রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ১২:২১ অপরাহ্ন

কুয়াশায় ট্রেন চালানোর প্রযুক্তি নেই রেলে

কুয়াশায় ট্রেন চালানোর প্রযুক্তি নেই রেলে

স্বদেশ ডেস্ক:

শীতে ঘন কুয়াশায় ট্রেন চালানোর আধুনিক প্রযুক্তি নেই বাংলাদেশ রেলওয়েতে। ফলে ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘন কুয়াশায় ট্রেনের আলো বেশি দূরে যেতে পারে না। কখনো দৃশ্যমানতা ১০-১৫ ফুটে নেমে আসে। এ কারণে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘন কুয়াশা রোধে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হলেও বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। ‘ফগ পাস সিস্টেম’, ট্র্যাক ডিটোনেটর’, ‘লাইম মার্কিং’ ইত্যাদি আধুনিক প্রযুক্তির বদলে রেলে মান্ধাতার আমলের ‘পটকা’ পদ্ধতি চালু আছে। গত এক যুগে রেলে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হলেও কুয়াশায় নিরাপদে ট্রেন চালানোর প্রযুক্তি কেন যুক্ত করা হয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

রেলওয়ে পরিবহণ, মেকানিক্যাল ও অপারেশন দপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলমান রেল ইঞ্জিনগুলোর মধ্যে প্রায় ৭৭ শতাংশ মেয়াদোত্তীর্ণ। এসব ইঞ্জিন চালাতে গিয়ে উনিশ থেকে বিশ হলেই চলন্ত অবস্থায় ‘ইঞ্জিন ফেল’ হচ্ছে। ইঞ্জিনের আলো নির্ধারিত আলোর চেয়ে প্রায় অর্ধেক কম। ফলে কুয়াশার সময় ট্রেন চালানো আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। ‘পটকা’ পদ্ধতিও খুব একটা কাজে আসে না। এ পদ্ধতির বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, যেসব এলাকায় ঘন কুয়াশা দেখা দেয়, সেসব স্থানে চালক লাল-সবুজ সিগন্যাল দেখতে পান না। তাই কুয়াশা এলাকা নির্ধারণের জন্য লাইনের ওপর পটকাগুলো ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে বসিয়ে দেওয়া হয়। যখন ট্রেন ওই পটকার ওপর দিয়ে চলে তখন বিকট শব্দ হয়। এতে চালক-গার্ড বুঝতে পারেন, সামনে ঘন কুয়াশা রয়েছে। তখন ট্রেনের গতি কমিয়ে সাবধানে চালানো হয়। তবে একাধিক ট্রেনের চালক জানান, নামেই এই ‘পটকা’ পদ্ধতি চালু আছে। কোনো কোনো স্থানে লাইনে পটকা বসালেও ফোটে না। শব্দও পাওয়া যায় না।

ফগ পাস সিস্টেম পর্যালোচনা করে জানা যায়, এ ডিভাইসে ট্রেনের গন্তব্য, সামনের দুটি স্টেশনের বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট হয়ে উঠবে স্ক্রিনে। এ ছাড়া আরও নানা তথ্য দেবে এ ডিভাইস। চালকের সুবিধায় থাকবে ভয়েস কমেন্ট্রি-ট্রেন কোন স্টেশনের হোম সিগন্যাল থেকে কতটা দূরে সেই তথ্যও দেবে। চালক সিগন্যাল দেখতে না পেলে সেই তথ্যও ফুটে উঠবে ডিভাইসের এলসিডি স্ক্রিনে। কুয়াশার জন্য দৃশ্যমানতা কম থাকলেও ডিভাইস দেখেই চালক বুঝতে পারবেন সামনে সিগন্যাল লাল না সবুজ। তাছাড়া ডিভাইসের মাধ্যমে লেভেলক্রসিং সংক্রান্ত তথ্যও মিলবে। ‘ট্র্যাক ডিটোনেটর’ ও ‘লাইম মার্কিং’ সিস্টেমের মাধ্যমে ঘন কুয়াশা, অকেজো সিগন্যাল, ভাঙ্গা রেলপথের তথ্য তাৎক্ষণিক কন্ট্রোল রুম, ইঞ্জিন ও গার্ড রুমে থাকা ডিজিটাল স্ক্যানে ভেসে উঠবে। যা দেখে চালক-গার্ড দুর্ঘটনা রোধ করতে পারবেন।

রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী যুগান্তরকে বলেন, শীতে ট্রেন পরিচালনায় ঘন কুয়াশা বড় বাধা। দুই ট্রেনের সংঘর্ষ, লেভেলক্রসিং দুর্ঘটনা-এগুলোর বেশির ভাগই ঘটে ঘন কুয়াশার কারণে। আমাদের অত্যাধুনিক ফগ পাস সিস্টেমে যেতে হবে। এ জন্য আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করছি। তিনি জানান, বাংলাদেশ রেলে শীতে যুগের পর যুগ ধরে ‘পটকা’ ব্যবহার হয়ে আসছে। আমরা নির্ধারিত স্টেশনে পটকাগুলো পৌঁছে দেই। মান্ধাতার আমলের পটকা কতটুকু কার্যকর-জানতে চাইলে সাহাদাত আলী বলেন, রেলে যুগ যুগ ধরে এটা চলে আসছে। আমাদের সময়ের সঙ্গে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির দিকেও যেতে হবে। তিনি বলেন, শীতের এ সময়ে ট্রেনের সময়সূচি পরিবর্তন করতে চাই আমরা। যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সেবার দিক বিবেচনা করে বিশেষ করে রাতের ট্রেনগুলোর সময় পরিবর্তন করা হবে। আমরা প্রতি বছরই ঘন কুয়াশার জন্য বিভিন্ন ট্রেনের সূচিতে পরিবর্তন এনে থাকি। ঘন কুয়াশায় কোনো কোনো সময় দৃশ্যমানতা ৩০০ মিটার থেকে নেমে ২০-৩০ মিটারে আসে। তাতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক যুগান্তরকে বলেন, ঘন কুয়াশা শুধু নয়, স্বাভাবিক সময়েও রেলপথে নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। রেলওয়ে সংশ্লিষ্টদের আগ্রহের জায়গা বড় বড় প্রকল্প। যাত্রী নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিতের দিকে তাদের নজর খুবই কম। আধুনিক সিস্টেমগুলো রেলে যুক্ত হচ্ছে না-কারণ, এগুলো তাদের কাছে খুবই ছোট্ট প্রকল্প।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877