বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০৫:৫২ অপরাহ্ন

অস্ট্রেলিয়া-জাপান প্রবাসীর নামে ভিজিএফের চাল

অস্ট্রেলিয়া-জাপান প্রবাসীর নামে ভিজিএফের চাল

স্বদেশ ডেস্ক:

অস্ট্রেলিয়া ও জাপান প্রবাসীসহ ধনাঢ্য ব্যক্তিদের নামে তোলা হয়েছে দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিএফের চাল। ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনও করেছিলেন। তার নামেও রয়েছে ভিজিএফের কার্ড। এমনকি তালিকায় গোপনে মৃত ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করে চাল উত্তোলন করেও আত্মসাৎ হয়েছে। প্রকৃত দুস্থদের বঞ্চিত করে এভাবে চাল বিতরণ ও আত্মসাতের ঘটনায় সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যশোরের চৌগাছা উপজেলার নরায়ণপুর ইউনিয়নে রবিবার এই চাল বিতরণ করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নারায়ণপুর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের তিন গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার ভিজিএফ এর চাল গত ঈদ-উল-আজহার আগে বিতরণ হয়নি। বিষয়টি নিয়ে দৈনিক আমাদেরসময়ে প্রকাশিত হওয়ার পর রবিবার ওই ওয়ার্ডের ৮৩০ পরিবারের মধ্যে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হয়।

বিতরণকৃতদের তালিকায় নাম রয়েছে নারায়ণপুর গ্রামের মৃত জালাল মিয়ার ছেলে রফিকুল ইসলামের। তিনি নারায়নপুর বাজারে তিনতলা একটি ভবনের মালিক।

সেখানে গ্রামীণ ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকের নারায়ণপুর শাখা অফিস রয়েছে।

নারায়ণপুর গ্রামের অন্যতম ধনাঢ্য ব্যক্তি অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী রুবেল হোসেন এবং জাপান প্রবাসী আছির উদ্দীন মৃধা। দুজনেরই রয়েছে গ্রামে দৃষ্টিনন্দন বহুতল বাড়ি। একইভাবে গ্রামের মৃত নূর আলী মুন্সির ছেলে সামসুল মুন্সি, মোবারক সর্দারের ছেলে মনিরুল ইসলামের রয়েছে গ্রামে দৃষ্টিনন্দন বাড়ি। তারা সবাই ভিজিএফের চাল নেওয়ার তালিকায় ছিলেন। তাদের বাড়িতে ভিজিএফের চাল উত্তোলনের টোকেন পৌঁছে দেন ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য রাবেয়া খাতুন।

তবে কার্ডধারী এসব পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তারা নিজেরাই জানেন না তারা ভিজিএফের চালের কার্ডধারী। তারা জানান, ২৫ জুলাই উপ-নির্বাচনে বিজয়ী ইউপি সদস্য ইউসূফ আলী সাবেক ইউপি সদস্যের করা ভিজিএফএর তালিকা নিয়ে আপত্তি জানালে ঈদের আগে চাল বিতরণ বন্ধ করে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। সাবেক ও বর্তমান ইউপি সদস্যের সমর্থকদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এলে তারা জানতে পারেন স্থানীয় ধনাঢ্য ব্যক্তিদের নামেও ভিজিএফের কার্ড ইস্যু করা হয়েছে।

তালিকায় থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ধনাঢ্য ব্যক্তি বলেন, আমরা এর আগে কখনো চাল গ্রহণ করিনি। অথচ আগের তালিকায়ও আমাদের নাম রয়েছে। তবে রবিবার পরিষদে বিতরণ করা চাল এসব ব্যক্তির কয়েকজন গ্রহণ করে দরিদ্রদের দিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, আগের ওই তালিকার অন্তত ষাটভাগ সদস্য ধনী পরিবারের। তাদের বেশিরভাগই জানেন না তাদের নামে ভিজিএফ কার্ড রয়েছে। ওই চাল তুলে আত্মসাৎ করেন নারী ইউপি সদস্য রাবেয়া খাতুন। তাদের আরও অভিযোগ, তালিকায় থাকা নারায়ণপুর গ্রামের মৃত বায়োজিদ সর্দারের ছেলে মোমিনুর রহমান ছয় বছর আগে মারা গেছেন। একই গ্রামের মৃত ওহেদ আলীর ছেলে আব্দুল হালিম দুই বছর আগে মারা গেছেন। তালিকায় তাদের নাম থাকায় গ্রামের লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, নতুন মেম্বার তো এসব অসংগতি তুলে ধরেছেন। তবুও পুরনো তালিকায় কেন চাল বিতরণ করা হলো?

গ্রামের তুহিনুর রহমান তুহিন ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি। তিনি চৌগাছা বাজারে ব্যবসা করেন। বিগত ইউপি নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। তার নামেও রয়েছে ভিজিএফের চালের কার্ড। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার নাম যে তালিকায় রয়েছে এবারই প্রথম জানলাম। অথচ এতদিন আমার নামে চাল উঠে যাচ্ছে। তিনি এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।

একই গ্রামের মিজানুর রহমান, বাবর আলী, আমিনুর রহমান, শাহিনুর রহমান সবাই এলাকায় ধনী হিসেবে পরিচিত। তাদের সবার দাবি, তারা নিজেরাও জানেন না তাদের নামে ভিজিএফের এসব চাল উঠিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে নারী ইউপি সদস্য রাবেয়া খাতুন বলেন, তালিকা আমি করিনি। সাবেক মেম্বার করেছেন। আমি শুধু সিøপগুলো তুলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিয়েছি। আমি চাল আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত নই।

এ বিষয়ে ইউপি চেয়াম্যান জয়নাল আবেদীন মুকুল বলেন, মৃত সাবেক ইউপি সদস্যের তালিকা অনুসরণ করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। আমরা সিøপ দিয়েছি। স্লিপ নিয়ে যে এসেছেন, তাকেই চাল দেওয়া হয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877