স্বদেশ ডেস্ক:
সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) কমছে বৈদেশিক সহায়তার অংশ। তবে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে কাটছাঁট হচ্ছে না। উন্নয়ন সহযোগীদের দেওয়া নানা শর্তের কারণে বৈদেশিক সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি সংশোধিত এডিপিতে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক সহায়তা কমানোর বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
এর ফলে সংশোধিত এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ দাঁড়াবে ৭৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সব মিলিয়ে এডিপির আকার ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে দেশজ উৎস থেকে ১ লাখ ৪৯ হাজার ১৬ কোটি টাকা বহাল থাকছে। একই সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর অর্থায়নও বহাল থাকছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে ইআরডি সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে বৈদেশিক সহায়তার ছাড় ও প্রতিশ্রুতি দুটিই কমেছে। গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে উন্নয়ন সহযোগীরা ৩৭৮ কোটি ৫ লাখ ডলার ছাড় করেছে। যা গত অর্থবছর একই সময়ের চেয়ে ৩৯ কোটি ডলার কম। গত অর্থবছরের ওই ছয় মাসে অর্থ ছাড়ের পরিমাণ ছিল ৪১৭ কোটি ডলার। পাশাপাশি গত ছয় মাসে মাত্র ১৭৬ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪৪০ কোটি ডলার। এ ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি কম এসেছে ২৬৪ কোটি ডলার।
সম্প্রতি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশোধিত এডিপি নিয়ে বৈঠক করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। সেখানে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অগ্রাধিকার প্রকল্প বাছাই করতে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেমন- কৃষি, কৃষিজাত শিল্প, বিদ্যুৎ খাত, দারিদ্র্য বিমোচন এসব খাতকে প্রাধান্য দিতে হচ্ছে।
এ ছাড়া যেসব প্রকল্প চলতি অর্থবছরে শেষ হবে, সেগুলো বরাদ্দ নিয়ে শেষ করতে হবে। বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প কম অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখা যাবে না। চলতি মাসের মধ্যেই মন্ত্রণালয়গুলো কোন কোন প্রকল্পকে অগ্রাধিকারে রাখছে, তা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বিভাগকে জানাতে হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সে অনুযায়ী সংশোধিত এডিপি সাজাবে।
এদিকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে ব্যয়সাশ্রয়ী নীতির কারণে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অগ্রাধিকার প্রকল্পের তালিকা বদলে যাচ্ছে। নতুন উদ্যোগে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাই ঠিক করবে কোন কোন প্রকল্প অগ্রাধিকার তালিকায় রাখবে। ইতোমধ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে। চলতি মাসেই তা চূড়ান্ত করা হবে। আগামী মাসে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি পাস করা হবে বলে জানা গেছে।
বর্তমানে এডিপিতে ১ হাজার ৩৬৩টি প্রকল্প আছে। অর্থনীতির এই চাপের কারণে কয়েক মাস আগে এই প্রকল্পগুলোকে ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’ শ্রেণিতে ভাগ করে সরকার। ‘এ’ শ্রেণির প্রকল্পকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মানে, এসব প্রকল্পে চলতি এডিপিতে যা বরাদ্দ আছে, তা পুরোটাই খরচ করা হবে। ‘বি’ শ্রেণির প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ (দেশজ উৎসের অর্থ) ২৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। ‘সি’ শ্রেণির প্রকল্পগুলোকে নামমাত্র বরাদ্দ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হবে।
যেসব মন্ত্রণালয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, তারাই বুঝবে, কোন প্রকল্পগুলো জরুরি। এ ছাড়া বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায়ও অগ্রাধিকার সংশোধন করা দরকার। সার্বিকভাবে এসব বিবেচনায় অগ্রাধিকার প্রকল্পের তালিকা পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে।
বর্তমানে ৬৪৬টি প্রকল্প ‘এ’ শ্রেণিতে; ৬৩৬টি প্রকল্প ‘বি’ শ্রেণিতে এবং ৮১টি প্রকল্প ‘সি’ শ্রেণিতে রাখা হয়েছে। এর বাইরে এডিপিতে আরও ৯টি প্রকল্প রয়েছে, যেগুলোকে কোনো শ্রেণিতে রাখা হয়নি।
প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ শ্রেণির তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে করা হয়েছিল। তখন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বলেছিল, এই তালিকা ধরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বরাদ্দ দেওয়া হলে চলতি বছর ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা বাঁচবে।