স্বদেশ ডেস্ক:
যুগটা সোশ্যাল মিডিয়ার। ট্রেন্ডিংয়ে পয়লা নম্বরে রয়েছে রিলস, ব্লগিং, ভ্লগিং…। প্রায় সকলেরই দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বেশ কয়েক ঘণ্টা দখল করে রেখেছে মোবাইল ফোনের তাৎক্ষণিক বিনোদন।এই ট্রেন্ডিংই নিপুণ কৌশলে হয়ে উঠেছে ‘যুদ্ধাস্ত্র’।
মিলিটারি ব্লগার, সংক্ষেপে মিলিব্লগার। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তারা জানিয়ে দিচ্ছেন, ঘটনাস্থলের হালহকিকত। সত্যি-মিথ্যার জাল বিছানো রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তথ্যের আসল-নকল বিচার করেও প্রোপাগান্ডার ফাঁদে কখন পা ফেলছে মানুষ, টেরও পাচ্ছেন না। সম্প্রতি ওয়াশিংটনের একটি গবেষক সংস্থা তাদের রিপোর্টে দাবি করেছে, যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে মিলিব্লগারদের প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কিছুটা বিপজ্জনকও। অনেক সময়ই ভুয়া তথ্য পরিবেশন করা হচ্ছে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি করতে। ওই ব্লগারদের বিতর্কিত মন্তব্যে প্রভাবিত হচ্ছেন অনেকেই। এই সবের পিছনে রয়েছে কোনো শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বের মস্তিষ্কপ্রসূত ক্ষুরধার ‘রণকৌশল’।
গত এক দশকে বার বার দেখা গেছে, আমেরিকার ভোটের লড়াই বা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সোশ্যাল মিডিয়া অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে ওঠেছে। বাড়ির বৈঠকখানা থেকে যুদ্ধক্ষেত্র, ব্লগারদের বিচরণ এখন সর্বত্র। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধে অন্যতম মুখপত্র হয়ে উঠেছে মিলিব্লগারদের সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেল। ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৫০০-র বেশি ব্লগ তৈরি হয়েছে। প্রতিটি ব্লগের ছত্রে ছত্রে ফুটে উঠেছে জাতীয়তাবাদী ও উস্কানিমূলক বার্তা, যুদ্ধকে সমর্থন, ধ্বংসাত্মক আদর্শ।
আমেরিকান সংস্থাটির রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য যখন কেউ শুনতে চাইছে না, সেখানে এই ব্লগারদের কথা মানুষ বিশ্বাস করছেন। তাদের কথায় প্রভাবিত হচ্ছেন। দেখা যাচ্ছে, ক্রেমলিনের সরকারি টিভি চ্যানেল যা বলছে, ব্লগাররা বলছেন সম্পূর্ণ তার বিপরীত। মস্কো বলছে, বহু কড়াকড়ি করেও এই মিলিব্লগারদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না তারা। কিন্তু সত্যিই কি তাই? এর রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিন্দা করছে ঠিকই, কিন্তু যুদ্ধকে সমর্থন করছে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রুশ বাহিনীকে আরো আক্রমণাত্মক হওয়ায় উস্কানি দিয়ে চলেছে। এই মিলিব্লগাররা কাজ করছেন টেলিগ্রাম, ভিকে (ইউরোপিয়ান সোশ্যাল নেটওয়ার্ক), রুটিউব কিংবা অন্য কোনো মিডিয়ায়। তারা কোনো সরকারি দফতরের দেয়া খবর ব্যবহার করছেন না। তারা নিজেদের চোখে দেখা দৃশ্য, নিজেদের মতামত স্বাধীন ভাবে বলছেন। তারা রুশ সেনাকর্তাদের নিন্দা করতে ভয় পান না। এমনকি ইউক্রেনের যুদ্ধে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ব্যর্থতা নিয়েও আঙুল তুলেছেন অনেকে। তাদের এক-একজনের পাঁচ, দশ লাখ ফলোয়ার। এমনই এক ব্লগার সরাসরি রুশ সেনা কমান্ডারদের নিন্দা করে বলেছেন, কিভাবে কোন সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া রুশ সেনাজওয়ানদের বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
গোড়ায় পুতিন এই সব ব্লগারকে আড়াল করেছিলেন, তাদের সমর্থন জানিয়েছিলেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতি মাঝেমধ্যে হাতের বাইরে যাচ্ছে। রুশ মিলিটারি ব্লগার সেমন পেগোভের যুদ্ধের সমর্থনে টেলিগ্রাম চ্যানেল রয়েছে। চ্যানেলের নাম ‘ওয়ারগোনজো’। পেগোভ তার চ্যানেলে দাবি করেছেন, তাদের মতো ব্লগারদের একটি হিট-লিস্ট তৈরি করা হয়েছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই মারণ তালিকা বানিয়েছে বলেতাঁর অভিযোগ।
পেগোভের দাবি, রুশ সেনা জেনারেল, মিলিটার কমান্ডারেরা ব্লগারদের তালিকা বানিয়ে মন্ত্রণালয়ের হাতে দিয়েছে। নির্দেশ রয়েছে মৃত্যুদণ্ডের। পেগোভের এই পোস্টটি দেখেছেন ২৮ লাখ মানুষ। পরে অবশ্য পেগোভ কিছুটা পিছু হটেন তার বক্তব্য থেকে। পুতিনও এই সব ব্লগারের যুদ্ধ-সংক্রান্ত খবরের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশংসাসূচক কথা বলেন। কিছু নামজাদা মিলিব্লগারের হয়ে প্রচারও করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। ফলে কোথাও গিয়ে বিষয়টি স্পষ্ট, রুশ সরকারি টিভি চ্যানেলের তুলনায় বয়ান ভিন্ন হলেও যুদ্ধের সমর্থক এই ব্লগারদের মাথায় হাত রয়েছে শীর্ষ নেতৃত্বের। মানুষের চোখে ধুলা দেয়ার এ-ও এক রণকৌশল।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা