স্বদেশ ডেস্ক: রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিচালক ও চেয়ারম্যানদের অপসারণের ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে দেয়ার সুপারিশ করেছে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ)। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী বর্তমানে এ ক্ষমতা অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের হাতে আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালক ও চেয়ারম্যানদের অপসারণ করতে পারে।
ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সংখ্যা কমানো এবং স্বাধীন পরিচালকের সংখ্যা বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দিয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটি ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম দূর করার জন্য একটি ‘ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি কাউন্সিল’ গঠনেরও সুপারিশ করেছে। আইএমএফ এর ফাইনেন্সিয়াল সেক্টর স্ট্যাবিলিটি রিভিউ (এফএসএসআর) মিশন ১২ দিনের সফরে আজ বাংলাদেশে আসছে। এ সফরের আগে ‘ব্যাসেল কোর প্রিন্সিপ্যালস ডিটেইলড অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট’ সুপারিশ বাস্তবায়ন বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। এই সুপারিশের মধ্যেই এসব বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত ছিল। এখন আইএমএফের পক্ষ থেকে এ রিপোর্টের ভিত্তিতে ৮টি বিষয়ে কী অগ্রগতি হয়েছে তা জানতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, আইএমএফের পক্ষ থেকে ব্যাংক কোম্পানি আইনের বিদ্যমান কয়েকটি ধারার সংশোধন চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ৪৬ ধারা। এ ধারায় ‘ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালক, ইত্যাদির অপসারণের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা’ বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘৪৬ (১) বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, কোনো ব্যাংক-কোম্পানির চেয়ারম্যান বা কোনো পরিচালক বা ১ [প্রধান নির্বাহী কর্তৃক], কোনো ব্যাংক-কোম্পানি বা উহার ২[ আমানতকারীদের জন্য ক্ষতিকর] কার্যকলাপ রোধকল্পে বা জনস্বার্থে উক্ত ব্যাংক-কোম্পানির যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, ওই চেয়ারম্যান, পরিচালক বা প্রধান নির্বাহীকে, যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, অপসারণ করা প্রয়োজন, তাহা হইলে বাংলাদেশ ব্যাংক, কারণ লিপিবদ্ধ করিয়া, আদেশের মাধ্যমে, উক্ত চেয়ারম্যান, পরিচালক, প্রধান নির্বাহীকে তাহার পদ হইতে অপসারণ করিতে পারিবে।’ কিন্তু সংশ্লিষ্ট একই ধারায় আবার উল্লেখ করা হয়েছে,‘ (৬) সরকার কর্তৃক মনোনীত বা নিযুক্ত ৪[ কোনো চেয়ারম্যান বা পরিচালক], যে নামেই অভিহিত হউক না কেন, এর ক্ষেত্রে এই ধারার কোনো কিছুই প্রযোজ্য হইবে না’।
এ ধারার বিষয়ে মন্তব্য করতে যেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৬ ধারায় ব্যাংকের পরিচালক ও চেয়ারম্যানদের অপসারণ করার ক্ষমতা বাংলাদেশে ব্যাংকের হাতে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এটি শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারি ব্যাংকের ওপর প্রয়োগ করতে পারে, সরকারি ব্যাংকের ওপর প্রয়োগ করা যায় না। কারণ সরকারি ব্যাংকের পরিচালক ও চেয়ারম্যানদের নিয়োগ দিয়ে থাকে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ নিয়োগ দিয়ে থাকে। সরকার নিয়োগ দেয়ায় ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৬ ধারা মতে সরকারি ব্যাংকের পরিচালক ও চেয়ারম্যানদের অপসারণের ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে নেই। তাই সোনালী ব্যাংকের ‘হল-মার্ক’ কেলেঙ্কারি বা বেসিক ব্যাংকের পাহাড়সম দুর্নীতি হওয়ার পরও এই ব্যাংকের পরিচালক ও চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।
আইএমএফের পক্ষ থেকে আরো যে সব বিষয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে তার মধ্যে আছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্ডিন্যান্স ও ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধন। ব্যাংকের অডিট কমিটি ও রিস্ক কমিটিতে অধিকহারে স্বতন্ত্র বা স্বাধীন সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা। সরকারি পে-স্কেল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারভিশন স্টাফদের সরিয়ে আনা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ম্যান্ডেটের সংশোধনী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা গত বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদককে বলেছেন, এ ধরনের মিশন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আসছে। তাদের সাথে ব্যাংকিং খাতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। এবার মিশনের মূল ফোকাস থাকবে ব্যাংক কোম্পানি আইন ও বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডিনেন্স সংশোধনীর বিষয়টি। এর আগেও আইএমএফের পক্ষ থেকে এ সংশোধনী চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। তবে এবার তারা যে নতুন করে ‘ফাইনেন্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি কাউন্সিল’ গঠনের সুপারিশ করেছে সে বিষয়ে এবার অগ্রগতি হতে পারে।