েছে। এতে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের ডাকা হয়েছে। পাশাপাশি ভিসিদের সংগঠন (উপাচার্য পরিষদের) সভাপতিকেও ডাকা হয়েছে সভায়।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে এবং আর্থিক সাশ্রয়ের লক্ষ্যে তিনটি গুচ্ছে বর্তমানে ৩৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। তবে এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটের মতো বড় বিশ্ববিদ্যালয় আসেনি। অন্য দিকে গুচ্ছ ভর্তিতে নানা জটিলতায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এতে গুচ্ছের আসল উদ্দেশ্য ভেস্তে যেতে বসেছে। এই অবস্থায় সব বিশ্ববিদ্যালয়কে এক ছাতার নিচে এনে একটি কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যেই গঠন করা হবে ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ)।

এনটিএ’র কার্যপরিধি, কোন পদ্ধতিতে এ পরীক্ষা নেয়া হবে, কারা এর নেতৃত্ব দেবেন- এসব বিষয় ঠিক করতে শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ে কোর কমিটির সদস্যরা বৈঠকে বসবেন। বড় ছয় বিশ্ববিদ্যালয় যাতে এক ছাতার নিচে আসে এই বৈঠকে সে বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে কোর কমিটির সদস্য ও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে এই বৈঠক হবে। বৈঠক থেকে এ-সংক্রান্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হবে। সোমবারের বৈঠকে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটকে কিভাবে এনটিএতে আনা যায় তা হবে মূল আলোচনা। তিনি আরো জানান, যেহেতু এই বড় ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে আসেনি, তাই তাদের এনটিএতে আনার বিষয়ে বেশি আলোচনা হবে।

এ দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে একক আওতাভুক্ত ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণী সভার বিষয়ে এক চিঠিতে এনটিএ সংক্রান্ত বিষয় জানা যায়। গত বৃহস্পতিবার ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামানের দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনির সভাপতিত্বে গত ২৭ মার্চ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিচালন নীতি ও শিক্ষার মানোন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় আগামী বছর থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে একক আওতাভুক্ত করে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পর্যায়ক্রমে এনটিএ গঠন করতে হবে। ইউজিসিকে এই বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, সোমবার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের উপস্থিতিতে নীতিনির্ধারণী সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এ দিকে এনটিএ নামের এই সংস্থা কেমন হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে নীতিনির্ধারকরা প্রাথমিক একটি ধারণা দিয়েছেন। এ সংস্থা গঠনে পৃথক একটি আইন করারও প্রয়োজন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে জাতীয় নির্বাচনের আগে এর কার্যক্রম শুরু সম্ভব নয় বলেও জানা গেছে। ইউজিসি-সহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভারতসহ উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে নির্দিষ্ট অথরিটি রয়েছে। সেখানে পরীক্ষা নিয়ে স্কোরের ভিত্তিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নেয়া হয়। বিষয়টি আইইএলটিএস, জিআরই-এর মতো। বাংলাদেশেও সে ধরনের সংস্থা গঠনের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এতে ভারতীয় মডেলটি আলোচনায় আসছে বেশি। ভারতে এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয় শিক্ষার্থীদের।

বাংলাদেশে এ ধরনের সংস্থা গঠন হলে সেখানে একজন চেয়ারম্যান থাকবেন। এ ছাড়া একটি নির্দিষ্ট বোর্ড থাকবে, যেখানে পিএসসির আদলে শুধু অ্যাকাডেমিশিয়ানরা থাকবেন। পাশাপাশি অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাও বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করবেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেবে বোর্ড। অপর দিকে পরীক্ষার জন্য একটি প্রশ্ন ব্যাংক থাকবে। পরীক্ষা হবে কম্পিউটারভিত্তিক। অঙ্ক থাকলে সেটি খাতায় লিখে আপলোড করতে হবে। সাথে ভাইভা-সহ অন্যান্য প্রক্রিয়া অনুসরণ করে স্কোর দেয়া হবে। সে স্কোরের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবেন।

জানা গেছে, এ ধরনের পরীক্ষা বছরে দু’বার হতে পারে। জানুয়ারি ও বছরের মাঝামাঝি। প্রথমবার যারা ভর্তি হবেন তারা দ্বিতীয়বার আর ভর্তির সুযোগ পাবেন না। পরের পরীক্ষায় যারা অংশগ্রহণ করবেন তারা ভর্তির সুযোগ পাবেন। পরের বছর একই প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা হবে। আইইএলটিএস কিংবা জিআরই আদলে পিএসসির মতো সংস্থার অধীনে এ ধরনের কার্যক্রম চালানো হবে। এনটিএ’র গঠন ও কার্যপরিধির বিষয়ে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, গত সপ্তাহের সভায় এনটিএ গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই এমন সংস্থা আছে। তবে এটি এখনই গঠন করা সম্ভব হবে না। জাতীয় নির্বাচনের পর নতুন সরকার এলে এটির বাস্তবায়ন হবে। আপাতত সব বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে একক ভর্তি পরীক্ষার নেয়ার বিষয়ে চেষ্টা চলছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877